ফিলিস্তিনের গাজা এখনও ধ্বংসস্ত‚পের নগরী। সাজানো-গোছানো শহর ভরে আছে বিমান হামলায় ভবন ভাঙা ইট-পাথরের টুকরোয়। যুদ্ধবিরতির পরও এখানকার বাসিন্দারা ভালো নেই। ইসরাইলি হামলার দিন থেকেই তাদের দুঃখের শুরু। এখনও আঁতকে ওঠেন সেই সব স্মৃতি মনে করে। এক ফিলিস্তিনি বলেন, যখন বিমান হামলা হতো তখন পুরো গাজা অঞ্চল কাঁপত। আমাদের বহু বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাণ গেছে অনেক প্রতিবেশীর।
কয়েকজনকে ধ্বংসস্ত‚পের নিচ থেকে উদ্ধার করেছি। সেসব দুঃসহ পরিস্থিতি আর দেখতে চাই না। গাজায় শুধু ভবনগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ-পানির সংকটও তীব্র। ভুগতে হচ্ছে জ্বালানি সংকটেও। সব মিলিয়ে চরম মানবিক বিপর্যয়ে অধিবাসীরা। ইসরাইলের হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষের অনেকেই আহত হয়েছেন।
তাদের কেউ হারিয়েছেন পা, কেউ বা হাত। শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষত। এতো কিছুর পরও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন তাদের। তারা চান, আর যেন আগ্রাসন না আসে। যারা এগিয়ে এসেছেন গাজা পুনর্নির্মাণে, সেসব দাতাসংস্থাকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটি আহবান জানিয়েছে, বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো যেন মানবিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে এ কাজে এগিয়ে আসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) সতর্ক করে বলেছে, গত মাসে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার রক্ষক্ষয়ী সংঘাতের পর দখলকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলের প্রায় দুই লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন। ডব্লিওএইচও’র পূর্বাঞ্চলীয় ভূমধ্যসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বুধবার এ কথা বলা হয়েছে। ডব্লিওএইচও’র বিবৃতিতে বলা হয়, পশ্চিম তীরসহ দখলকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে প্রায় দুই লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন। আর, তা সরবরাহে ডব্লিওএইচও তাদের তৎপরতা জোরদার করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পরিস্থিতি ভয়ংকর।
তাই সংস্থাটি প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা সরবরাহ এবং এ কাজে যুক্ত লোকজনকে গাজায় অবাধে ঢুকতে দেওয়ার আহবান জানাচ্ছে। গত মাসে ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজায় বিমান হামলা চালায়। গাজা থেকে হামাস পাল্টা রকেট হামলা চালায়। উভয় পক্ষে ১১ দিনের সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়। এ সময় ইসরাইলি হামলায় ৬৬ শিশুসহ ২৫৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। অপরপক্ষে হামাসের ছোঁড়া রকেটে ১২ জন ইসরাইলি প্রাণ হারায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সংঘর্ষের কারণে ৭৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুহারা এবং প্রায় ৩০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। ২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরাইল এই অঞ্চলের স্থল ও আকাশ সীমান্ত অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকায় প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস। বহির্বিশ্বের সঙ্গে গাজার যোগাযোগের একমাত্র পথ ‘রাফা ক্রসিং’, যা মিসর সুরক্ষা দিয়ে আসছে। এখানে ইসরাইলের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ডব্লিওএইচও’র শীর্ষ কর্মকর্তা ড. রিক পিপারকর্ণ বলেন, ফিলিস্তিনিদের জীবনমান খারাপের দিকে যাচ্ছে। সহিসংতার কারণে অধিকাংশ লোকেরই জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
এ ছাড়া করোনার মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য হুমকিও রয়েছে। ডব্লিওএইচও বলছে, দখলকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে ৩১ মে পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছে তিন লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ জন। মারা গেছে তিন হাজার ৭ ৬৫ জন। সম্প্রতি গাজায় করোনা শনাক্তের হার বেড়ে গেছে। ফিলিস্তিন অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে সংস্থাটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তার আবেদন জানালেও পাওয়া গেছে মাত্র ২৩ লাখ মার্কিন ডলার। আল-জাজিরা।