উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার চালু করা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই মাঠ পর্যায়ের অপারেশনাল কাজে এটি ব্যবহার করছেন না। একারণে পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রত্যেকই ইউনিটের মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরতদের বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করলে মাঠ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা যায়। এছাড়া বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু থাকাকালীন নাগরিকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যবহারও ম্যাজিকের মত পাল্টে যায়। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা যেমন বেআইনি কিছু করতে পারেন না, তেমনি সাধারণ নাগরিকও অহেতুক কোনও অভিযোগ করতে পারেন না। একারণেই সারাদেশের সকল ইউনিটকে বরাদ্দকৃত সকল বডি ওর্ন ক্যামেরা যথাযথভাবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশের ইউনিটগুলোতে পাঠানো সদর দফতরের ডিআইজি (লজিস্টিক) মো. তওফিক মাহবুব চৌধুরীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, দায়িত্বপালন কালে পুলিশের নিরাপত্তা বিধান, দায়িত্ব-কর্মে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও হ্যান্ড ফ্রি স্মার্ট পুলিশ তৈরির লক্ষ্যে বডি ওর্ন ক্যামেরা ও ট্যাকটিক্যাল বেল্ট ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, অনেক ইউনিট দায়িত্বপালন কালে বডি ওর্ন ক্যামেরা ও ট্যাকটিক্যাল বেল্ট ব্যবহারে শিথিলতা দেখাচ্ছে। বিষয়টি পুলিশের আইজিপির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বডি ওর্ন ক্যামেরা ও ট্যাকটিক্যাল বেল্ট ব্যবহারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়কে প্রায়ই যানবাহন চালক, পথচারী ও ট্রাফিক পুলিশের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। পথচারী ও যানবাহন চালকেরা আইন অমান্য করে থাকনে। আবার কখনও পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধেও খারাপ আচরণের অভিযোগ ওঠে। এসব ক্ষেত্রে একে অপরের দিকে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করেন। অনেক সময় রাস্তায় দুর্ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটন করা যায় না। তাই সবগুলো বিষয় মনিটরিংয়ের জন্য ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার রাস্তায় ১৫টি বডি ওর্ন ক্যামেরা দিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পরে মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ ও এপিবিএনসহ বিভিন্ন ইউনিটে বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান জানান, বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু থাকলে দায়িত্বরতরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করছেন কিনা তা নজরদারি করা যায়। এতে নাগরিকদেরও যথাযথ সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আমরা সবাই যাতে বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করে সেই ব্যবস্থা এনশিউর করার চেষ্টা করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, বডি ওর্ন ক্যামেরা থাকলে একজন কর্মকর্তাকে সব সময় আইনের মধ্যে চলতে হয়। অভ্যস্ত না হওয়ায় এটা খুবই কঠিন। অবৈধ সুযোগ নেওয়ার ইচ্ছা থাকলে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। অনেক কর্মকর্তা এটাকে বাড়তি ঝামেলা হিসেবেও দেখেন। এজন্য পুলিশের ইউনিটগুলোতে বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহারে অনীহা দেখা যায়।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, প্রথম দিকে ট্রাফিক ডিভিশনের সদস্যদের জন্য বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু করা হলেও বর্তমানে ক্রাইম ডিভিশনেও বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে থানা পুলিশের টহল পার্টি ও চেকপোস্টগুলোতে বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু নিজের ক্যামেরায় নিজের অনৈতিক কর্মকাণ্ড ধরা পড়ার ভয়ে অনেকেই ক্যামেরা বন্ধ করে রাখেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু থাকলে সংশ্লিষ্ট টিম বা পুলিশ কর্মকর্তা কোথায়, কী দায়িত্ব পালন করছেন- সেটা কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি করা যায়। ফলে তাদের কাজের স্বচ্ছতার পাশাপাশি জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা যায়। আর ক্যামেরা চালু থাকলেও কথিত ভিআইপি বা রাজনৈতিক সুবিধাভোগীরাও পুলিশের সঙ্গে নমনীয় আচরণ করে থাকে। সবদিক দিয়েই এই ক্যামেরা ব্যবহারের সুফল রয়েছে, এজন্য সবাইকে এটি ব্যবহার করতে বাধ্য করা হচ্ছে।