1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কু‌মিল্লায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘাতক গ্রেফতার ‌দেশ বি‌দে‌শের সকল খবর জান‌তে নাগ‌রিক খব‌রের পা‌শে থাকুন ‌দেশ বি‌দে‌শের সকল খবর জান‌তে নাগ‌রিক খব‌রের পা‌শে থাকুন ‌দেশ বি‌দে‌শের সকল খবর জান‌তে নাগ‌রিক খব‌রের পা‌শে থাকুন ‌দেশ বি‌দে‌শের সকল খবর জান‌তে নাগ‌রিক খব‌রের পা‌শে থাকুন ‌দেশ বি‌দে‌শের সকল খবর জান‌তে নাগ‌রিক খব‌রের পা‌শে থাকুন ‌দেশ বি‌দে‌শের সকল খবর জান‌তে নাগ‌রিক খব‌রের পা‌শে থাকুন ‌দেশ বি‌দে‌শের সকল খবর জান‌তে নাগ‌রিক খব‌রের পা‌শে থাকুন কু‌মিল্লা সদর দ‌ক্ষিণে স্কুল ফেরার প‌থে শিশু‌কে ধর্ষণের পর হত্যা ‌দেশ বি‌দে‌শের সকল খবর জান‌তে নাগ‌রিক খব‌রের পা‌শে থাকুন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয় মুসলিম সৈন্য দল‌ের অবদান ও অজানা কাহিনি

নাগ‌রিক অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ২৯৭ বার পঠিত
ছ‌বি: বি‌বি‌সি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল ফরাসী বন্দর নগরী ডানকার্ক থেকে মিত্র বাহিনীর সৈন্যদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা যা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এই মিত্র বাহিনীর অংশ ছিল প্রায় ৩০০ জন ভারতীয় মুসলিম সৈন্যের একটি দল। সেসময় তাদের ভূমিকা কী ছিল সেই গল্পের কথা মানুষ খুব একটা জানে না।

সময়টা ছিল ১৯৪০ সালের মে মাস। সেসময় জার্মান সামরিক বাহিনী ফ্রান্সের ডানকার্ক শহরের বন্দর ও সমুদ্রে সৈকতে আক্রমণ করতে শুরু কলে মাত্র ৯ দিনে সেখান থেকে মিত্র বাহিনীর তিন লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি সৈন্য সরিয়ে নেওয়া হয়। ইউরোপীয় সৈন্যদের সঙ্গে ছিলেন মেজর মোহাম্মদ আকবর খান নামের একজন ভারতীয় সৈন্য।

জার্মান বাহিনীর বোমায় বিধ্বস্ত ইস্ট মোল, যা প্রায় এক মাইল দীর্ঘ এক কাঠের জেটি, সেখানে ২৮শে মে সারিবদ্ধ ৩০০ জন ভারতীয় এবং ২৩ জন ব্রিটিশ সৈন্যের এক বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে ক্রিস্টোফার নোল্যানের তৈরি ডানকার্ক সিনেমাতে এই জেটির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ছ’ফুট লম্বা দীর্ঘদেহী এই সৈন্য মেজর মোহাম্মদ আকবর খান ভারতে ফিরে যান। পরে ১৯৪৭ সালের অগাস্ট মাসে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান এই দুটো দেশের জন্ম হয় এবং পরে তিনি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেছেন।

পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সামরিক উপদেষ্টাও হয়েছিলেন তিনি। মেজর মোহাম্মদ আকবর খান ৪০টিরও বেশি বই লিখেছেন এবং চীন সফরে গিয়ে চেয়ারম্যান মাও-এর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছে।

ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ঘি বোম্যান মনে করেন মেজর আকবরের মতো যেসব ভারতীয় সৈন্যকে ডানকার্ক থেকে সরিয়ে আনা হয়েছিল তাদেরকে সবাই পুরোপুরি ভুলে গেছে। এই সৈন্যদের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস খুঁজে বের করাসহ তাদের পরিবারের কাছ থেকে ছবি সংগ্রহ করতে মি. বোম্যান পাঁচটি দেশে পাঁচ বছর সময় কাটিয়েছেন। সৈন্যদের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন।

ভারতীয় এই সৈন্যরা ছিল ‘২৫তম পশু পরিবহন কোম্পানির’ সদস্য। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে এই সৈন্যরা তাদের খচ্চরগুলোকে সাথে নিয়ে পাঞ্জাব থেকে সাত হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ফ্রান্সে এসে পৌঁছেছেন।মাত্র চারজন বাদে ভারতীয় এই সৈন্য বাহিনীর সবাই ছিল মুসলিম।

ছ‌বি: বি‌বি‌সি

তাদের পরনে ছিল খাকি পোশাক, মাথায় টিনের হেলমেট, পাগড়ি ও টুপি। তারা কোনো অস্ত্র বহন করতো না। পাঞ্জাব থেকে আসার সময় তাদের কারো জন্য কোনো অস্ত্রও ইস্যু করা হয়নি। ফ্রান্সে এসে পৌঁছাতে তাদের সময় লেগেছিল ছয় মাস।

ফ্রান্সে তীব্র শীতের মধ্যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে মোটরচালিত যানের পরিবর্তে খচ্চর দিয়ে রসদ বহন করতে হচ্ছিল। কিন্তু এই প্রাণীটিকে দেখভাল ও পরিচালনা করার জন্য তাদের দক্ষতা ছিল না। একারণে ভারতীয় এই বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় কমনওয়েলথ দেশগুলো থেকে ৫০ লাখের মতো মানুষ ব্রিটিশ রাজের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। তাদের প্রায় অর্ধেকই এসেছিল দক্ষিণ এশিয়া থেকে।
ডানকার্কে ভারতীয় সৈন্যদের কী হয়েছিল সেটা স্পষ্ট নয়।

এসব সৈন্য ও তাদের সহযোদ্ধাদের গল্প যুদ্ধের ইতিহাসে না বলা গল্প হিসেবেই রয়ে গেছে,” বলেন ইতিহাসবিদ মি. বোম্যান, যিনি সম্প্রতি ‘দ্য ইন্ডিয়ান কন্টিনজেন্ট: দ্য ফরগটেন মুসলিম সোলজার্স অফ দ্য ব্যাটল অফ ডানকার্ক’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন।

এ সব সৈন্যের একজন ছিলেন চৌধুরী ওয়ালি মোহাম্মদ। পরে কোনো এক সময় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মি. চৌধুরী বলেছেন, “জার্মান বিমানগুলো ভয়াবহ সব পাখির মতো মাথার উপরে উড়ছিল এবং আমাদের দিকে গুলি ছুঁড়ছিল..আমি ১৫ দিন ধরে ঘুমাইনি। তিনি এবং তার বাহিনী ডানকার্কে এসে পৌঁছেছিল ২৩শে মে। ভাবিনি যে আমরা ডানকার্ক থেকে বেঁচে ফিরে আসতে পারবো…সবকিছুতেই আগুন জ্বলছিল। পুরো ডানকার্কই জ্বলছিল। এতো বেশি আগুন জ্বলছিল যে দিনের আলোর মতো মনে হতো।

আমাদের যে জাহাজে ওঠার কথা সেটা ডুবে যায়। সমুদ্র তীরে পৌঁছে দেখি যে জাহাজটি ডুবে গেছে। তখন আমরা জঙ্গলের ভেতরে পালিয়ে যাই,পরে তিনি স্মৃতিচারণ করেছেন। এর দু’দিন পর চৌধুরী ওয়ালি মোহাম্মদ এবং তার বাহিনীকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়।

আরো একজন ছিলেন জেমাদার মাওলা দাদ খান। শত্রু বাহিনী যখন স্থল ও আকাশ থেকে তাদের ওপর হামলা চালাতো তখন তার বাহিনীর সদস্য ও খচ্চরগুলোকে রক্ষার জন্য তিনি যে “অসীম সাহস” দেখিয়েছেন এবং “ঠাণ্ডা মাথায় বিচক্ষণতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত” নিয়েছেন তার জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।

আমি মনে করি না ভারতীয় সৈন্যদের তাৎপর্য তাদের সংখ্যার মধ্যে। এটা একটা ঘটনা যে তারা সেখানে ছিলেন, ভারতীয় হিসেবে, ব্রিটিশ রাজের নাগরিক হিসেবে, তাদের মধ্যে মৌলভী ছিলেন, ছিলেন পাগড়ি পরিহিত সৈন্যও, এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে একটু ভিন্নভাবে দেখা যায়,” বলেন মি. বোম্যান।

ভারতীয় এই সৈন্যরা ১৯৪০ সালের বেশিভাগ সময় ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রামে কাটিয়েছেন। এটি লিল শহরে উত্তরে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে তারা সেখানে শরীর চর্চা করেছেন এবং তাদের খচ্চরদের খাবার যুগিয়েছেন।

স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে, সাপ্তাহিক জিমখানা বা শরীরচর্চা অনুষ্ঠানে গ্রামের লোকেরা ভিড় করতো দর্শক হিসেবে। সেখানে তারা খচ্চরের পিঠের ওপর ওঠে নানা রকমের শারীরিক কসরত দেখাতো ও ভাঙরা নাচ (পাঞ্জাবের লোকজন নৃত্য) পরিবেশন করতো।

জার্মানি মে মাসে ফ্রান্সে আক্রমণ করলে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে শুরু করে। যে বাহিনী খুব সুশৃঙ্খল, বহুজাতিক এবং নিয়মনীতি মেনে চলে, মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তাতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং তারা সমুদ্র উপকূলে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়,” বলেন মি. বোম্যান।

এই ইতিহাসবিদ বলেন, ডোভারে পৌঁছে তারা পাঞ্জাবি লোকসঙ্গীত বাজায় যেখানে “বহু ব্রিটিশ দর্শকও এই নাচে অংশ নিয়েছিল। তারা ব্রিটিশদের মন জয় করে নিয়েছিল। একারণে পরে তাদের মতো দেখতে কিছু ‘খেলনা সৈন্যও’ তৈরি করা হয়েছিল।

ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যেসব গ্রাম ও শহরে তারা ছিলেন সেখানে তাদের জীবন বদলে গিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে তারা ভারতে ফিরে যায়। তাদের কাউকে কাউকে জার্মানরা ধরে নিয়ে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং পোল্যান্ডের যুদ্ধ-শিবিরে আটক করে রাখে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ১৯৪০ সালে তার এক বিখ্যাত ভাষণে তাদেরকে “মুক্তির অলৌকিক বিষয়” বলে উল্লেখ করেন। তাহলে এই সৈন্যদেরকেই মানুষ ভুলে গেল কেন?

ইতিহাসবিদ মি. বোম্যানের মতে একটি কারণ হতে পারে যে তারা “সরবরাহের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা সম্মুখ-সারির যোদ্ধা ছিলেন না, এবং এধরনের সাহায্যকারী সৈন্যদের খুব কমই স্মরণ করা হয়। মানুষের মনে রাখা এবং ভুলে যাওয়ার প্রক্রিয়া একটি দারুণ বিষয়, এসবের পেছনে যেসব কারণ রয়েছে সেগুলোর নির্ধারণ করা কঠিন,” বলেন মি. বোম্যান।

যুদ্ধ-পরবর্তী পরিবেশ ছিল একেবারেই ভিন্ন, ইউরোপ এবং ভারতেও। ইউরোপে সবকিছু পুনর্গঠন করতে হয়েছিল, নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছিল সমাজ। দৃষ্টি ছিল ভবিষ্যতের দিকে, এবং মানুষের মনে যুদ্ধের যেসব স্মৃতি বেশি করে রয়ে গেছে সেগুলো ছোটখাটো দৃষ্টিকোণ থেকে এসেছে, যেসবের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গ মুখ আর চটকদার ঘটনা জড়িত। সুত্র:বি‌বি‌সি।

 ভারত স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হয়েছে যার জের ধরে ঘটেছে দেশভাগের ঘটনা। ইতিহাস সবসময় একটি চলমান প্রক্রিয়া। সুধা জি তিলক একজন সাংবাদিক এবং ‘টেম্পল টেইলস: সিক্রেটস এন্ড স্টোরিজ ফ্রম ইন্ডিয়াজ স্যাক্রিড প্লেসেস’ গ্রন্থের রচয়িতা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com