1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

মাস্টা‌রের দক্ষতায় প্রাণ বাচঁল ফে‌রির ৪০০ যাত্রীর

নাগ‌রিক ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩৩০ বার পঠিত

ফেরির মার্কিং বাতির আবছা আলোয় শিমুলিয়া ঘাট ছেড়েছে রানীগঞ্জ নামের একটি ঠেলা ফেরি। নৌপথের হাজরা নৌ-চ্যানেল অতিক্রম করে চায়না চ্যানেল দিয়ে বাংলাবাজার ঘাটে যাচ্ছিল। তখনই ভাসতে থাকা একটি ড্রেজিং পাইপের সঙ্গে প্রবল বেগে ধাক্কা খায় ফেরিটি। ফেরির মাস্টার (চালক) মো. ফজলুল করিম আকস্মিক সে ধাক্কায় কিছুটা হতচকিত হয়ে পড়েন। তিনি দেখতে পান, ফেরির তলা ফেটে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘাটে না যেতে পারলে পদ্মায় ডুবে সব শেষ হয়ে যাবে। এমন ভাবনা থেকে ফজলুল করিম তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আর সাহস কাজে লাগিয়ে রক্ষা করেন যানবাহনসহ যাত্রীদের।

সেই মুহূর্তের কথা শোনাচ্ছিলেন ফেরির মাস্টার মো. ফজলুল করিম। তিনি বললেন, ‘দুর্ঘটনার ভয়াবহতা টের পেয়ে ফেরিতে থাকা যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের আমরা কিছু বুঝতে দিইনি। দুর্ঘটনার পরপরই প্রাথমিকভাবে সাব মার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করি আমরা। কিন্তু পানির বেগ বেশি থাকায় ব্যর্থ হই। এদিকে হাতে সময়ও খুব কম। যেকোনো সময় ফেরি ডুবে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমন অবস্থায় ফেরি থেকে ২৬ জন কর্মীকে দায়িত্ব দিই লেপ, তোশক, বালিশ, বস্তা—যা কিছু আছে সেগুলো দিয়ে যতটা সম্ভব পানির প্রবেশ ঠেকাতে।’

ফেরির কর্মীরা চালিয়ে যান তাঁদের কাজ। এমন সময় ফজলুল করিম ইঞ্জিনের গতি সর্বোচ্চ বাড়িয়ে দেন। একই সঙ্গে ফোন করে ঘাটের ব্যবস্থাপককে জানিয়ে দেন দুর্ঘটনার কথা, খালাসের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলেন ৪ নম্বর ফেরিঘাটটি।

জানানোর ২০ মিনিটের মধ্যে ফেরিটি বাংলাবাজার ৪ নম্বর ঘাটে পৌঁছায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে যানবাহন নামানো শেষ হতেই ঘন কুয়াশায় চারপাশ ঝাপসা হয়ে যায়। ফেরিটি ডুবে যেতে থাকায় মাস্টার ফজলুল করিম ঘাট থেকে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যান। তিনি বলছিলেন, ‘ফেরিটি ঘাট থেকে দূরে না সরালে মূল ঘাটেই ফেরিটি ডুবে যেত। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেত ফেরি চলাচল। তাই ঘাট থেকে ৩০০ ফুট দূরে ফেরিটি নোঙর করি।’ সেখানেই রাত ৪টার দিকে ফেরিটির ৯০ ভাগই ডুবে যায়। তখনো পাড়ে বসা মাস্টার ফজলুল করিম।

রানীগঞ্জ নামের এই ফেরিকে ডাম্ব ফেরি বলা হয়। ফেরিটির বয়স অন্তত ৬০ বছর। ব্রিটিশ শাসনামলে এই মডেলের ফেরিগুলোর প্রচলন হয়, যার কিছু এখনো পদ্মা নদীতে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার দুই ঘাটের মধ্যে চলাচল করে। তবে এটি ঠেলা ফেরি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। কারণ, এ ফেরির নিজস্ব কোনো ইঞ্জিন নেই। ইঞ্জিনসংবলিত একটি জাহাজ ফেরিটিকে টেনে নিয়ে যায়। এসব ফেরিতে সাধারণত যানবাহন পারাপার হয়। দুর্ঘটনার দিন রাত ১০টায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ৭টি ট্রাক, ৫টি বাস, ৭টি ছোট গাড়িসহ প্রায় ৪০০ যাত্রী বহন করেছিল রানীগঞ্জ ফেরিটি। আর ইঞ্জিনচালিত জাহাজ ছিল আইটি-৯৬। এর মাস্টার ছিলেন মো. ফজলুল করিম। তিনি বলেন, ‘শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে আমি প্রায় আট বছর কর্মরত আছি। চাকরিজীবন ২৪ বছরের। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনো হইনি।’

সে রাতের কথায় আবার ফিরে যান মো. ফজলুল করিম, ‘যানবাহন আনলোড শেষে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলামাত্রই ঘাটে আসে। কিন্তু তাঁরা আমাদের ফেরির দিক নির্ণয় করতে পারছিল না। কারণ তখন ঘাটে ঘন কুয়াশা ছিল। তিন-চার ফুট দূরত্বেও কিছু দেখা যাচ্ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আমাদের জাহাজকে দুই ঘণ্টা ধরে খুঁজতে থাকে। পরে মুঠোফোনে আর হর্ন দিয়ে তাদের পথ দেখাই। তারা এসে ঘণ্টাখানেক চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। চোখের সামনেই ফেরিটি পদ্মায় ডুবে গেল।’

ফজলুল করিমের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত আর দক্ষতার প্রশংসা এখন সহকর্মীদের মুখে মুখে। শিমুলিয়া ঘাটের মেরিন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ যেমন বলছিলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় ফজলুল করিম সাহসিকতার পরিচয় না দিলে যাত্রী ও যানবাহনের ক্ষতি হতো। ফেরিটি পাশের পদ্মার চরেও নেওয়া যাচ্ছিল না, কেননা তখন ঘন কুয়াশা ছিল। দক্ষ ও সাহসী চালকের কারণে বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে।সূত্র: প্রথম আলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com