একাদশ জাতীয় সংসদের ১৬তম এবং বছরের প্রথম অধিবেশনে যাননি ৫২ জন সংসদ সদস্য। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে গেলেও উপস্থিত ছিলেন না বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। এমনকি জিএম কাদেরের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি শেরীফা কাদেরও সংসদে যাননি। গোলাম মোহাম্মদ কাদের কারোনা আক্রান্ত থাকায় তারা সংসদে যেতে পারেননি।
সংসদের লবিতে সংসদ সদস্যদের জন্য রাখা হাজিরা বই থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ওই অধিবেশনটি ছিল মহামারিকালে। শুধু এমপিরা নন সংসদ সচিবালয়ের কর্মরতদেরও অধিবেশন চলার সময় সংসদ ভবনে প্রবেশ সীমিত ছিল। তুলনামূলক সিনিয়র এমপিদের সংসদে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। এজন্য উপস্থিতি কম ছিল।
১৬ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে ১৬তম অধিবেশন। মাত্র পাঁচ কার্যদিবস চলে এই অধিবেশন। অথচ বছরের এই অধিবেশন এক মাসেরও বেশি সময় চলে। কিন্তু করোনার কারণে এটি সংক্ষিপ্ত করা হয়।
সংসদের সহকারী সচিব (আইন-২) আশিক আহমদ তানভীর খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অধিবেশন চলাকালে সদস্যদের উপস্থিতির গড় ছিল ১৭৫ দশমিক আটজন। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন উপস্থিতি ছিল যথাক্রমে ২৩৯ জন (১৬ জানুয়ারি) এবং ১৩৪ জন (১৭ জানুয়ারি)।
এই অধিবেশনে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান নূর (নীলফামারী-২), মো. ফজলে রাব্বী মিয়া (গাইবান্ধা-৫), মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রাং (নওগাঁ-৪), ওমর ফারুক চৌধুরী (রাজশাহী-১), মো. আয়েন উদ্দিন (রাজশাহী-৩), শফিকুল ইসলাম শিমুল (নাটোর-২), তাহজীব আলম সিদ্দিকী (ঝিনাইদহ-২), পঞ্চানন বিশ্বাস (খুলনা-১), আব্দুস সালাম মুর্শেদী (খুলনা-৪), এস,এম,জগলুল হায়দার (সাতক্ষীরা-৪), তোফায়েল আহমেদ (ভোলা-১), আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ (বরিশাল-১), আমির হোসেন আমু (ঝালকাঠি-২), তানভির হাসান ছোট মনির ( টাংগাইল-২), আতাউর রহমান খান (টাংগাইল-৩), মো. মুরাদ হাসান (জামালপুর-৪), সৈয়দা জাকিয়া নুর (কিশোরগঞ্জ১), নাজমুল হাসান (কিশোরগঞ্জ-৬), সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), আগাখান মিন্টু (ঢাকা-১৪), আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (ঢাকা-১৭), রাজি উদ্দিন আহমেদ (নরসিংদী-৫), সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (ফরিদপুর-২), জয়া সেন গুপ্তা (সুনামগঞ্জ-২), হাফিজ আহমদ মজুমদার (সিলেট-৫), ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর (চাঁদপুর-১), মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী (নোয়াখালী-৪), ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫), এ কে এম শাহজাহান কামাল (লক্ষ্মীপুর-৩), দিদারুল আলম (চট্টগ্রাম-৪), এ.বি.এম.ফজলে করিম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৬), মো. আফছারুল আমীন (চট্টগ্রাম-১০), আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন (চট্টগ্রাম-১৫), তামান্না নুসরাত বুবলী (মহিলা আসন-২৪), মনিরা সুলতানা (মহিলা আসন-২৬), আদিবা আনজুম মিতা (মহিলা আসন-৩৭), ফেরদৌসী ইসলাম (মহিলা আসন-৩৮) যোগ দেননি।
আর জাতীয় পার্টির গোলাম মোহাম্মদ কাদের (লালমনিরহাট-৩), রাহগির আল মাহি এরশাদ (রংপুর-৩), পনির উদ্দিন আহমদ (কুড়িগ্রাম-২), মো. রুস্তম আলী ফরাজী (পিরোজপুর-৩), রওশন এরশাদ (ময়মনসিংহ-৪), লিয়াকত হোসেন খোকা (নারায়ণগঞ্জ-৩), এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫), মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী-৩), শেরীফা কাদের (মহিলা আসন-৪৫) এই অধিবেশনে যোগ দেননি।
অন্যদিকে বিএনপি মো. মোশারফ হোসেন (বগুড়া-৪), আবদুস সাত্তার ভুঞা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা (রাজশাহী-২), বিকল্প ধারার মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী (মুন্সিগঞ্জ-১), স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (ফরিদপুর-৪) এবং সেলিনা ইসলাম (মহিলা আসন-৪৯) এই অধিবেশনে যাননি।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ছাড়া অন্য দুজন বিদেশে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি স্পিকারের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্যার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন। দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশে চিকিৎসা নিয়ে তেমন উন্নতি না হওয়ায় গত বছরের ১৮ আগস্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ভারতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরে যুক্তরাষ্ট্র নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে স্যারের অবস্থা ভালো।’
প্রায় দুই বছর ধরেই সংসদের কোনো কার্যক্রমে অংশ নেন না বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ব্যাংককে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে তার ছেলে রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাহগির আল মাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) বলেন, মা’র অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। এখন তিনি কথা বলতে পারেন। আগে নিজ হাতে খেতে না পারলেও এখন নিজেই খাওয়া-দাওয়া করেন।
গত ১৬ জানুয়ারি অধিবেশন শুরুর দিন ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর পরদিন ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের সদস্য শামসুল হক টুকু তা সমর্থন করেন। এরপর ওইদিন ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর রীতি অনুযায়ী আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় সরকারি ও বিরোধী দলের ৫৪ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন এবং মোট ৯ ঘণ্টা ৩০ মিনিট আলোচনা হয়।
এ অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরদানের জন্য মোট ৫২টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে তিনি ২০টি প্রশ্নের উত্তর দেন। মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট এক হাজার ৪৭৬টি প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীরা ২৯০টি প্রশ্নের জবাব দেন। জানি