আজ থেকে পনের বিশ বছর আগেও দেশের প্রতিটি গ্রামে ও শহরে মসজিদ গুলো ছিল দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা ইবাদত করার পবিত্র স্থান। ইবাদতের জন্য যখন ইচ্ছে তখন মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করতে সমস্যা ছিল না বলেই তখনকার পাড়া মহল্লার মসজিদ গুলোকে সাধারন মসজিদ হিসেবে উপস্থাপন করলাম।
আল্লাহর ইবাদত করতে এখানে ধনী গরিব সবাই সমান। সাধারণ মসজিদ গুলোতে সিলিং ফ্যান গুলো ছিল সাধারণ। মসজিদে তেমন দামি কিছু নেই,থাকলেও সব কিছুই আল্লাহ ঘরে ক্নে প্রকার লকার বা তালাচাবি ছাড়াই সবকিছু রক্ষিত থাকত। চুরি হওয়ার কোন খোঁজ বা খবর তেমনটা জানা নেই।
আল্লাহর ইবাদত করতে চব্বিশ ঘন্টাই মসজিদে আসা যাওয়া করতে পারবে নামাজিগণ। অতীতে এভাবেই চলত ইবাদত বন্দেগী। কখনও মসজিদের দরজায় তালা লাগানো হয়নি। ইবাদত করতে মসুল্লিরা যেকোন সময় মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতেন। অনেকে মসজিদে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আল্লাহর পবিত্র কোরআন তিলওয়াত পাঠ করতেন।
অনেক সময় সাধারন মানুষ,গরীব,ধনী,তরুণ যুবক দীর্ঘক্ষণ ইবাদত করার ফাঁকে ক্লান্ত হয়ে দু এক মিনিটের জন্য মসজিদের বারান্দায় অথবা ভিতরে পাকা ফ্লোর বা পার্টির উপর শুয়ে পড়ার দৃশ্য দেখা যেত। আমি নিজেও প্রায় সময় মসজিদে দু এক মিনিটের জন্য শুয়ে পড়তাম, এ সময় প্রাণটা ভরে যেত,মুহূর্তে সকল ক্লান্তি দেহ থেকে আলাদা হয়ে যেত। এ সাধারণ মসজিদগুলোতে সব সময় শান্তি বিরাজমান ছিল । পুর্বের রেওয়াজ অতীত হয়ে গেছে, দুই যুগ পর দেখছি আধুনিক মসজিদ। (ইবাদতের স্থান যত আধুনিক হোক তাও আল্লাহর ঘর, অতীত বর্তমান বুঝাতে সাধারণ মসজিদ আর আধুনিক মসজিদের পার্থক্য বুঝাতে বলা )
২০/২৫ বছরের ব্যবধানে এখন আর সেই সাধারণ মসজিদগুলো গ্রাম ও শহরে তেমন দেখা যায় না।
শুরু হলো মসজিদের উন্নয়ন কর্মসূচী। গরমে মানুষের কষ্ট দুর করতে এসি প্রয়োজন। মিম্বর থেকে বের করা হয় আবু-বকর (রা), ওমর (রা) এর দানের ইমোশনাল গল্প দিয়ে টাকা কালেকশন (মসজিদের দান বাক্স)। বছরের কিছু বিশেষ দিনে বা ওয়াজ মাহফিলে মসজিদের নামে বড় অংকের কালেশন করা হয়।
মাশাল্লাহ পুরো মসজিদ এখন দামি দামি টাইলস,বাইরের ওয়াল মসজিদের বারান্দা ও কারুকার্যে ভরা। দামি দামি কার্পেট। নামাজের প্রথম কাতারে ২ পাশে সারি সারি চেয়ার তো থাকেই। পুর্বের সময় মসজিদকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নসহ সব কাজেই ২-৩ জন নামাজি ব্যক্তি দায়িত্ব নিয়ে সব কাজ সহজে সমপন্ন করতেন।
বর্তমান সময়ে এসে এখন মসজিদ কমিটির রীতিনীতি চালু হয়েছে। মসজিদে মসজিদ কমিটি আছেই। অনেক বড় কমিটি। অধিকাংশ মসজিদ কমিটিতে এলাকার চিহ্নিত সুদখোর, ঘুষখোর, চোর, ব্যাভিচারকারী, অত্যাচারী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাই কমিটির কেউ সভাপতি কেউ কোষাধক্ষ্য আবার কেউ সদস্য।
মসজিদের ভ্যালু বা মুল্য এখন অনেক। চুরি হওয়ার সম্ভাবনা আছেই । অতএব সারাক্ষণ মসজিদ খোলা রাখা যাবে না। এখনকার সময় অধিকাংশ মসজিদই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ব্যতীত সব সময় তালাবদ্ধ থাকে। মসজিদে নামাজের নির্দিষ্ট সময় মেনে মুসল্লিদের আসা যাওয়া করতে হবেই। সাধারণ বা গরীবেরা এখন ভয়ে ভয়ে মসজিদে প্রবেশ করে ভিতরের টাইলস বা কার্পেট অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায় যদি।
চেনা জানা নিজের পরিচিত আল্লাহর ঘর এখন পুরোটাই অচেনা। পুর্বে মানুষ মসজিদের কোন কাজের দায়িত্ব নিতে ভয় পেত যদি ভুল হয়।
এখন মসজিদ কমিটিতে মেম্বার,চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, সুদখোরদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। উসারা সারা পথ হেঁটে এসে টায়ার্ড হয়ে প্রথম কাতারে চেয়ারে বসে নামাজ পড়েন। অথচ মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেমগণ কোন ওয়াজ করেন না কারন এর কোন ফতুয়া নেই।
সুদখোর,চোর,ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে কোনো ফতোয়া নাই। ধীরে ধীরে কেয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। নামাজিরা নামাজ শেষ করার আগে মসজিদ তালাবদ্ধ করার জন্য দরজায় ইমাম মুয়াজ্জিন দাড়িয়ে থাকে । উনাদেরও সময় নাই নিজ দায়িত্ব পালনে।
ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল যুগে আরো অনেক কিছু দেখা যাবে। সেই দেখার অপেক্ষায় আছি আমরা।
লেখক:
আবদুল্লাহ আল শরীফ