রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে চীনের অবস্থান বাস্তবসম্মত ও ন্যায়সংগত বলে মন্তব্য করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, সংকটময় এ পরিস্থিতিতে চীন যে ইতিহাসের সঠিক পক্ষে আছে, তা সময়ই বলে দেবে। খবর সিনহুয়ার
ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত শুক্রবার প্রায় দুই ঘণ্টা ভিডিও কলে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল শনিবার এসব কথা বলেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইউক্রেন নিয়ে চীন সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্টভাবে ও বিস্তারিত আকারে তুলে ধরেছে উল্লেখ করে ওয়াং ই বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বশান্তি রক্ষায় চীন সব সময় একটি শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন সব সময় শান্তির পক্ষে কাজ করেছে ও যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। দেশটির ইতিহাস ও সংস্কৃতির মূলেই শুধু এই ঐতিহ্যে নেই, বরং বেইজিংয়ের পররাষ্ট্রনীতিও একই।
চীন কখনোই বাইরের জোরজবরদস্তি ও চাপ মেনে নেবে না এবং বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে আনা সব ভিত্তিহীন অভিযোগ ও সন্দেহের বিরোধিতা করবে বলে উল্লেখ করেন এই চীনা কর্মকর্তা। তাঁর ভাষ্য, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বাস্তবসম্মত ও ন্যায়সংগত পথে থেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে চীন।
সি ও বাইডেনের বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত করে ওয়াং ই বলেন, ইউক্রেন সমস্যা সামাল দিতে একটি চীনা সমাধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সমাধানের মূলত দুটি দিক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, যুদ্ধ থামাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংলাপ ও আলোচনায় বসতে সব পক্ষকে চাপ দিতে হবে, যত দ্রুত সম্ভব সংঘাত বন্ধ করতে হবে, বেসামরিক লোকজন হত্যা থামাতে হবে এবং মানবিক সংকট রোধে লাগাম টানতে হবে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা পরিহারের মধ্যেই ইউক্রেন সংকটের স্থায়ী সমাধান রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের জোটগুলোর মুখোমুখি অবস্থান হওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। একই সঙ্গে ইউরোপে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ, কার্যকর ও টেকসই আঞ্চলিক নিরাপত্তাকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
চীনের কাছে রাশিয়া অস্ত্র সহায়তা চেয়েছে বলে সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বের হয়। এরপর বৈঠকে বসেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দুই দেশের প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসের দেওয়া তথ্য বলছে, রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার পরিণতি নিয়ে ওই আলাপচারিতায় চীনের প্রেসিডেন্টকে হুঁশিয়ারি দেন বাইডেন। অন্যদিকে চীনা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কোনো পক্ষের উপকারে আসবে না বলে ভিডিও কলে উল্লেখ করেন সি চিন পিং।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ দেশ কিয়েভের পক্ষে দাঁড়ায়। তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি চীন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার অভিযান বন্ধের প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল দেশটি। এমনকি ইউক্রেনে হামলার নিন্দাও জানায়নি বেইজিং।