বিএমডব্লিউ, ল্যান্ড ক্রুজার, মার্সিডিজ বেঞ্জ ও জাগুয়ারের মত বিলাসবহুল ১০৮ গাড়ি নিলামে তুলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ; যেগুলো পর্যটকদের জন্য বিশেষ সুবিধার আওতায় আনা হলেও ছাড় করা হয়নি।
দামি ব্র্যান্ডের এসব গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া আগামী ২৩ জুন হবে বলে আশা করছেন কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম। বুধবার চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে সংবাদ সম্মেলনে নিলামের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
প্রায় নয় বছর আগে দেশে আসা এসব গাড়ির অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ল্যান্ড ক্রুজার, লেক্সাস ও মিতসুবিশির মত আরও কিছু ব্র্যান্ড বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আগের বারের নিলামে না ওঠা এবং অবিক্রিত গাড়িগুলোই এ নিলামে উঠছে। এসব গাড়ির বিপরীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে (ক্লিয়ারেন্স পারমিট ইস্যু) বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ কমিশনার (নিলাম) মো. আল আমিন।
এর আগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ৩ ও ৪ নভেম্বর কারনেটের আওতায় (পর্যটকদের জন্য বিশেষ সুবিধা) আনা ১১২টি গাড়ির নিলাম করেছিল। এরপর ১৬ নভেম্বর ১১০টি গাড়ি কিনতে আগ্রহী সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশ করা হয়; যেখান থেকে সরকারি নিয়ম মেনে তিনটি গাড়ি বিক্রি হয়েছিল।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রচলিত নিলামের পাশাপাশি ই অকশন পদ্ধতিতেও ক্রেতারা গাড়িগুলোর নিলামে অংশ নিতে পারবেন। এ পদ্ধতিতে আগ্রহীদের জন্য আগামী ১ জুন অনলাইনে ও স্বশরীরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২৯ মে গাড়িগুলোর ক্যাটালগ প্রকাশের পর ৫ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত আগ্রহী ক্রেতারা গাড়িগুলো বন্দরে গিয়ে দেখতে পারবেন। আর দরপত্র জমা দেওয়া যাবে ১২ ও ১৩ জুন।
সংবাদ সম্মেলনে কাস্টমস কমিশনার ফখরুল বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পর্যটকরা ‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় গাড়িগুলো এনেছিলেন। কিন্তু এসব গাড়ি যারা এনেছেন তারা কেউ পর্যটক নন, সবাই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিক।
তিনি বলেন, কারনেটের আওতায় পর্যটকদের গাড়ি আমদানির সুযোগ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ এ সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ না হওয়ায় আমদানি করা এসব গাড়ি শুল্কমুক্তভাবে ছাড় দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকরা বিভিন্ন সময়ে এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশে বিএমডব্লিউ, ল্যান্ড ক্রুজার, মার্সিডিজ বেঞ্জ, জাগুয়ারের মত দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি নিয়ে আসতেন।
এ সুবিধার আওতায় আনা গাড়ি দেশে অবস্থানকালীন সময়ে ছয় মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন তারা। ফেরত যাওয়ার সময় গাড়িগুলোও ফেরত নেওয়ার শর্ত থাকে।
তবে ২০১৩ সালে পর্যটক সুবিধায় আনা এসব গাড়ি আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে নির্দেশনা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এতে পর্যটক সুবিধায় আনা এসব গাড়ি খালাসের জন্য সাধারণ আমদানি করা গাড়ির সমপরিমাণ শুল্ক ও করের ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে খালাস করতে হবে। এ কারণে অনেকেই এসব গাড়ি আর ছাড় করেনি বন্দর থেকে।
কাস্টমস কমিশনার ফখরুল জানান, পর্যটক সুবিধায় আনা এসব গাড়ি খালাসের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক আমদানিকারকের কাছ থেকে যথাযথ সাড়া পাওয়া যায়নি।
আগেও গাড়িগুলো নিলামের জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিয়েও সফল হতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, এসব গাড়ি অনেকেই নিলামে আগ্রহী হয়নি। তাদের ধারণা গাড়িগুলো তারা কিনলেও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সিপি (ক্লিয়ারেন্স পারমিট) সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য।
“সে জন্য বিষয়টি এনবিআরকে জানানোর পর তারা সেটি বাণিজ্য মন্ত্রনালয়কে জানায় এবং গাড়িগুলো ছাড় না করে বন্দরে রেখে দেওয়া হলে কী কী ক্ষতি হবে সেটাও তুলে ধরে।“
এরপর বাণিজ্য মন্ত্রনালয় গাড়িগুলোর বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়েছে বলে জানান তিনি।