অ্যাসাইনমেন্ট হলো এক প্রকার হ্যান্ড নোট- যা ফটোকপি বা কম্পিউটারের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। আবার ফেসবুকে ইউটিউব থেকওে ডাউনলোড বা প্রিন্টও করা যায়, যা দেখে দেখে লেখা পদ্ধতিতে সম্পুর্ন করে স্কুলে জমা দিতে হয়। যা মনগড়া নাম্বার দিয়ে শিক্ষকগণ ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করবে, এই নিয়মে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে। এ বিষয়টা সর্বমহলে স্বীকৃত এক ধরনের নকল ব্যবস্থা।অন্যদিকে ছাত্ররা সেই নকল করবেনা কেন? গত আট মাসে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী বইয়ের সংস্পর্শে না এসে নেট দুনিয়ায় সময় দিয়েছে। অনলাইন টিচিং বলুন আর অনলাইন ক্লাস…এটা কয়জন ছাত্রের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে? এদেশের কতজন ছাত্রের পরিবার স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ক্রয় করার সামর্থ আছে ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যতটুকু জানা গেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের শারীরিক উপস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিষয়টার কতটুকু যুক্তিকতা রয়েছে : এ নিয়মে কি বুঝায় ?
অটোপাশ দেওয়া দরকার ছিল ১ম-৯ম শ্রেণি পর্যন্ত। HSC- দের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। কারণ HSC সার্টিফিকেটের অনেক সরকারি বেসরকারি চাকুরি আছে। কারণ ভবিষ্যতে চাকরি ক্ষেত্রে তাদের ভালো ভাবে মূল্যায়ন করা হবে না, তাছাড়া অতীত রেকর্ড অনুযায়ী HSC তে গড় পাশ ৬৫% এর কাছাকাছি। তাহলে ১০০% পাশ করা ব্যাচের ৩৫% অযোগ্য আছে। সবার আগে পরীক্ষা নেওয়া বা বিকল্প মূল্যায়ন প্রয়োজন ছিল অনার্স ৪র্থ বর্ষ ও ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের, কারণ করোনা পরিস্থিতিতে চাকুরির বিজ্ঞপ্তি কিন্তু নিয়োগ থেমে নেই, অথচ এই কোর্সের শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত থাকায় তারা সার্টিফিকেট না পেয়ে অনেক বড় বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ সার্কুলার দেখেও আবেদন করতে পারছে না।
প্রয়োজন ছিল সঠিক সিদ্বান্তের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে যোগ্য লোকের অভাব। শিক্ষক- কর্মচারির বেতন বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওকরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, ৫ তলা বিল্ডিং তৈরী ইত্যাদির মাধ্যমে বাহবা পাওয়াটাই শিক্ষামন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যোগ্যতা প্রমাণিত হয় না। সর্বান্তকরণে দরকার ছিলো সবার আগে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করা, একজন শিক্ষার্থীও যেন কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এদের প্রতি খেয়াল রাখাটাই হলো প্রকৃত যোগ্যতার প্রমাণ। যে দেশের শিক্ষার্থীদের দাবী আদায়ে বারবার রাজপথে আন্দোলন করতে হয়, সে দেশ কখনো গর্বিত দেশ হতে পারে না। বেকার সমস্যা যে দেশের প্রধান সমস্যা সে দেশে বেতন বৃদ্ধিকে কেনো সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া হয়?
বর্তমান সময়েও করোনার প্রেক্ষাপটে সবই ওপেন রয়েছে, কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেউ কাজ করছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রয়োজনই যদি না থাকে -তাহলে করোনার অযুহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষার খাতা জমা দেওয়া কি দরকার। শিক্ষার ক্ষেত্রে কেন করোনার দোহাই দিয়ে জাতির ভবিষ্যতকে ধবংস করতে যাচ্ছি আমরা।
বাংলাদেশের সরকার প্রধান , লক্ষ কোটি মানুষের আস্থাভাজন জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট এই বার্তা পৌছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব । বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ করছি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষনা:
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনা করে এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণ না করে অন্য ধরনের একটি মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে দুইটি পাবলিক পরীক্ষা দিয়ে এসেছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলছেন, এ দুই পরীক্ষার ফলাফলের উপর গড় করে এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন করা হবে।
এ মূল্যায়নের ভিত্তিতে ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করার আশাও ব্যক্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।গত মাসের ৭ই অক্টোবর, ২০২০ তারিখে একটি ভার্চুয়াল সভায় শিক্ষামন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষার যে বেহাল অবস্থা যাচ্ছে তাতে আমাদের আগামী প্রজন্মকে গভীর অন্ধকারের দিকে ধাবিত হতে হবে। দেশের একজন সাধারন মানুষ হিসেবে একজন শিক্ষক হয়ে আমরা কোনভাবে মেনে নিতে পারিনা।
শিক্ষাই_জাতির_মেরুদণ্ড ছোট বেলায় যে শিক্ষা পেয়েছি সে ভাব সম্প্রসারণের মর্মটাই আজ আমরা হারাতে যাচ্ছি , আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং শিক্ষার বেহালদশা থেকে বের হয়ে সঠিক সিদ্বান্তের মাধ্যমে শিক্ষার গতিকে ফিরিয়ে আনতে হবেই !
এমইএস শাহরিয়ার সবুজ
সম্পাদক, নাগরিক খবর