ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে সময় সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক হন শেখ মুজিব। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে বলেছিলেন, ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। সুউচ্চ কণ্ঠে ছাত্র-ছাত্রীরা না না বলে সেই কথার বিরোধিতা করেন। সেই থেকে শুরু হয় বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার সংগ্রাম। ১৯৫২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু।
১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ঐতিহাসিক ৬ দফা গৃহীত হয়। ওই বছরের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ দফা ঘোষণা করেন। বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা আন্দোলনে দেশব্যাপী উত্তাল হয়ে পড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানকে ‘বাংলাদেশ’ নামে ভূষিত করেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসভা করেন বঙ্গবন্ধু। সারাদেশ থেকে ছুটে এসেছিলো সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ১৮ মিনিটের ভাষণে কোটি বাঙালিকে রণক্ষেত্রে নামার উৎসাহ দেন তিনি। জ্বালাময়ী সেই ভাষণ আজও হৃদয়ে ধারণ করছে বাঙালি। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান কারাগারে বন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙালির ওপর বর্বরতা চালায় পাক-হানাদাররা। নির্ভীক বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলে বাংলার সূর্য সন্তানেরা।
১৬ ডিসেম্বর বাংলার আকাশে ওড়ে লাল-সবুজের পতাকা। অর্জিত হয় স্বাধীন ভূখণ্ড। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। স্বপ্ন দেখেন সোনার বাংলাকে সাজাবেন মনের মতো করে। বিশ্বের দরবারে এক অনন্য মর্যাদায় থাকবে সোনার বাংলাদেশ। কিন্তু স্বপ্ন সব ভেঙে চুরমার হয়ে যায় একরাতে। জীবনের পুরোটা সময় দেশ ও জাতির কল্যাণে লড়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীন ভূখণ্ডে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে সপরিবারে তিনি নিহত হন। আজও বঙ্গবন্ধু রয়েছেন কোটি হৃদয়ে। তিনি থাকবেন অমর হয়ে।