সংসদে পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুমসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলের এমপিরা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
তারা বলেন, কনস্টেবল থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও অপরাধে জড়িয়েছেন। এ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ—যারা অপরাধ করছেন তাদের শাস্তি হচ্ছে না।
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, পুলিশে কেউ খারাপ নেই, এটা কেউ হলফ করে বলছি না। কিন্তু দেখতে হবে, যারা অন্যায় করছে তাদের সরকার বরদাস্ত করছে কিনা। অন্যায় যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু পুলিশের মধ্যে থাকা দুর্নীতিবাজদের ‘অণুবীক্ষণ যন্ত্র’ দিয়ে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।
সম্পূরক বাজেটে জননিরাপত্তা বিভাগের ১৭৮ কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দাবি করা হয়। এই বরাদ্দ ছাঁটাই করতে ১০ জন সদস্য দাবি করেন।
বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, এই সরকারের আমলে পুলিশ পরিণত হয়েছে দলীয় বাহিনীতে। পুলিশের কাছে নতুন সমস্যায় পড়তে হয় কিনা এই আশঙ্কায় বিপদে পড়লেও মানুষ পুলিশের কাছে যেতে চায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুম তো করেই, হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনও নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিকার চাইতে গেলেও নেমে আসে নির্যাতন।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আজ পুলিশের কেউ অন্যায় করলে মানবাধিকার কমিশন চুপ থাকে। কোনও পুলিশ অন্যায় করলে সব পুলিশ একত্রিত হয়ে তাকে সাপোর্ট করে। এতে জুডিশিয়ারি অসহায় হয়ে যায়। পুলিশকে বুঝতে হবে— পি ফর পেলাইট। তাদের দায়বদ্ধতা প্রয়োজন। দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা গেলে বহির্বিশ্ব থেকে নিষেধাজ্ঞা আসতো না।
তিনি সংসদে মানবাধিকার বিষয়ক সর্বদলীয় স্পেশাল কমিটি করার প্রস্তাব করেন।
তার মতে, এই কমিটি জনগণের অভিযোগ তদন্ত করবে এবং পুলিশের দায়বদ্ধতা বাড়াবে।
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, পুলিশ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী ও সাক্ষী হয়। এতে প্রমাণ হয় দেশের বিচার ব্যবস্থা কতটা নাজুক। সরকারি দল চায় পুলিশ তাদের কথামতো চলবে। এই ধারা থেকে বের না হতে পারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে যেতে পারবে না।
তিনি বলেন, র্যাবের ডিজির সফর উপলক্ষে নিরাপত্তার নামে সব সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেট পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখান থেকে কোনও শিক্ষার্থীকে বের হতে দেওয়া হয়নি। আমি পরিচয় দিয়ে চারটি বেরিকেড পার হই।
বিএনপির সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সাবেক হলেই বলে। বর্তমান থাকতে কেন বলে না? যেমন দেখলাম সাবেক সিইসি কেএম নুরুল হুদাকে, যিনি নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোর্টে বার বার গিয়েছি। কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তি পাইনি। সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা খালেজা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।’
জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু ভালো কাজ করছে। কিছু খারাপ কাজও করছে। খারাপগুলোকে শোধরানো দরকার।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, দু-চারজন অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য গোটা বাহিনীর দুর্নাম হোক তা আমরা চাই না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে সেটা নেহায়েত রাজনৈতিক বক্তব্য। পুলিশের কাজ দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। বর্তমান সরকারের অধীনে পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আপনারা জানেন, অনিয়মের কারণে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা চাকরিও হারাচ্ছে। অনেকে বাড়বাড়ির কারণে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে, শাস্তি পেয়েছে।’
মন্ত্রী আরও দাবি করেন, হাজার হাজার পুলিশ নিয়োগ হচ্ছে। যার একটিতেও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ নেই। বিট্রি