1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন

ক‌রোনা ভাইরাস-এখনই সর্বাত্মক উদ্যোগ না নিলে ভয়াবহ প‌রি‌স্থি‌তি হবে

নাগ‌রিক খবর ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১
  • ৩৭৯ বার পঠিত

এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। কয়েক দিন ধরে ক্রমান্বয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় আমি উদ্বিগ্ন। এটা দুইভাবে হচ্ছে—সংক্রমণের সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ার হার দুটোই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অর্থাৎ অনেক লোকের মধ্যে সংক্রমণ হচ্ছে ও এটা দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে।

এখন যে সংক্রমণ হচ্ছে এর তিনটি বিষয় আমাদের ভাবাচ্ছে। প্রথমত, কয়েক মাসে সামাজিক সম্মিলন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। করোনা যতটা কমেছে, তার তুলনায় সামাজিক মেলামেশা বেড়েছে। অসংখ্য পৌরসভায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করেছে। সেখানে সংক্রমণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর ব্যক্তিগতভাবে বিয়ে, বন্ধুবান্ধবের মিলিত হওয়া, স্থানীয় পর্যটন রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। যেমনটা আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি কক্সবাজারে। কারও মধ্যে সংক্রমণ থাকলে তা আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, এই ভাইরাস, সংক্রমণের বৈশিষ্ট্য, যেমন দ্রুতগতিতে ছড়ানো, কম বয়সীদের আক্রান্ত হওয়া, তাদের জটিলতার মাত্রা বেশি হওয়া—এগুলো ইউকে (যুক্তরাজ্য) ভেরিয়েন্টের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলে যায়। ইউকে থেকে বহু অভিবাসী মানুষ এসেছেন, যাঁদের ক্ষেত্রে যথার্থ কোয়ারেন্টিন মানা হয়নি। কখনো তিন দিন, সাত দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে, যেখানে তা ১৪ দিন হওয়ার কথা। ইউকে ভেরিয়েন্ট অন্যান্য অনেক দেশে ছড়িয়ে গেছে। কাজেই বিভিন্ন দেশ থেকে যাঁরাই এসেছেন, আমাদের দেশে তাঁরাই নিয়ে এসেছেন। আমাদের দেশে সীমিত আকারে যে জেনোম সিকোয়েন্সিং হয়েছে, সেখানে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি রয়েছে। জানুয়ারিতে ভ্যারিয়েন্ট আসার পর দেশে (সরকারের পক্ষ থেকে) কোনো ঘোষণা আসেনি। এই মার্চের পর থেকে ১৮ দফা ছাড়া বড় কোনো উদ্যোগ দেখিনি। উদ্যোগ না নেওয়ার ফলে এই ভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে গেছে। আজ যে পাঁচ হাজার শনাক্ত পাওয়া গেছে, এটা কয়েক গুণ করলে যে প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যাবে, সেটা ভয়ানক। যেমন বহু লোক সংক্রমণ থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না।

এ ছাড়া, সংক্রমণের লক্ষণগুলোও এক রকম না। যেমন শ্বাসকষ্ট থাকলেও উনি বুঝতে পারছেন না। এটা আমার কাছে আশঙ্কার বিষয় বলে প্রতিফলিত হচ্ছে। এ যাবৎকালে বাংলাদেশে আজ সর্বোচ্চ সংক্রমণ। এখন প্রশ্ন, এটা কত দূর যাবে? ভারতে গতকাল বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ভারতের যে যোগাযোগ হচ্ছে, হবে, তার ব্যাপক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে। আমরা অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের স্বাভাবিক দিনকাল ব্যাহত হতে যাচ্ছে। আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থায় বিপর্যয়কর অবস্থার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি।  আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছি আজকের খবর শোনার পর। শঙ্কা কাজ করছে।

ডাক্তার-নার্সরা এখন ক্লান্ত। এ অবস্থায় যদি এটা হ্রাস করতে না পারি, তাহলে সামনে খারাপ অবস্থা দেখা দিতে পারে। অবস্থা সামাল দিতে গেলে কী করা যায়, তা ভাবছিলাম। আমার কিছু প্রস্তাব ১৮ দফায় এসেছে। এখানে এমন কিছু জিনিস আছে যা কাজ করবে না। আমাদের যে পরিস্থিতি তাতে ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা উচিত এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে প্রধান করে করোনা মোকাবিলা কমিটি গঠন করা উচিত, যে কমিটি প্রভূত ক্ষমতা নিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার আওতায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে। স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থাগুলোর মধ্যে তারা দোকান, রেস্তোরাঁ, অফিস বন্ধ করার ক্ষমতা রাখবে।

চলাচল সীমিত রাখার ক্ষমতা রাখবে এবং যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্যসেবা দান বা রোগী ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করতে আদেশ দিতে পারবে। তারা এই সমস্যা মোকাবিলায় জরুরি অর্থের থোক বরাদ্দ পাবে এবং বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের করোনা মোকাবিলায় নিয়োজিত রাখার ক্ষমতা রাখবে। যেকোনো কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন সেন্টার, হোটেল বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে খণ্ডকালীন বা অস্থায়ী হাসপাতাল, কোয়ারেন্টিন সেন্টার বা আইসোলেশন সেন্টারে রূপান্তর করার ক্ষমতা রাখবে।

আমরা যদি রোগী শনাক্ত করতে পারি, সংক্রমণের সম্ভাব্য সময়কালে আইসোলেশনে রাখতে পারি, তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পারি, তাঁদের কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারি, তাঁদের মধ্যে ব্যাপক পরীক্ষা করতে পারি, রেড জোন এলাকায় চলাচল সীমিত রাখতে পারি এবং বাইরে থেকে প্রয়োজনে বিমান বন্ধ রাখা এবং বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের অত্যাবশ্যকীয়ভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারি, পাশাপাশি দলমত-নির্বিশেষে সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এই করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রমে যুক্ত করে একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে ঝাঁপিয়ে পড়া যায়, তাহলে কেবল করোনার ভয়াবহ থাবা থেকে আমরা আমাদের দেশকে রক্ষা করতে পারব।

টিকার বিষয়টা এখন ঝুলে যাবে। আমরা তৃতীয় চালানটি পাচ্ছি না। এটি মে-জুনে চলে যাবে। দ্বিতীয় ডোজ এপ্রিলের মধ্যে দিয়ে দিতে পারলে মে মাসের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ লাখ সুরক্ষা পেতে পারত। সম্মুখসারির ব্যক্তিদের ঝুঁকিটা কমাতে পারতাম। তাদের দিতে না পারলে জুন পর্যন্ত ৩ মাস মানুষের ঝুঁকি কমাতে পারছি না। যেহেতু ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে গেছে, তাই তারা টিকা রপ্তানি করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। দিলেও সেটা হয়তো টোকেন আকারে হবে। কাজেই টিকাতেও আশার আলো দেখছি না। সেটা একটা ঝুঁকির বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পেলে হয়তো-বা তাঁদের মৃত্যু হতো না বা সংক্রমিত হতো না। করোনা নিয়ে আমরা খারাপ অবস্থানে পৌঁছেছি। আমরা এখনই সর্বাত্মক উদ্যোগ না নিলে ভয়াবহ অবস্থার দিকে এগোতে পারি।                                                                                                                                                                                                       অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ

সাবেক পরিচালক, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com