রাজধানীর বনানীতে গত ৩০ এপ্রিল শ্বশুরবাড়ি থেকে মার্কিন নাগরিক শেখ সোয়েব সাজ্জাদের (৪৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার স্বজনদের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার ও স্ত্রী সাবরিনার দেওয়া মানসিক নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
এ ঘটনায় স্ত্রী সাবরিনা শারমিন (৩০) ও তার বন্ধু কাজী ফাহাদকে আসামি করে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন সাজ্জাদের বড় ভাই শেখ সোহেল।
সাজ্জাদ বিশ্বের জনপ্রিয় ও সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস অ্যামাজনে চাকরি করতেন। গত ১৬ মার্চ তিনি ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে তিনি স্ত্রী সাবরিনা শারমিনকে নিয়ে ওই বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৭ সালে সাবরিনা শারমিনের সঙ্গে সাজ্জাদের বিয়ে হয়। এরপর আমেরিকায় তারা বসবাস করছিলেন। ২০১৮ সালের মে মাসে সাজ্জাদকে রেখে সাবরিনা বাংলাদেশে চলে আসেন। এরপর রাজধানীর ওয়ারীর বাসায় থাকেন তারা। ওই বাসায় থাকাকালীন পাশের বাসার কাজী ফাহাদ নামে এক তরুণের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সাবরিনা। ওই তরুণ নিয়মিত বাসায় আসতেন, যা পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে ধরা পড়ে। সাবরিনার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সাজ্জাদের সঙ্গে ফোনে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
পারিবারিকভাবে ফাহাদকেও সতর্ক করা হয়। তারপরও তারা অনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখে। বিভিন্ন অজুহাতে ফাহাদ সাবরিনার ফ্ল্যাটে আসতো। আমেরিকায় বসে এসব খবর শুনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন সাজ্জাদ। প্রতিবেশী তরুণের সঙ্গে স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের কথা মহল্লায় ছড়িয়ে পড়লে তিনি সামাজিকভাবেও হেয় হন।
এজাহারে আরও বলা হয়, গত ১৬ মার্চ দেশে আসেন সাজ্জাদ। দেশে এসেই সাজ্জাদ তার স্ত্রী সাবরিনাকে নিয়ে শ্বশুর শাখাওয়াত হোসেনের বনানীর ডিওএইচএসের বাসায় বসবাস শুরু করেন। এসময় সাবরিনা সাজ্জাদের মোবাইল ফোন ও পাসপোর্ট সরিয়ে নিজের কাছে নিয়ে রাখেন। এতে সাজ্জাদ মানসিকভাবে চাপে পড়েন। সাবরিনা গত ১৫ এপ্রিল বাসা থেকে না বলে চলে যায়। এ সময় সে ফাহাদের সঙ্গে ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সাবরিনাকে সাজ্জাদের মোবাইল ও পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার জন্য তার বাবাও মোবাইল ফোনে অনুরোধ করেন। তবে তিনি ফেরত দেননি। এভাবে মানসিকভাবে চাপে রাখায় সাজ্জাদ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
সাজ্জাদের বড় ভাই শেখ সোহেল বলেন, ৩০ এপ্রিল গৃহপরিচারিকা ঘরের দরজা খুলে সাজ্জাদকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে তিনি সাজ্জাদের পরিবার ও পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে নিহতের লাশ নামিয়ে সুরতহাল করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
তিনি বলেন, সাবরিনা ও সাজ্জাদ দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের পর তারা নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেন। দশ বছর ধরে সাজ্জাদ আমেরিকায় রয়েছেন। সাবরিনা শিক্ষার্থী ভিসায় আমেরিকায় গেলেও তিনি ২০১৮ সালের মে মাসে ঢাকায় আসেন। এরপর আর আমেরিকায় যাননি। তার আগের সংসারে এক কন্যাসন্তান রয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল বাসা থেকে বের হওয়ার পর এখনো তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
গ্রেফতার কাজী ফাহাদের বাড়ি কুমিল্লায়। সে আগে কলাবাগান থাকতো। সাবরিনার খালাতো ভাইয়ের পরিচয়ে আমাদের বাসায় আসতো, আমরা তাই মনে করতাম। একসময় দেখলাম ফাহাদ কলাবাগান থেকে শিফট হয়ে আমাদের পাশের বাসায় বাসা ভাড়া নেয়। তখন তার বাসায় আসা বেড়ে যায়। আমাদের বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে সাবরিনা তার আগের সংসারের মেয়ে নিয়ে একা থাকতো।
তবে সাবরিনার স্বজনরা জানিয়েছেন, সাবরিনার অভিযোগ ছিল সাজ্জাদ তাকে সময় দিতো না, বন্ধু-বান্ধবকে বেশি সময় দিতো। এ নিয়েও তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্যামল আহমেদ বলেন, আমরা আসামি কাজী ফাহাদকে গ্রেফতার করেছি। তবে এখনো পলাতক রয়েছে এক নম্বর আসামি সাবরিনা। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহান হক নাগরিক খবরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শেখ শোয়েব সাজ্জাদ নিহতের ঘটনায় তার বড় ভাই শেখ সোহেল আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। মামলায় স্ত্রী সাবরিনা শারমিন ও তার বন্ধু কাজী ফাহাদ নামে এক তরুণকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে কাজী ফাহাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তিনি বলেন, এক নম্বর আসামি সাবরিনা এখনো পলাতক। সাজ্জাদ আত্মহত্যা করেছে নাকি হত্যা করা হয়েছে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে জানা যাবে। জানি