1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবাজার ট্রা‌জে‌ডি: আশ্বাসে কাটছে দিন, মিলছে না সহায়তা

নাগ‌রিক খবর ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩
  • ১১৩ বার পঠিত

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেছে। ঘটনার পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন। সরকারি-বেসরকারি নানা রকম সহায়তার আশ্বাস পাওয়া যায়। তবে সেই আর্থিক সহায়তা এখনও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছায়নি। তারা বলছেন, মার্কেট পুড়ে তাদের পথে বসে যাওয়ার দুই মাস হয়ে গেলও ঢাকা জেলা প্রশাসন ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কারও আর্থিক সহায়তা তারা পাননি।

ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে দোকান কর্মচারীদের দেওয়া হয়েছে, সেটিও থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এছাড়া বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতিতে লোকজনের দেওয়া আর্থিক সহায়তার বিষয়েও সুনির্দিষ্টিভাবে কিছু বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, তাদের এই টাকাগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে কবে কখন দেবে সেব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারও দেখাও মিলছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। ফলে সহায়তার আশ্বাসেই কাটছে তাদের দিন।

মালিক সমিতি সূত্র বলছে, আর্থিক সহায়তার বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সহায়তার অর্থ বঙ্গবাজারের কোন ধরনের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মেয়র এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

যে যেভাবে পেরেছেন অস্থায়ীভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা
সোমবার (২৯ মে) বিকালে সরেজমিনে বঙ্গবাজারে গেলে দেখা যায়, এলাকার কাঠের মার্কেট বাদে আশেপাশের সব মার্কেটই পুরোপুরিভাবে চালু হয়েছে। এছাড়া কাঠের মার্কেটে অস্থায়ীভাবে চৌকি বসিয়ে ওপরে ছাউনি দিয়ে ব্যবসা করতে দেখা গেছে। সেখানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে আর্থিক সহায়তার না পাওয়ার বিষয়টি অনেকেই জানান।

বঙ্গবাজার কাঠের মার্কেটের নিচ তলার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের মালিক মো. আলামিন বলেন, আমার ও আমার দুই মামার মোট তিনটি দোকান ছিল। দোকানগুলো পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। সব কিছু হারিয়ে এখন কোনোরকম নিঃশ্বাস নিচ্ছি। চৌকি নিয়ে বসেছি ঠিকই। হাতে তো চালান নাই, মাল কিনবো কীভাবে? বিকিকিনিও নেই। ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে ২৫ হাজার টাকা পেয়েছি। এছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোনও সহায়তা পাইনি। অনেক দোকান কর্মচারী আছেন যারা ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সেটাও পাননি।

ওই মার্কেটেরই মায়া গার্মেন্টসের আরেক কর্মচারী মো. ইউসুফ বলেন, গত চার বছর ধরে এখানে কাজ করছিলাম। আগুন লাগার পর থেকে কষ্টে দিন কাটছে। এরপরও মালিককে ছেড়ে যাইনি। আগুন লাগার দুই দিন পর আমাদের নাম-ঠিকানা লিখিয়ে নিয়েছিল ঢাকা জেলা প্রশাসন। কোথায়, আমাকে তো কোনও টাকাই দিলো না! এনেক্স টাওয়ার মার্কেটের ওপরের তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেখা গেছে যাদের দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তাদের কর্মচারীরাও টাকা পেয়েছে। অথচ আমরা পাইনি। কেন আমাদের দেয়নি জানি না।

বঙ্গবাজারে অস্থায়ীভাবে ছাউনি ও চৌকি পেতে পণ্য বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা
একই কথা বলেন বঙ্গবাজার কাঠের মার্কেটের সাবিয়া কালেকশনের কর্মচারী মো. সজিব। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা নাম-ঠিকানা দিয়েছিলাম, জন্ম নিবন্ধন জমা দিয়েছিলাম। আমাকে কোনও টাকা দেয়নি। আমার পরিচিত অনেকে পেয়েছে।

মার্কেটের পলক কালেকশনের মালিক তোয়া ফারুকি বলেন, আমাদের জন্য যে আর্থিক সাহায্য এসেছে সেগুলা যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন অনেককে দেওয়া হয়নি। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যে টাকা জমা হয়েছে সেগুলোও আমরা এখনও পাইনি। কত টাকা জমা হয়েছে, টাকা আমাদের কখন দেবে কিছুই আমরা জানি না। টাকাগুলো তো আমাদের দেওয়ার কথা। তাহলে দেরি করছে কেন? অগ্নিকাণ্ডের পর সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা হলেও এখন তাদের আর দেখা যায় না। মার্কেটেও খুব একটা আসেন না।

হিমু গার্মেন্টসের মালিক শাহারিয়ার সুমন বলেন, আমাদের মার্কেট কমিটির ফান্ডে কিছু টাকা জমা হয়েছে শুনেছি। কিন্ত এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলেনি। কত টাকা উঠছে, কখন কী করবে কোনও কিছুই জানায়নি। অগ্নিকাণ্ডের পর ঈদের আগে আমাদের অস্থায়ীভাবে চৌকি নিয়ে বসতে দিয়েছে। পরে আমরা নিজেদের উদ্যোগে দোকানে ছাউনী তুলেছি। আগের মতো তো আর চালান নাই। সংসার তো চালাতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের পর মেয়র এসে বলে গিয়েছিলেন তোমরা দোকানদারি করো, পরে দেখি কী করা যায়। কেউ আর তো কোনও খোঁজ নেয়নি। জেলা প্রশাসনের টাকা আমার দোকানের স্টাফদের দেওয়া হয়নি। এছাড়াও আরও সহায়তা এসেছে। অনেকে পেয়েছে, অনেকে পায়নি।

বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া কাঠের মার্কেটে এখন অস্থায়ীভাবে ছাউনি টানিয়ে ব্যবসা চলছে
এমএন গার্মেন্টসের মালিক মাসুদ রানা বলেন, আমার দুইটা দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে আমার একজন কর্মচারীকে টাকা দিয়েছে, আরেকজনকে দেয়নি। আমরা শুনেছি মালিক সমিতির ফান্ডে অনেক টাকা জমা হয়েছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব ভাড়াটিয়া দোকান মালিকরা আর্থিক সহায়তা পাওয়ার কথা এবং সেটা উল্লেখ করে দিয়েছে। তবে এখনও কিছু দেয়নি। এ ব্যাপারে কোনও আলাপ-আলোচনাও নেই। এদিকে বিসমিল্লাহ লেডিস কর্নারের কর্মচারী সাহাদাত বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমদের দোকানে দুইজন কর্মচারী ছিল। তারা দুইজনই ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে টাকা পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হুদা বলেন, আর্থিক সহায়তার বিষয়টি মেয়র এবং সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ ছাড়া এখনই কিছু করা যাচ্ছে না। উনারা যে নির্দেশ দেবেন সে নির্দেশই আমাদের কাজ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যে ফান্ড করা হয়েছে সেখানে ছয় কোটি টাকা ওপরে জমা হয়েছে। আমরা আশা করি করছি সরকারি তহবিল থেকে আরও কিছু অর্থ জমা হবে। পরবর্তীতে এই টাকাগুলো ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে ব্যয় হবে না ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দেওয়া হবে এসব তারাই সিদ্ধান্ত নিবেন। এখানে আমাদের কোনও হাত নেই। আমরা চাইলেও টাকাগুলো অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তোলন করতে পারবো না।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে যে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে সেখানে তারা কিছু ভুল করেছেন। তারা সড়কে দাঁড়িয়ে ঢালাওভাবে নাম লিখে নিয়েছেন। ফলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে ব্যবসায়ী তাদের আর্থিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তালিকার বিষয়টি আমাদের সঙ্গে নিয়ে করলে আর সেই ভুলটা হয়তো হতো না। ফলে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কর্মচারীই তাদের আর্থিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান তারা। পরে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু এরমধ্যেই অন্তত পাঁচ হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হন অন্তত ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী। এদিকে কমিটির তদন্তে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস বলছে, এই বঙ্গবাজার ও তার আশপাশের মার্কেটগুলোতে এই অগ্নিকাণ্ডটির সূত্রপাত মশার কয়েল কিংবা বৈদ্যুতিক গোলোযোগ থেকে। যদিও গত ১১ এপ্রিল প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে সিটি করপোরেশনে গঠিত কমিটি ‘বৈদ্যুতিক গোলযোগ’কে কারণ হিসেবে নাকচ করে দিয়েছে। তারা বলছে, সিগারেট বা কয়েল থেকেই আগুন লেগে থাকতে পারে।

বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অর্থ সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, সহায়তার যে অর্থ জমা হয়েছে সেটি একটি যৌথ অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। আপাতত আমাদের রাজস্ব বিভাগের এর সঙ্গে কোনও সম্পৃক্ততা নেই। এ বিষয়ে যে কমিটি গঠন করা রয়েছে বিষয়টি তারাই দেখবেন। সুত্র: বি‌ট্রি

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com