ধরুন-আপনার বুকের ভেতরটা তীব্র চাপাযন্ত্রণায় তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। আপনার ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে। হন্যে হয়ে মুঠোফোনের কয়েকশো সেইভড নম্বর তন্নতন্ন করে খুঁজেও এমন কাউকে পাচ্ছেন না, যাকে বুকে শক্ত করে চেপে ধরে অঝোরে কাঁদা যায় !
আপনার অনেক বন্ধুই আছে, কিন্তু জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারার মতো বন্ধু একটিও নেই। এমন কিছু হলে আপনি সত্যিই দুর্ভাগা।ধরুন, চ্যাটলিস্টের কয়েকশো চ্যাটের মধ্যেও এমন একজনকেও পাচ্ছেন না, যাকে বিশ্বাস করে বুকের ভেতর ঠাসাঠাসি হয়ে জমাটবাঁধা কথাগুলি ঘণ্টার পর ঘণ্টা গড়গড় করে বলে দেওয়া যায় কোনও চিন্তাভাবনা ছাড়াই। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখুন, বেঁচে থাকাটা যাদের জন্য বড়ো কঠিন, আপনি তাদেরই একজন।
ভাবুন, আপনি ভীষণ ডিপ্রেশনে আছেন। ঘরভর্তি আপনার আপনজনেরা রয়েছে, কিংবা আশেপাশে শ’য়ে শ’য়ে মানুষের ভিড়, এদের মধ্যে একজনও আপনার ডিপ্রেশনটা ধরতেই পারল না, আপনার কান্না-লুকানো মুখোশটাকেই মুখ হিসেবে ধরে নিল ওরা সবাই-ই। মেনে নিন, আপনি ভীষণ রকমের একা একজন মানুষ।
পৃথিবীভর্তি সাড়ে সাত-শো কোটি মানুষ, অথচ আপনার সব কথা প্রাণখুলে বলতে পারার মতো একটা মানুষও কোথাও নেই।
কখনও কখনও আমরা পাশাপাশি হাত ধরে হেঁটেও দুজন মানুষ পরস্পর থেকে যোজন যোজন দূরে থেকে যাই, একসাথে জড়াজড়ি করে শুয়েও একজন আরেকজন থেকে লক্ষকোটি মাইল দূরে বাস করি।
এত এত মানুষের ভিড়েও শুধু বুঝতে পারার মতো এবং বলতে পারার মতো একজন মানুষের অভাব জীবনের অন্য সব বড়ো বড়ো অভাবকেও ফিকে করে দেয়।
আমরা বন্ধু হয়ে পাশাপাশি বসে থাকতে পারি, প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে বছরের পর বছর সম্পর্কে আটকে থাকতে পারি, স্বামী-স্ত্রী হয়ে শরীরে শরীর ছুঁইয়ে শুয়ে থাকতে পারি, তবু আমাদের ভেতরে বাস-করা সত্যিকারের আমি’টাকে কাউকে ছোঁয়াতে পারি না। সারাজীবনেও, বলতে ও বলাতে পারার মতো, বুঝতে ও বোঝাতে পারার মতো কাউকেই পাই না আমরা।
পকেটভর্তি টাকা, এয়ারকন্ডিশনড রুম, কিংবা দামি গাড়িতে বসে থেকেও মানুষে ঠাসা এই গ্রহে কেবল একটা মনের মতো মানুষের অভাবে সবচেয়ে বড়ো অভাববোধটি সাথে করে নিয়ে একদিন আমরা ঠায় মরে যাব।
মৃত্যুর আগে নিজের মনের মতো কাউকে কখনওই জানা হবে না, জমে-ওঠা দীর্ঘশ্বাসটি ছেড়ে কখনওই কাউকে নির্ভার স্বরে জানানো হবে না…আমারও অনেক অনেক কথা বলার ছিল!!!
লেখক: বনি শিখা
SSC 2000 & HSC 2002