তালেবান যোদ্ধারা কাবুল দখলের পর আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশে ছেড়েছেন। দেশ ছাড়ার পর রোববার রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে পেজে এর কারণ জানান। তিনি উল্লেখ করেন, রক্তের বন্যা এড়াতে দেশ ছাড়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিবিসি জানায়, দেশ ছাড়ার পর এটাই আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের প্রথম মন্তব্য।
আশরাফ গনি বলেন, আমার উচিত ছিল সশস্ত্র তালেবানদের মুখোমুখি হওয়া। অথবা আমি গত ২০ বছর ধরে যে দেশকে রক্ষা করতে জীবন উৎসর্গ করেছি, সেই প্রিয় দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া।
তালেবান যোদ্ধাদের মুখোমুখি হওয়ার পরিস্থিতির বিষয়ে আশরাফ গনি বলেন, ‘এতে অগণিত দেশবাসী মারা যেত। ধ্বংসের মুখোমুখি হতো কাবুল শহর। তালেবানরা কাবুলের লোকদের ওপর হামলা করত। তাই রক্তের বন্যা এড়াতে দেশ ছাড়াকে শ্রেয় মনে করি। তিনি আরও বলেন, ‘তালেবানরা তলোয়ার ও বন্দুকের বিচারে জিতে গেছে। ইতিহাস কখনো অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়নি এবং দেবেও না। আমি সব সময় আমার জাতির সেবা করে যাব।
এর আগে আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, রোববার প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আফগানিস্তান ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ তাজিকিস্তানের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও তার সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে আফগান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক টোলো নিউজ। এমনকি আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে আশরাফ গনি দেশে ছেড়ে পালানোর পর আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্যালেসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। তবে প্যালেসের পরিস্থিতি এখন কি অবস্থায় আছে তা অস্পষ্ট।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের শাসনে ছিল। এর মধ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট সেখানে যৌথ অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে।
অভিযানে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের দমন করা হলেও ‘শান্তিরক্ষার স্বার্থে’ সেখানে ঘাঁটি গেড়ে অবস্থান করছিল পশ্চিমা সেনারা। কিছু বছর পার হওয়ার পর সেখান থেকে ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য দেশের সেনাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের সেনাদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করলে প্রত্যন্ত এলাকা দখল করে থাকা তালেবান কাবুলের ক্ষমতার মসনদে উঠতে জোর লড়াইয়ে নামে। শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও প্রেসিডেন্ট প্যালেস দখলে নেয় তালেবান যোদ্ধারা।