1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

বউ”র প্রতি রাগ দেখা‌বি না – মোহাম্মদ আইয়ুব

‌মোহাম্মদ আইয়ুব:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২
  • ৫৩৭ বার পঠিত

২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল। আমার মায়ের একটি মেজর অপারেশন হয়। মা’র বয়স তখন আটষট্টি। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানোর পূর্বে আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করেন। আমাকে মাফ করে দিস্, তোর বাপের দিকে খেয়াল রাখিস, আমার মেয়েদের খোঁজ- খবর রাখিস ইত্যাদি।

আমার একদিকে প্রচণ্ড ভয় লাগছিল, অন্যদিকে বুকফাটা কান্না চেপে ধরে মাকে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমার স্ত্রী একজন প্রশিক্ষিত নার্সের মতো দৃঢ়ভাবে বলল, কিছুই হবেনা, চলেন- এই সার্জন প্রতিদিন ৪/৫ জন রুগীর অপারেশন করেন। সবাই মারা গেলে কেহ অপারেশন করতো না, ভয়ের কিছু নেই, আপনি টেরও পাবেন না।

এই কথা বলে ক্যাবিন থেকে বের করে নার্স সমেত মাকে ওটি’র দিকে নিয়ে গেল।

চাকরি জীবনে কত মারামারি, কাটাকাটি, গুলাগুলির মাঝখানে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। কখনো ভয়ের সঞ্চার হয়নি। অথচ আজকে আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে তা অনুভব করে বুঝলাম, এই আমি কতই না দুর্বল হার্টের একজন মানুষ!

এই সময় বাল্যবন্ধু মাস্টার করিম এবং সমবায় অফিসার বাবুল ডেল্টা হাসপাতালের ক্যাবিনে এসে আমাকে সঙ্গ দেয়। প্রায় আট ঘন্টা পর ওটি থেকে মাকে ক্যাবিনে ফেরত আনে।

আমি আর আমার স্ত্রী বাইরোটেশন ক্যাবিনে ডিউটি শুরু করলাম। তার ডাবল ডিউটি। বাসায় রান্নাবান্না, দুই ছেলের গোসল, খাওয়ানো, স্কুলে নেওয়া- আনা আবার আমাকে বদলি দেওয়া। পরের দিন পূর্বাহ্ণে আমার ডিউটি চলছিল। হঠাৎ বুঝতে পারলাম মা মল ত্যাগ করেছে। সিস্টারকে ডেকে অনুরোধ করলাম, পরনের কাপড় চেন্জ করে দিতে। আমি ক্যাবিনের বাইরে ইন্টারবেলে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সিস্টার কাছে গিয়ে মুখ ফিরিয়ে আসছি বলে হন হন করে চলে গেল।
আমি বেশ কয়েকবার মায়ের শিয়রে গিয়েও অজানা সঙ্কোচে সোফায় বসে পড়লাম। সিস্টার আসার নাম- গন্ধ নেই।

হঠাৎ দেখি আমার স্ত্রী বিনা ফোনে ক্যাবিনে এসে হাজির। ভিতরে ঢুকেই বলল, “মা তো মল ত্যাগ করেছে, আমাকে ফোন দাও নাই কেন? তুমি একটু বাইরে যাও”।
আমি বাইরে গেলাম। খানিকক্ষণ পর দরজা খুলে বলল- আসো। ভিতরে ঢুকেই দেখলাম, শুধু তার শাশুড়ির পরনের কাপড় চেন্জ করে ক্ষান্ত হয়নি, সেই কাপড় ধোয়ে ব্যাগে রেখেছে। আর ক্যাবিন রোম স্প্রে করেই আমাকে ভিতরে আসো বলল।

আল্লাহর রহমতে আমার বাবা- মা দু-জনই সুস্থ আছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাবা- মাকে দেখতে তিন দিনের ছুটিতে গিয়েছিলাম।

আমার মা’র কড়া আদেশ,”তুই কখনো তারান্নুমের প্রতি রাগ দেখাবি না”

 

লেখক:

মোহাম্মদ আইয়ুব

অ‌ফিসার ইনচার্জ

লালমাই,কু‌মিল্লা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com