1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কু‌মিল্লায় ডি‌বির পৃথক অ‌ভিযা‌নে ইয়াবা ফে‌ন্সি‌ডিল আটক ৩ আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত – এম সাখাওয়াত হোসেন দে‌শের প্রয়োজ‌নে বিএনসিসির সদস্যরা বিশাল শক্তি হিসেবে কাজ কর‌বে – সেনাপ্রধান কু‌মিল্লায় সাংবা‌দিক‌দের সা‌থে পু‌লিশ সুপা‌রের মত‌বি‌নিময় নারায়নগন্জ মহানগর বিএনপির র‍্যালিতে কৃষক দলের অংশগ্রহন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে নারায়ণগ‌ঞ্জে বিএন‌পির র‍্যালি গোপালগ‌ঞ্জে দিনমুজুর‌কে হত্যা মামলায় গ্রেফতার, নবজাতক দুই বোন নিয়ে দিশেহারা ছোট ভাই শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ কর‌তে হ‌বে, না করলে প্রশাসক নিয়োগ হ‌বে- সাখাওয়াত বাংলাদেশ থেকে জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে নিবে আজারবাইজানে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

কোরান তেলাওয়াতের ‘অপূর্ব এক কণ্ঠ’ নূরীন মোহামেদ সিদ্দিক

নাগ‌রিক খবর ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৪৫৩ বার পঠিত
ক্বারী নূরীন মোহামেদ সিদ্দিক

মুসলিম বিশ্বের একেক অঞ্চলে একেক স্টাইলে কোরান তেলাওয়াত করা হয়। তার মধ্যে আফ্রিকান স্টাইল অনন্য। একসময় মধ্যপ্রাচ্যের স্টাইল প্রাধান্য বিস্তার করলেও সোশাল মিডিয়ার কারণে বর্তমানে আফ্রিকার স্টাইলও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নূরীন মোহামেদ সিদ্দিক যখন কোরান তেলাওয়াত করতেন, সারা বিশ্বের মানুষ তার কণ্ঠে খুঁজে পেত বিষাদ, হৃদয় স্পর্শ করা আবেগ এবং ব্লু সঙ্গীতের অপূর্ব মূর্ছনা। তার অনন্য কণ্ঠস্বর তাকে মুসলিম বিশ্বের জনপ্রিয় সব ক্বারিদের একজনে পরিণত করেছিল।

ফলে গত বছরের নভেম্বর মাসে সুদানে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় ৩৮ বছর বয়সী নূরীন মোহামেদ সিদ্দিক যখন নিহত হন তখন পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সেই শোক ছড়িয়ে পড়েছিল। টেক্সাসের ইমাম ওমর সোলেইমান টুইট করেন: “বিশ্ব আমাদের সময়ের সবচেয়ে সুন্দর কণ্ঠগুলোর একটিকে হারালো।”

বিভিন্ন ধর্মের বিষয়ে পড়ান এরকম একজন সুদানি-আমেরিকান শিক্ষক হিন্ড মাক্কি বলেন, তার গুণ ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন। তিনি বলেন, “লোকজন বলে যে তার কণ্ঠে আফ্রিকার আসল পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা আসলে কী তা তারা পরিষ্কার করে বলতে পারে না এবং তারা সেটা পছন্দ করে।” তার কোরান তেলাওয়াতকে ব্লুজ সঙ্গীতের সঙ্গে তুলনা করা হয় এবং সেটা কোন আকস্মিক বিষয় নয়।

ইতিহাসবিদ সিলভেইন দিওফের মতে পশ্চিম আফ্রিকার দাস মুসলিমদের প্রার্থনা এবং তেলাওয়াতের সঙ্গে সাহেল অঞ্চল থেকে শুরু করে সুদান এবং সোমালিয়ার মুসলিমদের তেলাওয়াতের মিল রয়েছে। সেখান থেকেই হয়তো বিশেষ এই আফ্রিকান আমেরিকান সঙ্গীতের জন্ম হয়েছে যা পরে ব্লুজ সঙ্গীতে রূপ নিয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে কোরান তেলাওয়াত করা হয় গান গাওয়ার মতো করে। বলা হয় ইসলামের নবী এভাবে কোরান পাঠ করার জন্য উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছিলেন, “মানুষের কণ্ঠে কোরানের সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।”

একেক স্থানে একেক রকম: সাধারণত রমজান মাসে প্রচুর মানুষ যখন তারাবির নামাজ পড়তে জড়ো হয় তখন সবখানেই কোরানের তেলাওয়াত বেশি শুনতে পাওয়া যায়। এসময় কোরান তেলাওয়াতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতাও আয়োজন করা হয়। সেখানে দেখা যায় যে প্রতিযোগীরা নানা কায়দায় ও ঢং-এ কোরান তেলাওয়াত করছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও এই বিশাল মুসলিম বিশ্বের ভৌগলিক অবস্থান, সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা অনুসারে এই তেলাওয়াতের ভিন্নতা থাকে। সেই ভিন্নতা স্বরে, সুরে ও ধরনে। মি. সিদ্দিগের তেলাওয়াত এবং তার অকাল মৃত্যুর ফলে ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান স্টাইলে কোরান তেলাওয়াতের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি গত শতাব্দীতে নব্বই-এর দশকে রাজধানী খার্তুমের পশ্চিমে আল-ফারাজাব গ্রামের একটি মাদ্রাসায় কোরান তেলাওয়াত শুরু করেন।

পরে যখন খার্তুমে চলে আসেন, শহরের কয়েকটি বড় বড় মসজিদের নামাজে তিনি ইমামতি করেছেন এবং সেসময় তিনি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ইউটিউবে তার একটি ভিডিও আপলোড করার পর তার নাম দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সাত নোটের স্কেল, যা হেপ্টাটোনিক নামে পরিচিত, সেটা জনপ্রিয় হলেও, মি. সিদ্দিকের তেলাওয়াতে ছিল পাঁচ নোটের স্কেল যাকে বলা হয় পেন্টাটোনিক। সাহেল এবং হর্ন অফ আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রচলিত ছিল এই পেন্টাটোনিক স্কেল। “মরুভূমিতে এ ধরনের সুরেলা পরিবেশেই আমি বেড়ে উঠেছি। এটা সুদানের ডুবেইত লোক সঙ্গীতের মতো,” বলেন আল-জাইন মোহাম্মদ আহমাদ। তিনিও সুদানের আরেকজন জনপ্রিয় ক্বারি।

“লেভান্ত অঞ্চলের (লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান) তেলাওয়াতকারীরা তাদের জানা সুরে কোরান তেলাওয়াত করে, যেমন মিশর, হিজাজ, উত্তর আফ্রিকা এবং অন্যান্য স্থানের তেলাওয়াতকারীরাও করে থাকেন।”

কানাডায় আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিষয়ক অধ্যাপক মাইকেল ফ্রিশকফের মতো আরো অনেক বিশেষজ্ঞ এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, “মিশরে কিন্তু পেন্টাটনিক কিম্বা ছয় নোটের হেক্সাটনিক সুরে কোরান তেলাওয়াত খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু সেটা আপনি পাবেন নিজের, সুদান, গানা এবং গাম্বিয়া- এই দেশগুলোতে।”

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ইসলামিক সেন্টার অলিম্পিয়ার ইমাম ওমর জাব্বি সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তার জন্ম সিয়েরা লিওনে। সেনেগাল এবং গাম্বিয়াতে শিক্ষকদের কাছে তিনি কোরানের তেলাওয়াত শিখেছেন। তিনি বলেন, “সেখানে আমি বিভিন্ন স্টাইলে কোরান তেলাওয়াত করতে শিখেছি।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের স্টাইলে কোরানের তেলাওয়াত আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশেষ করে শহুরে এলাকায় যেখানে লোকজন ভিনাইল রেকর্ড, শর্টওয়েভ রেডিও, অডিও ক্যাসেট টেপ এবং সিডিতে কোরানের তেলাওয়াত শুনে থাকে। এগুলোর বেশিরভাগই উৎপাদন করা হয় মিশর ও সৌদি আরবে।

মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ও সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা যখন নিজেদের দেশে ফিরে যান তাদের কারণে মধ্যপ্রাচ্য স্টাইলে কোরানের তেলাওয়াত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার সঙ্গে রয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলো অর্থ সহায়তায় গড়ে ওঠা বেশ কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রভাব।

কিন্তু ইন্টারনেট ও সোশাল মিডিয়ার কারণে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী স্টাইলও এখন মানুষের নজরে পড়ছে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে। “সোশাল মিডিয়া এবং আধুনিক প্রযুক্তির যে একটা গণতান্ত্রিক শক্তি আছে তার ফলে এসব স্টাইল এখনও বেঁচে আছে,” বলেন প্রফেসর এমবে লু যিনি ইসলামের সমাজতত্ব বিষয়ে গবেষণা করেন।

খার্তুমে একটি মিডিয়া কোম্পানি নাকা স্টুডিওর এলেবিদ এলসহাইফা বলেন, সোশাল মিডিয়াতে খরচ কম, সেখানে আইনি বিধি-নিষেধও কম। “একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের যা কিছু প্রয়োজন সোশাল মিডিয়ার সেসবের প্রয়োজন নেই।”

বৈশ্বিক আবেদন: আহমেদ আবদেলগাদের ২০১৭ সাল থেকে তার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ইমাম জাব্বির তেলাওয়াত ভিডিওতে রেকর্ড করছেন। তিনি বলেন, “সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে আফ্রিকান স্টাইলে করা একটি দোয়া যা ইতোমধ্যে কুড়ি লাখের বেশি দেখা হয়েছে। যারা এসব দেখেন তাদের বেশিরভাগই ফ্রান্সের, তার পরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।” এসব অনলাইন রেকর্ডের কারণে কোরান পাঠ করার বিভিন্ন ধরনও সামনে চলে এসেছে। তার মধ্যে রয়েছে কোন শব্দ ঠিক কীভাবে উচ্চারণ করা হবে। এবিষয়ে রয়েছে সাতটি ধারা। এসব এসব ধারার উচ্চারণে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। এসবের মধ্যে আজকের দিনে সবচেয়ে পরিচিত ধারাটি হচ্ছে হাফস। অটোমান তুর্কীদের শাসনামলে এই ধারাটি অনুমোদিত হয়েছিল। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেসব কোরান পড়ানো হতো সেগুলো ছিল কায়রো ও মক্কায় প্রকাশিত।

তবে এর বাইরেও মুসলিম বিশ্বের কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশের গ্রামীণ এলাকায় কোরান পাঠের বিষয়ে আরো কিছু ধারা প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সুদানের আল-দুরি। কোরান তেলাওয়াতের সময় মি. সিদ্দিক বেশিরভাগ সময় এই ধারা অনুসরণ করতেন। তার তেলাওয়াতের স্টাইলের মধ্যে ছিল বিশ্বজনীন এবং একই সাথে বিভিন্ন আঞ্চলিক ঐতিহ্যের বিষয়।

কোরানের বিষয়বস্তু এবং অক্ষরগুলোর ব্যাপারে সবাই একমত, তবে এটি ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলের তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে “স্থানীয় কণ্ঠ ও বৈশ্বিক ভাষা একটি সার্বজনীন বার্তা তুলে ধরেছে,” বলেন অধ্যাপক ফ্রিশকফ। সূত্র:বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com