খুনিরা যেদিন জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছিল সেদিনই আঁধারে ছেয়ে গিয়েছিল দেশ। এদেশের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। জাতির পিতার রক্ত আমাদের পাপবিদ্ধ করেছিল। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য আজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার নির্ভয়চিত্তে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কস্থ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাতে যখন একের পর এক বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছিল তখন তারা খুনিদের কাছে প্রাণভিক্ষা চায়নি। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে খুনিদের বলেছিলেন, ‘তোমরা এখানেই আমাকে মেরে ফেলো।’ তখন মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। তখন বাংলা শোকে মুহ্যমান হয়েছিল। তখন সাথীদের খুনে রাঙা পথে পথে হায়েনার আনাগোনা শুরু হয়েছিল। এরপর খুনিদের প্রয়োজন হয়েছিল দায়মুক্তির। খুনি ও তাদের সহযোগীরা নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানের হত্যাকে আইনসিদ্ধ করতে চেয়েছিল। মানব সভ্যতাকে কলঙ্কিত করেছিল খুনিরা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকরা সেসময়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী শাসকগোষ্ঠী। ক্ষমতা যখন কুক্ষিগত তখন তো কোন কিছুই অসম্ভব নয়। অতএব খুনিদের প্রয়োজনে জারি করা হয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।
৯ জুলাই, বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কিত কালো দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সংসদে পাস করার সুযোগ না থাকায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তি দিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ কর্তৃক ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫ কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫০ নামে অভিহিত ছিল। পরে ১৯৭৯ সালে সংসদ কর্তৃক এটি অনুমোদন করা হয়। যার ফলে এটি একটি আনুষ্ঠানিক আইন হিসেবে অনুমোদন পায়। ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর সংশোধিত আইনে এ আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই থেকে দিনটি কলঙ্কিত এক কালো অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে গেছে।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল জিয়া রাষ্ট্রপতি সায়েমের কাছ থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করায় এবং প্রহসনের হ্যাঁ-না ভোটে নিজে রাষ্ট্রপতি হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়। সংসদে উত্থাপিত আইনটির নাম ছিল সংবিধান (সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯। এটি সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ১৮ অনুচ্ছেদে সংযুক্ত হয়েছিল, যা পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিলুপ্ত হয়। পঞ্চম সংশোধনীকে বৈধতা না দিলে জিয়াউর রহমানের আমলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যেত কিন্তু জিয়াউর রহমান তা করেনি। মূলত, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করে জিয়া প্রমাণ করেছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রক্ষাকারী এবং এই হত্যার ষড়যন্ত্রের মূল কুশীলবদেরই একজন।
১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, বঙ্গবন্ধু হত্যার ছয় সপ্তাহ বা ৪২ দিন পর, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ষড়যন্ত্রকারী খুনি ও স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মোশতাক ‘অর্ডিন্যান্স’র আকারে একটি ‘ইনডেমনিটি আইন’ পাস করেছিল। আইন সভা বা জাতীয় সংসদ অধিবেশনরত না থাকলে যখন প্রেসিডেন্ট সরাসরি তার আদেশের মাধ্যমে কোনো আইন জারি করেন তখন তাকে ‘অর্ডিন্যান্স’ বলে।
ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’র উদ্দেশ্য ছিল ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের যেকোনো বিচার ও শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়া। এই অর্ডিন্যান্সের শিরোনাম ছিল ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৭৫’। যেটি ছিল ১৯৭৫ সালের ৫০ নম্বর অর্ডিন্যান্স। এই অর্ডিন্যান্সের অর্থ হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা খুনের দায়ে কোনো আদালতে বিচারের সম্মুখীন হবে না কারণ তারা যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তা ‘ঐতিহাসিক প্রয়োজনে’ ঘটিয়েছিল! এই ঘৃণ্য খুনি ও তাদের সহযোগীরা হত্যাকাণ্ড বা মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করার মাধ্যমে ‘আঁধারের’ অভিমুখে যাত্রাকে ‘ঐতিহাসিক প্রয়োজন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল! এ ধরনের আইন মানব সভ্যতার কলঙ্ক। অথচ এই আইনই ঘোষণা করা হয়েছিল এই দেশে।
এই অধ্যাদেশটি দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে বলা হয়েছে- ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ভোরে বলবত আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো। খুনিদের আইনের বিচার থেকে মুক্তি দেওয়াই শুধু নয় খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম দুইজন খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান এবং আব্দুর রশিদ খোন্দকারকে মেজর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি দেয়। ১৯৭৫ সালের ৩ অক্টোবর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট মোশতাক বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকারী এই দুইজন সেনা কর্মকর্তাকে ‘সূর্য সন্তান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। তখনও রাষ্ট্রপতি ছিল খোন্দকার মোশতাক। মোশতাকের নির্দেশেই কেন্দ্রীয় কারাগারের সুরক্ষিত স্থানে বন্দি জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর জেনারেল খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়। ‘৭৬ সালের ৭ নভেম্বর খালেদ মোশারফকে হত্যা করা হয়েছিল এবং এরপরে জিয়াউর রহমান সরাসরি মঞ্চে আবির্ভূত হয়। সে সময় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সায়েম।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারপতি সায়েমকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে জিয়াউর রহমান বিচারপতি সায়েমের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর। এসময় মার্শাল ‘ল’ প্রোক্লামেশন জারি করা হয়। সামরিক ফরমানের তৃতীয় ঘোষণায় বলা হয়, ‘দ্য অ্যাফেয়ার্স টু দ্য কান্ট্রি উইল বি কনডাক্টেড অ্যাস পার ল দ্যাট হি (জিয়াউর রহমান) উইল ডিসাইড অর প্রোমালগেট।’ এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশে তখন সামরিক স্বৈরাচার বা এক-ব্যক্তির শাসন চলছিল।
‘ইনস্টিটিউশনালাইজেশন অব ডেমোক্র্যাসি ইন বাংলাদেশ’ গবেষণা গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তখন সামরিক আইন জারি করা হয় নাই, এই আইন জারি করা হয়েছিল সম্ভাব্য প্রতিরোধের আশঙ্কায়। খুনি চক্র এবং ষড়যন্ত্রকারী মহল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলনের আশঙ্কা করছিল।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২২ এপ্রিল অস্ত্রের মাধ্যমে বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘ইনস্টিটিউশনালাইজেশন অব ডেমোক্র্যাসি ইন বাংলাদেশ’ গবেষণা গ্রন্থের ৩১৫-৩১৭ পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম কর্তৃক লিখিত অ্যাট বঙ্গভবন :লাস্ট ফেস’ বইয়ের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমের এই বইটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার মাত্র সাতদিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই বইটি বাতিল করা হয়েছিল। এই বইয়ের শেষ সেকশনে বলা হয়েছে, . . .মধ্যরাতে অস্ত্রসহ জিয়া বঙ্গভবনে আসে। তার সঙ্গীরা অস্ত্র উঁচিয়ে ধরেছিল। আমি (রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েম) ভেবেছিলাম সম্ভবত সেটিই আমার শেষ রাত। সে একটি কাগজ আমার বিছানার দিকে ছুঁড়ে দিল এবং বলল, স্বাক্ষর করেন।…আমি কাগজটি পড়লাম। এটি ছিল আমার পদত্যাগপত্র। এতে লেখা, ‘অসুস্থতার কারণে আমি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’ আমি জিয়াউর রহমানের দিকে তাকালাম। এর মধ্যে আট থেকে দশজন সশস্ত্র ব্যক্তি অস্ত্র তাক করে আমার বিছানা ঘিরে ফেলেছে। জিয়া আবার আমার বিছানার উপর পা তুলল, তার অস্ত্র আমার বুকের দিকে তাক করল এবং বলল, স্বাক্ষর করেন। আমি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে কোনো প্রকারে আমার জীবন বাঁচালাম। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। যার প্রমাণ তিনি নিজেই দিয়ে গেছেন, ১৯৭৯ সালে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স সংযুক্ত করে।
জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতার নেতৃত্বের ইতিহাস নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। শুধু তাই নয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জিয়াউর রহমান বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন। এমনকি বঙ্গবন্ধু শব্দের প্রতিও জিয়াউর রহমানের ভীতি ছিল। জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিশিয়ারি। জেনারেল এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দিয়ে ফ্রিডম পার্টি গঠন করিয়ে খুনিদের সুরক্ষা দিয়েছিলেন। ফ্রিডম পার্টির নেতা খুনি কর্নেল ফারুককে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করা হয়েছিল এরশাদের প্রত্যক্ষ মদদে। জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর সকল হত্যাকারীকে পদোন্নতি দিয়েছিলেন। প্রাপ্ত রেকর্ড অনুযায়ী ৪-৫টি জন্মদিন পেরিয়ে বেগম জিয়া ১৯৯৩ সাল থেকে ১৫ আগস্টের বেদনাবিধুর দিনে তথা জাতীয় শোক দিবসের সময় মিথ্যা জন্মদিন পালন করেন, কেক কাটেন। এইসব কাজ করে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ‘আঁধারকে’ আরও ঘনীভূত করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। অসভ্যতা ও বর্বরতাকে ব্যক্তি জীবনের সাথে একাকার করে নিয়েছে এই শক্তি! ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদ এবং হুদাকে সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। খুনি রশিদকে বিরোধী দলের নেতা বানিয়ে সংসদকে কলুষিত করেছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করে সরকার গঠনের পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৫ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন বাংলাদেশ হাইকোর্ট। ইনডেমনিটি আইন বাতিলের পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য একটি মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ১৫ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। আসামি পক্ষের ১৫ জন উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পায়। এই আপিলে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল এবং ৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এই পর্যায়ে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতাসীন হয়। ফলে মামলার সার্বিক কার্যক্রম থমকে যায়। জামায়াত-বিএনপি জোটের ক্ষমতা থাকাকালে ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত সরকারের মদদে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদক বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন মৃত্যুবরণ করেন। শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। এটাই মহান আল্লাহর মেহেরবানী।
এই করোনা মহামারির সময়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভ্যাকসিন কূটনীতিতেও তিনি সফলতা দেখিয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে শুধু শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই। এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক এই কলঙ্কিত দিনে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকের মতোই পুরোনো সেই দাবিটিই উত্থাপন করছি, সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার নেপথ্যে কাজ করা খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার চাই। আলাদা কমিশন গঠন করে এই বিচার সম্পন্ন করলেই জাতির কলঙ্কমুক্তি হবে বলেও মনে করি। আশা করছি, বঙ্গবন্ধু কন্যা খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করবেন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখকঃ
ড. কাজী এরতেজা হাসান সিআইপি
সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক ভোরের পাতা।