হাতে একগাদা কাজ। অথচ মাথায় বিনবিন করে বাজছে, আমাকে কোথাও যেতে হবে! কোথাও। যে কোনখানে !
কোথায় যেতে হবে, যেখানে গেলে আমি নিরাপদ- ভেবে ভেবে আমি দোটানায় ক্লান্ত হয়ে পড়ছি প্রায়শঃই।
মন বলছে আমি একটু কুমিল্লার ধর্ম সাগর এর কাছে যাই, কুমিল্লার পার্ক এর ভিতরে প্রাচীন গাছগুলোর নিচে গিয়ে বসে থাকি। পাতারা ঝরে ঝরে পড়ুক আমার গায়ে।
কখনো বলছে আজিমপুর যাই
ওখানে আমার দাদু,মা শুয়ে আছে পাশা পাশি মাটির ঘরে।উপরে ঘাসের চাদর। গোলাপগুলো কি ফুটেছে? রক্তলাল রঙনগুলো!
অথবা এমন কোন গ্রামে চলে যাই, যেখানে অবারিত আকাশের নিচে ধানক্ষেত, হলদে রঙা। মিষ্টিমিষ্টি ঘ্রাণ নিয়ে, বিন্দুবিন্দু শিশিরের ফোঁটায় সূর্যের ঝিকিমিকি গায়ে মেখে মায়ায় এলিয়ে আছে।
অথচ আমি এইখানে বসে আছি। যেন বছরের পর বছর। স্রেফ একটা জানলার ধারে। আমি বসে থাকতে থাকতে পাথর হয়ে যাচ্ছি!
আমার মন ভোলাতেই যেন বুলবুলিদুটো উলটো হয়ে সুপারি পাতায় দোলে, নানান কসরত করে।
টেলিফোনের তারে বসে মা চড়ুইটা তার সদ্য উড়তে শেখা ছানাকে মুখে তুলে খাওয়াতে খাওয়াতে ফিরে ফিরে চায়। ছানাটাকে হয়ত বোঝায়,দ্যাখো মেয়ে! এই যে তুমি ডানা পেয়েছো, তুমি কত সুখী! এই ডানাকে শক্ত করতে হবে। খেয়ে নাও শিগগির। উড়তে শেখো। ছানাটা মায়ের কথায় ফিরে ফিরে দেখে, আহারে মানুষটার ডানা নেই! তাই গরাদের ওপাড়ে বসে আছে। ডানা থাকলে বেশ উড়ে যেতো।
এইটুকু জানালার আকাশেই
টিয়াগুলি চক্কর কাটে খামোখাই। পাদাউক গাছগুলি একটু বেশিই হলদে-সোনালি, হলদে সবুজ রঙের খেলা দেখায়। উত্তর আর পূবের এই জানালা দিয়ে হিমহিম হাওয়ার সাথে আমার কাছে অবিকল ধানক্ষেতের পাশ থেকে সেই মিষ্টি ঘ্রাণ উড়ে আসে।
আমার কাঁদতে ইচ্ছা করে।
বয়সী একটা মানুষ জানলার পাশে বসে চোখ মুছতে মুছতে লিখছে, দৃশ্যটা মোটেও সুন্দর না।
না হোক।
তবু মানুষকে মাঝে মধ্যে কাঁদতে হয়। যে কান্নায় কোন কারণ নেই, কোন গ্লানি নেই। সুন্দরের কাছে, প্রাণের কাছে যাবার জন্য যে কান্না সেই কান্না সুন্দর না হলেও ক্ষতি নেই।
লেখক✍️মো:রুবায়েত হোসেন