1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

যে কারণে হারল আফগান বাহিনী

নাগরিক অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১
  • ৩০৩ বার পঠিত

আমরা প্রশিক্ষণ দিতে পারব, অস্ত্রশস্ত্র দিতে পারব, কিন্তু যুদ্ধ করার যে ইচ্ছাশক্তি তা তো আর দিতে পারব না’—যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের এমনটিই বলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও দাবি করেছেন, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো দেশে যুদ্ধ করতে পারে না, যে দেশের সেনারা নিজেরাই যুদ্ধ করতে চায় না।

গত রবিবার তালেবান যখন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ঢোকা শুরু করে, তখনো দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রায় ১৫ দিন বাকি। যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো জোটের দেশগুলোতে তখন আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। যে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আনুষ্ঠানিক সামরিক অভিযান শুরু করেছিল, ২০ বছর পর আবার সেই তালেবানের রাজধানীতে ফেরার সময় রীতিমতো পালিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা। বিশ্লেষকদের অনেকে এর সঙ্গে ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামের সায়াগনের সাদৃশ্য খুঁজছেন।

তালেবান যখন একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছিল, তখনই পশ্চিমা গণমাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হচ্ছিল তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান বাহিনী কেন সফল হচ্ছে না। গত দুই দিনে কাবুলের একাধিক সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে,

মানসিকভাবে অনেক আগেই হেরে গিয়েছিল আফগান বাহিনী। কেউ কেউ আবার একে ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন। তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় না থাকলেও গত দু-তিন বছরে আবারও শক্তি জানান দিচ্ছিল। প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো স্থানে হামলা হতো। রাজনৈতিক অনৈক্য, নির্বাচিত নেতৃত্ব নিয়ে জনগণের হতাশার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে তালেবান।

তালেবান কাবুলে পৌঁছার প্রাক্কালে ইনস্টিটিউট অব ওয়ার অ্যান্ড পিস স্টাডিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনায়েত নাজাফিজাদা কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামরিক পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রিত পতন বলে মনে হচ্ছে। এর একটি ইতিবাচক পরিণতি হতে পারে রাজনৈতিক সমঝোতা। আরেকটি হতে পারে দেশে যুদ্ধের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এটি হবে ভয়ংকর ভুল।

যুক্তরাষ্ট্র গত দুই দশকে আফগানিস্তানে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র কেনার জন্য ৮৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সেই সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র এখন তালেবানের দখলে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মার্ক কিমিট আফগান বাহিনীর পরাজয় বিশ্লেষণ করতে গিয়ে চারটি কারণকে দায়ী করেছেন।এগুলো হলো তড়িঘড়ি করে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধ-আত্মত্যাগের জন্য যৌক্তিক কারণের অভাব, ব্যাপক দুর্নীতি এবং সম্ভবত তালেবানের প্রচার-প্রচারণা। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো ‘এয়ার সাপোর্ট’ (বিমান, ড্রোন দিয়ে হামলা, উদ্ধার) দিয়েছে, এমন খুব কম প্রমাণই আছে। বরং অনেক প্রমাণ আছে যে সেনা প্রত্যাহারের পর ঠিকাদাররা আফগান বাহিনীকে এয়ারক্রাফট রক্ষণাবেক্ষণ থেকে রসদ সরবরাহ—সব ক্ষেত্রেই ব্যাঘাত ঘটিয়েছে,

মার্ক কিমিট আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন ফার্মের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। অভিজ্ঞতা ও বর্তমান কাজের পরিধির কারণে আফগানিস্তান পরিস্থিতির দিকে তাঁর নিবিড় দৃষ্টি রয়েছে। তাঁর মতে, প্রপাগান্ডা ও তথ্য প্রচারে তালেবান বেশ পারদর্শী। তারা আফগান বাহিনীর সদস্যদের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছিল যে তাদের সঙ্গে লড়াইয়ের পরিণতি হবে ভয়াবহ।শান্তিপূর্ণ সমাধান হলে তালেবান আগের মতো ভয়ংকর হবে না বলেও বার্তা পাঠানো হয়েছিল। এর ফলে অনেক আফগান কমান্ডার তাঁর অধীন সেনাদের নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন এবং তালেবান ঘোষিত ‘সাধারণ ক্ষমা’ পেয়েছেন।

আফগান বাহিনী কোন যুক্তিতে যুদ্ধ করবে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মার্ক কিমিট। তাঁর মতে, আফগানিস্তানে সরকার ও সামরিক বাহিনীতে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে বলে যে জোরালো ধারণা তৈরি হয়েছে, তা দেশটির সামরিক সদস্যদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের আদলে সামরিক বাহিনী গড়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। ‘দুর্নীতিবাজ সরকারকে’ রক্ষায় সেই সামরিক বাহিনী ভূমিকা রাখতে আগ্রহী ছিল না।

প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার অন ফরেন রিলেশনসের বিশেষজ্ঞ ম্যাক্স বটের মতে, আফগান বাহিনীর কাছে তালেবানের অস্ত্রের চেয়ে আধুনিক অস্ত্র ছিল। আফগান বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা তালেবানের চেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু যা ছিল না তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া যুদ্ধজয়ের শক্তি।

আফগান বাহিনী কেন হারল তার উত্তর যুদ্ধে শরীর ও মনোবল নিয়ে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উক্তিতেই পাওয়া যায় বলে মনে করেন ম্যাক্স বট। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, যুদ্ধে মনোবল শারীরিক শক্তির অনুপাতে দশ গুণ।ম্যাক্স বটের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ বছরে আফগান বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের বিমান শক্তি, গোয়েন্দা তথ্য, লজিস্টিকস, পরিকল্পনা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তার ওপর নির্ভর করতে শিখেছে। তাই হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা যখন চলে গেছে, তখন তাদের মনোবল পুরোপুরি ভেঙে গেছে।

গত তিন-চার মাসে আফগান বাহিনীর এক-একটি শহরে পরাজয় এক-একটি আত্মসমর্পণের গল্প। মনোবল ভেঙে যাওয়ার পেছনে সময়মতো বেতন না পাওয়া, খাবারের সংকট, গোলাবারুদ সরবরাহে ঘাটতির মতো বিষয়ও ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা শেষ পর্যন্ত আশাবাদী ছিলেন। গত সপ্তাহেও তাঁদের ধারণা ছিল, তালেবান কাবুলে পৌঁছতে তিন মাসেরও বেশি সময় লাগবে।যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের পূর্বাভাস প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে তালেবান কাবুলে পৌঁছেছে। তালেবান ছক কষে এক-একটি শহরের কাছাকাছি গেছে। রসদ সরবরাহ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। কুন্দুজ প্রদেশের ইমাম সাহিব শহর দুই মাস ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। শেষ দিনগুলোতে সেনাদের কোনো অস্ত্র, খাবার ও পানি ছিল না। শেষ পর্যন্ত সেনারা শহর ছেড়ে পালিয়েছে।

কান্দাহারে খাদ্যাভাবে থাকা পুলিশ ইউনিটকে দেওয়া হয়েছিল এক বাক্স আলু। সেই পুলিশ ইউনিটের সদস্যরা ছয় থেকে ৯ মাস বেতন পাননি।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, অনেক শহরে তালেবান শান্তিপূর্ণভাবে অস্ত্র সমর্পণের বিনিময়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের নগদ অর্থ দিয়েছে। তালেবানের সঙ্গে লড়াই করে টিকতে না পেরে পালিয়েছেন,

আবদুল রশিদ দোস্তুমের মতো তালেবানবিরোধী প্রবীণ যোদ্ধা। এ সব কিছুই তালেবানের কাবুল অভিমুখী যাত্রায় সহায়ক হয়েছে।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com