আমাদের দেশের অবস্থা এমন হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে কোন নিয়ম-নীতি বা আইন-কানুন মেনে চলতে হয় না । প্রায় সকল ক্ষেত্রেই আমরা আইন বা বিধি-বিধান লংঘনের এক উদ্ভট মানসিকতা দেখতে পাই। যার যা খুশি সে তার মত চলেন অবলীলায়। এইসব ক্ষেত্রে তদারক বা মনিটর করার জন্য বেতনভুক লোকজনের অভাব না থাকলেও দেদারসে আইন ভাঙ্গবার প্রতিযোগিতা চলে তাদের নাকের ডগাতেই। অথচ, ঐ বেতনভুক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেখেও দেখেন না বা শুনার পরও কিছু শুনতে চায় না। গত রবিবার দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত ‘ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মরণ ফাঁদ-স্পিড ব্রেকার’ শীর্ষক খবরটি এই কথাটিই সকলকে জানান দিচ্ছে যে, নিয়ম-নীতির কোন তোয়াক্কা না করে একশ্রেণীর প্রভাবশালী ও স্বার্থান্বেষী মহল কিভাবে জনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। তাদের এই ধরনের কার্যকলাপের কারণে স্পিড ব্রেকারগুলি মরণ ফাঁদে পরিণত হলেও এগুলোর প্রতি কারও যেন কোন প্রকার ভ্রূক্ষেপ নাই। প্রকাশিত খবরটিতে বলা হয়েছে যে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়কগুলোতে স্পিড ব্রেকারগুলোকে কেন্দ্র করে ভাসমান হাট-বাজার গড়ে উঠায় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাক্রেমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই কারণে অনেক মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে।সারা দেশেই যত্রতত্র প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে স্পীড ব্রেকার দিয়ে দুর্ঘটনা বাড়ছে। মহাসড়কের দুর্ঘটনা রোধে কয়েক মাস পূর্বে ঐসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হলেও কার্যক্ষেত্রে কিছুই করা হয় না। বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে গৌরনদী পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়কের উপর দুই ডজন স্পিড ব্রেকার রয়েছে। এ অনুযায়ি দুই কিলোমিটার পর পর একটি করে স্পিড ব্রেকার রয়েছে পথে ।সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে স্পিড ব্রেকার রাখা হয় কিন্তু সেইক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন থাকার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার পর পরই স্থানীয়দেরকে স্পিড ব্রেকার নির্মাণের জন্য আন্দোলনে নামতে দেখা যায়, ঐ স্পিড ব্রেকার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা নির্ণয় করা হয় না। জনসাধারণই প্রধানত ক্ষোভের বসেই ঐ স্পিড ব্রেকার নির্মাণের দাবি তোলে এবং উহা নির্মান হওয়ার পর স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এটাকে কেন্দ্র করে হাট-বাজারের সৃষ্টি করে এবং ইজারার বন্দোবস্ত করে টুপয়সা হাতিয়ে নেয়। অথচ, স্পিড ব্রেকারের আশ-পাশে বাজার বা হাট বসার কারনে যানবাহনের গতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। হাট-বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা ঐস্থানে বেচা-কেনায় ব্যস্ত থাকলে মনঃসংযোগ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়ে থাকে। তাহাছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি দখল করে অনেকে স্থায়ী স্থাপনাও স্পিড ব্রেকারের পার্শ্ববর্তী এলাকায় গড়ে তোলেন।যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্পিড ব্রেকার দেওয়া হয়, তা যদি হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায় তাহলে নিশ্চয়ই সেই স্পীড ব্রেকার সেইস্থানে রাখা যাবে না। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে যারা স্পিড ব্রেকার স্থাপনপূর্বক কিংবা অস্থায়ী হাট-বাজার বা স্থায়ী স্থাপনা গড়ে তোলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়। জনসাধারণের ও যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রন করার জন্য এইসব অপ্রয়োজনীয় স্পিড ব্রেকারের যেমন উচ্ছেদ প্রয়োজন তেমনি আবার প্রয়োজনীয় স্পিড ব্রেকারগুলির ক্ষেত্রে চিহ্ন-সংকেত বা সিগন্যাল থাকাটাও অতীব জরুরি। মহাসড়কে এতএত স্পিড ব্রেকার অথচ এ ব্যাপারে কোন সংকেত বা চিহ্ন না থাকায় অতিরিক্ত গতিতে আসা যানবাহন নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে দর্ঘিটনার সম্মুখীন হতে হয়।