রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টার দিকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ চলে রাত আড়াইটা পর্যন্ত। মধ্যরাতে দুই পক্ষকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিন্ত্রণে। শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন। ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চলে গেছেন।
তবে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ- এমন অভিযোগ করে কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা হলের ছাদে ও তেলের পাম্প এলাকায় অবস্থান নেন। ফলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
তবে রাত ৩টার পরে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে ফিরে গেছেন। ব্যবসায়ীদের কোথায় জড়ো হতে দেখা যায়নি। এতে পুরো এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হয়। ওই এলাকার সব সড়কে যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের চারজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে একজন আহত শিক্ষার্থীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তার মাথা, মুখমণ্ডল, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছররা গুলিতে জখম হয়েছে। এছাড়া আরও দুই শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে।
আহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত দুজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- মোশারফ হাজারী (২৪) ও মো. রজব ইসলাম (২৬)। এ দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরাও। ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী ও ঢাবি শিক্ষার্থীরা ‘ঢাকা কলেজের পাশে আমরা’ হ্যাশট্যাগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে সরব হয়েছেন।
অন্যদিকে সংঘর্ষে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এডিসি হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষ খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। দেখতে পাই- শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা মুখোমুখি অবস্থানে। দুপক্ষই ইটপাটকেল ছুড়ছেন। আড়াই ঘণ্টা পর উভয়পক্ষকে শান্ত করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে গেছেন। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। নিরাপদ অবস্থানে থেকে তাদেরকে নিবৃত্ত করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এডিসি হারুন বলেন, ‘সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে কতজন আহত হয়েছেন, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু যানবাহন ও কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি হলে এবং তারা যদি অভিযোগ করেন অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো নিউমার্কেট এলাকায়। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট ও ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে জড়ো হন ব্যবসায়ীরা।
মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে দুপক্ষকেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সংঘর্ষ থামাতে এ পর্যন্ত ২০-২৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের দুই শিক্ষার্থী রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে যান। কেনাকাটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, এমন খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে নিউমার্কেট এলাকায় যান ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী। পরে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সুত্র:জানি