ছোটবেলায় আমরা যখন খেলতাম, প্রায় প্রতিদিন সঙ্গীদের সাথে ঝগড়া হতো। হাতাহাতি মারামারি কদাচিৎ হতো। কেউ কেউ অবশ্য মুখেও কিছু না বলে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে প্রতিপক্ষকে লাথি দেখাত। কখনো দেখিয়ে দেখিয়ে থুঃ ফেলতো। বলা ভালো, সেসব কিছুই আরেকজনের গায়ে না লাগলেও এটা ছিলো প্রতিবাদ বা ঝগড়ার চূড়ান্ত পর্যায়। এবং প্রতিপক্ষের জন্য চরম অপমানের।
এসব চিন্তা করলে আজ হাসি পায়। চিন্তার প্রসঙ্গে বরং বলি
আমরা আজকাল চিন্তা করা ছেড়েই দিতে চাই একরকম। আমাদেরকে অথর্ব, চিন্তাবিমুখ বানিয়ে রাখার স্পষ্ট কার্যক্রম যখন রাষ্ট্র স্বয়ং হাতে তুলে নিচ্ছে তখন চিন্তায় কেবলি দুঃচিন্তা বাড়ে আপনজনদের।
তাই আজকাল দেশে অবস্থান করে চিন্তা করার দুঃসাহস অনেকেই আর দেখান না।
নিরাপদ দূরে গিয়ে, অর্থাৎ দেশের বাইরে ইউরোপ আমেরিকা নিদেনপক্ষে সৌদি আরব থেকে চিন্তা কিছু যাও বা আসে তা ফেসবুকে সামান্য ঢেউ তুলে মিলিয়ে যায় মহাকালের শূন্য গহবরে। এসব কিছুটা যেন আমাদের সেই ছেলেবেলার ঝগড়ার মতো, নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে বকাঝকা করা।
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে দেশে অবস্থান করে চিন্তা করা এবং সরব হওয়া এখন দুঃসাহসই বটে!
খুব দ্রুতই বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। কোথায় গিয়ে থামবে কেউ জানে না।
তাই মানুষ পালাচ্ছে। যার পালানোর সাহস আছে, খুব তাড়া আছে, পথ খুঁজে পাচ্ছে, যে যেভাবে পারে পালাচ্ছে।
এই পলায়ন বেগমপাড়া কিংবা সাহেবপাড়া বানিয়ে নয়। শ্রমিক হয়ে, উদ্বাস্তু হয়ে, আশ্রয়ের আশায়, শুধু একটু মানুষের মত বেঁচে থাকার আশায় মানুষ পালাচ্ছে। সন্তানের জন্য পালাচ্ছে। উত্তমপুরুষের জন্য পালাচ্ছে।
চারিদিকে তাকিয়ে চোখ ফেটে জল গড়াতে চায়।
রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে যখন দেখি একজন মানুষ পতাকার ফেরিওয়ালাকে ডেকে দাঁড় করিয়ে হাতের ফোনে ছবি তুলছেন। ফেরিওয়ালাও নানান ভঙ্গিমায় পোজ দিচ্ছেন। এবং সেই দৃশ্য রাস্তায় ভীড় করে দাঁড়িয়ে সবাই দেখছেন। তখন মনে পড়ে এটা মার্চ মাস! হ্যা, এই আমাদের ৫০ বছর পূর্তির স্বাধীনতার মাস!
সেই সাথে মনে পড়ে, দেশে আছে আরো অনেক ফেরিওয়ালা! তারাও লালসবুজ পতাকাটাকে পুঁজি করে নানা ভঙ্গিমায় ছবি তুলে যাচ্ছেন।
আমরা অথর্ব, কর্মহীন, চিন্তাশক্তিরহিত মানুষ ভীড় করে সেই কর্মযজ্ঞ দেখছি। দেখেই চলেছি।
লেখক:
রুবায়েত হোসেন