সমাজের কিছু মানুষদের চরিত্র বুঝা বড় দায় !
খুব সরল হাসিখুশি আড্ডা ইয়ার্কি করা, সহজেই সবার সাথে মিশে যাওয়া মানুষগুলো যখন কঠিন হতে শেখে, যখন অপমানিত হয়ে, আঘাত পেয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন তাদেরকে আর কেউ চিনতে পারে না, ব্যবহারও করতে পারে না নিজের দরকারে ।
হ্যাঁ আমি বহু মানুষ দেখেছি, আপাতদৃষ্টিতে এতটাই হাসিখুশি থাকে তারা, যে নিজের ব্যথাগুলোকে পরম যত্নে বুকের ভেতর আগলে রাখতে পারে। তাদের দেখলে কেউ বুঝতেও পারে না, যে এই মানুষগুলো ভয়ংকর রকমের একটা যন্ত্রণা পুষে রেখেছে। এই মানুষগুলো রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারে ছাদের কোনায় বসে….
তাদের দেখলে বোঝা যায় না, যে এই মানুষ গুলো বৃষ্টি দেখে জানালা বন্ধ করে নিতে পারে। এই মানুষগুলো কারোর সাথে ফোনে দুই একটা কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলতে পারে, এই মানুষগুলো এলাকার চায়ের দোকানে বসে এক কাপ চা খেতে খেতে ডুবে যেতে পারে স্মৃতির পাতায়….
এই মানুষগুলো ভিড় দেখলে ভয় পায়, অথচ এই মানুষ গুলোই নিজের চারিদিকে ভিড় সৃষ্টি করতে জানে….হাসিঠাট্টায় ডুবিয়ে রাখতে পারে নিজের আশেপাশের লোকগুলোকে….
এই মানুষগুলোর ভেতর একটা ম্যাজিক আছে, এঁরা যেখানেই যায়, যার সাথেই মেশে, দারুণ ভাবে কথা বলতে পারে। খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে, এই মানুষগুলোর ভেতর গুণ আছে প্রচুর, কিন্তু অহংকার নেই কোনো!
স্রেফ মানুষগুলোর একটাই দোষ, তারা কাউকেই “না” বলতে পারে না, সহজে ফিরিয়ে দিতে পারে না, মুখের উপর দরজা বন্ধ করতে পারে না। নিজে দিনরাত পরিশ্রম করেও পারিশ্রমিক চাইতে পারে না, হাসিমুখে কাজ করে স্রেফ….
এঁরা ভাবে সম্মানটুকু পাবে হয়তো! অথচ ভুলে যায় এঁরা পারিশ্রমিক না দিয়ে মিষ্টি কথা বলে সবাই এঁদের নাম, খ্যাতিকে ব্যবহার করতে চায়….
এই মানুষগুলো সহজে কঠিন হতে পারে না, নিজের আশেপাশের মানুষজগুলোকে এঁরা টেনে তোলার চেষ্টা করে, উপচে গায়ে পড়ে সাহায্য করার চেষ্টা করে…
এই মানুষগুলোর একটাই দোষ, এঁরা চূড়ান্ত রকমের বোকা মানুষ, এঁদেরকে সহজেই ব্যবহার করা যায়, আবার ছুঁড়ে ফেলেও দেওয়া যায়। এঁরা আঘাতের বদলে আঘাত দিতে জানে না, অপমানের বদলে অপমান ফিরিয়ে দিতে জানে না, স্রেফ যে অপমান করে তার কাছ থেকে সরে আসে চিরকালের মতো….
কিন্তু কেউই জানে না, কেউই ধারণা পর্যন্ত করতে পারে না, এই মানুষগুলো যদি একবার কঠিন হতে শুরু করে, তাহলে এঁদের কাছ থেকে আর কোনোদিন ক্ষমা পাওয়া যায় না….
হাতেপায়ে ধরেও ক্ষমা পাওয়া যায় না….
বারবার অপমানিত হতে হতে যেদিন এঁরা অপমান করতে শুরু করে, যেদিন এঁরা প্রতিশোধ নিতে শুরু করে, সেদিনের পর থেকে এই মানুষগুলোর ধারেকাছে কোনো সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি ঘেঁষতেও পারে না….
আসলে, আমার যেটা মনে হয়, একটা সময়ের পর, একটা বয়সের পর সহজ না হওয়াই ভালো সবার কাছে। নিজের ভেতর সততার অহংকার বাড়িয়ে নেওয়া উচিত, নিজের ভেতর দম্ভ থাকা ভালো….
এই অহংকার এই দম্ভ সেসব প্রতিটা সুযোগসন্ধানী, বেয়াদব ও অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য তুলে রাখা ভালো, যাঁদের কোনো যোগ্যতাই নেই এই মানুষগুলোর সাথে মুখোমুখি দাঁড়ানোর মতো….
অহংকার, দাম্ভিক, স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক হতে শেখো প্রিয়, নইলে তোমার নাম, খ্যাতি, টাকা, সাফল্যকে সবাই ব্যবহার করবে আর তোমায় ছুঁড়ে ফেলে দেবে ডাস্টবিনে!!
লেখক: রুবায়েত হোসেন অনতু
উপদেষ্টা সম্পাদক