ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬৯ এর গ্ণ অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে মুক্ত , জাতির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কে , তাঁর সংবর্ধনা সভায় বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।সেই ঐতিহাসীক ঘোষণাটি এসেছিল ছাত্রনেতা তোফায়েল আহাম্মেদের কণ্ঠ থেকে ।
বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত মানুষদের অন্যতম ছিলেন তোফায়েল আহাম্মেদ । সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন তিনি ।আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসীর মঞ্চ থেকে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুক্তকরে আনার পেছনে অসামান্য অবদান ছিল এই কিংবদন্তীর ।
একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামে পটভূমি সৃষ্টি এবং মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান ছিল এ নেতার । বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি ।বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর , তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার পাশে থেকে , ভূমিকা রেখে গেছেন তিনি , কয়েক বার মন্ত্রী হিসেবেও দায়ীত্ব পালন করেছেন ।
তবে মন্ত্রীত্বের চাইতে , তোফায়েল আহাম্মেদের ব্যক্তিত্বকেই অনেক বড় মনে হয়েছে । তোফায়েল আহাম্মেদ নিয়তির সন্তান , এক খন্ড জীবন্ত ইতিহাস , বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের ছায়াসঙ্গী ।
২০০৫ সালে কুমিল্লা টাউন মাঠে এক বিশাল ছাত্র সমাবেশে , আমি বক্তব্য রাখার আহবান জানিয়ে , এই কিংবদন্তীর নাম ঘোষণা করেছিলাম ।
সে সমাবেশে বর্তমান মাননীয় অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল সাহেব এবং ছাত্রলীগের সে সময়ের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু ( বর্তমানে নাঃগঞ্জের এমপি ) সহ আরো কয়েকজন বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ।
তিনি বক্তব্য রাখতে উঠেই বলেছিলেন , আমি আজ দ্রব্যমূল্য , সরকারের দুর্নীতি , অনিয়ম , অত্যাচারের কথা বলতে এসেছিলাম , কিন্তু ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমাকে ৬৯ সালে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে –
তারপর ঘন্টা খানেক চমৎকার ভাবে অনেক ইতিহাস বলে গেলেন তিনি , বক্তব্যের মাঝখানে বৃষ্টি এলো , হাজার হাজার মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর বক্তব্য শুনলেন ।
আমার ছাত্র রাজনীতির সময়ে , বক্তব্য রাখার আহবান জানিয়ে , জননেতা তোফায়েল আহাম্মেদের নাম ঘোষণা করা একটি স্মরণীয় ঘটনা ।
এ সমাবেশের পর তোফায়েল আহাম্মেদের সাথে আমার আর দেখা হয়নি । ৮ বছর পর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি নেত্রীর সাথে নিউইয়র্ক যান , আমিও নিউ ইয়র্কে গিয়ে ছিলাম সে সময়ে ।
নেত্রী যে হোটেলে ছিলেন , সে হোটেলের লবিতে হঠাৎ তোফায়েল আহাম্মেদকে দেখি । ভাবলাম আমাকে চিনবেন না , তাই কাছে যাইনি , উনি আমাকে হাত ইশারায় ডাকলেন , কাছে যাওয়ার পর বললেন , তুমি কুমিল্লার মিঠু না ?
আমি খুবই অবাক হলাম , বললাম জি । তিনি আমাকে বললেন , তোমার বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করা ঠিক হয়নি । আমি বললাম লিডার আমিতো বিদ্রোহী প্রার্থী হইনি , স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম !
যে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নেই , সে নির্বাচনে অংশ নেয়া কোন প্রার্থীকে বিদ্রোহী বলা , তার প্রতি অবিচার । তিনি হেসে বললেন , কথায় যুক্তি আছে !
( সে সময়ে স্থানীয় সরকারের কোন শাখার নির্বাচনেই দলীয় মনোনয়ন বা দলীয় মার্কা ছিলোনা , তবে দল কোন প্রার্থীর প্রতি সমর্থন ঘোষণা করতো , কোন কোন জায়গায় , বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ এবং ছোটখাটো পৌর সভায় অনেক সময় কাউকে সমর্থনও দিতোনা )
আমি অনেকের কাছে শুনেছি , তোফায়েল আহাম্মেদের নাকি কয়েক হাজার মোবাইল ফোন নাম্বার মুখস্থ আছে !! পরিচিত সকলের ফোন নাম্বারই নাকি উনি মুখস্থ বলতে পারেন !! আওয়ামীলীগের তোফায়েল আহাম্মেদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা