রাজধানীর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে রেমন্ড টেইলার্সের সামনে ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ। গ্রেফতারকৃতদের নাম- মোঃ মনিরুজ্জামান সুমন ও মোঃ ইমন।গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১) কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার আমড়াতলী এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১) দুপুর ১২:০০টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গত ১৫ মে, ২০২১ (শনিবার) সন্ধ্যা অনুমান ০৬.৩০ টায় খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে রেমন্ড টেইলার্সের সামনে রাস্তায় মনিরুজ্জামান সুমন ও তার সহযোগীরা ভিকটিম সাইফুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে সদলবলে মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ সাইফুল নিজেই একটি সিএনজিতে উঠে ঢাকা মেডিকেলে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তার চিকিৎসা করেন। ঘটনার সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজন ঢাকা মেডিকেলে যায়। এই ঘটনায় গত ১৬ মে, ২০২১ তারিখ ভিকটিমের স্ত্রী সবুজবাগ থানায় নয় জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদান করেন। ভিকটিমের স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সবুজবাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়। এই মামলা তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ।
গ্রেফতার সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মামলা তদন্তকালে গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১) কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার আমড়াতলী এলাকা হতে সুমন ও ইমনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যমতে রাজধানীর খিলগাঁও থানার ত্রিমোহনী এলাকা হতে ০২ টি পিস্তল ও ০৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ভিকটিম সাইফুল ইসলাম, কচি, রিপন ও সুমন ছোটবেলার বন্ধু ছিল। তারা একসাথেই রাজনীতি শুরু করে। সাইফুল দলীয় পর্যায়ে ২ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পায়। রিপন ও সুমন দলীয় পর্যায়ে পদ-পদবী না পাওয়ায় তাদের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তারা পৃথক পৃথক গ্রুপ তৈরী করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতে থাকে। রিপন গ্রুপের সদস্য বাশারকে হত্যার ঘটনায় রুজুকৃত মামলার ১ নম্বর অভিযুক্ত ছিল ভিকটিম সাইফুল। ভিকটিম সাইফুল এই মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে সুমন গ্রুপ এলাকায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতে থাকে। ভিকটিম সাইফুল জেল হতে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সুমন গ্রুপ ও রিপন গ্রুপ এলাকায় তাদের আধিপত্য বিস্তার হ্রাস পাওয়ার ভয়ে উভয় গ্রুপ একত্রিত হয়ে ভিকটিম সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনায় দিন রিপন, কচি, সুমন ও ইমনসহ ১২/১৩ জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় রিপন সাইফুলকে ২ রাউন্ড গুলি করে এবং গ্রেফতারকৃত সুমন ১ রাউন্ড গুলি করে সবাই পালিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, এই মমামলায় এজাহারনামীয় মোট ০৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে ইতোপূর্বে মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে কচি, রাসেল তালুকদার ওরফে চাপাতি রাসেল, মোঃ উজ্জ্বল তালুকদার ও মোঃ আমির হোসেনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পলাতক রিপনসহ অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
ঢাকা মহানগরের যেকোনো এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কোনো গুলির ঘটনা ঘটলে কাউকে ছাড় দেযা হবে না। এরূপ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান।
গ্রেফতারকৃতদের হেফাজত হতে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় অস্ত্র আইনে পৃথক একটি মামলা রুজু হয়েছে।