করোনাকাল : শ্বাসকষ্ট
করোনাকালে শ্বাসকষ্ট শব্দটা শুণলেই শিরদাঁড়া দিয়ে হিমশীতল স্রোত বয়ে যায় ।কোভিড ১৯
সংক্রমণের এক মারাত্মক উপসর্গ শ্বাসকষ্ট ।আর এই কারণে কত অল্পবয়সী মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন তার ঠিক নেই ।তবে একথাও ঠিক যে শুধুমাত্র মহামারী সৃষ্টিকারী ভাইরাস ছাড়াও নানা কারণে শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হতে পারে ।এটি ফুসফুস সংক্রান্ত মারাত্মক একটি উপসর্গ হলেও দ্রুত চিকিৎসা না করালে অবস্থা সংকটজনক হয়ে ওঠার ঝুঁকি প্রবল ।যেমন অতিরিক্ত কাশি ,কাঁশতে কাঁশতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া ,জ্ঞান হারিয়ে ফেলা,কাঁশির সঙ্গে রক্ত ,শ্বাসকষ্ট হতে হতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এইসব উপসর্গ হলে জরুরিভাবে নিকটস্থ হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে ।যাদের অ্যাজমা ও ফুসফুসের ক্রণিক অসুখ সিওপিডি আছে এই রোগীর আচমকা তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে ।বিশেষ করে এদের যদি কোভিড ১৯ এর সংক্রমণ কিংবা সাধারণ ফ্লু হয় ,তার থেকেও রেসপিরেটরি ইমারজেন্সির ঝুঁকি থাকে ।এই রোগীদের শ্বাসকষ্ট নিয়ণ্ত্রণের জন্য ইনহেলার দেয়া হয়ে থাকে ।আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হলে এই ইনহেলার ৬ থেকে ৮ বার নিতে হবে
এক ঘন্টার মধ্যে ।তাতেও যদি শ্বাসকষ্ট না কমে অবশ্যই হাসপাতালের নিয়ে যাওয়া উচিত ।
করোনার এই সময়ে এআরডিএস অর্থাৎ একিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রমের প্রবণতা বেশি পাওয়া যাচ্ছে ।এমনিতেই কোভিড ১৯ সংক্রমণ হলে এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে ।যাদের দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের অসুখ আছে তাদের এআরডিএস এর ঝুঁকি বেশি ।ডেঙ্গু বা ব্যাকটেরিয়াল
নিউমোনিয়া হলেও ফুসফুসের সুক্ষ রক্তজালিকা থেকে তরল নি:সৃত হয়ে ফুসফুসের বাতাস ভর্তি ছোট থলি এ্যালভিউলাইতে গিয়ে জমে যায় ।ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের সম্পূর্ণ গতি ব্যাহত হয়ে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় ।প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হতে হতে রোগী একসময় নেতিয়ে পড়ে ।এক্ষেত্রে প্রাণ বাঁচাতে জরুরিভিত্তিতে অক্সিজেন দেয়া দরকার ।প্রোণ পজিশনে ,অর্থাৎ রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে রেখে অক্সিজেন দিলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে ।
কোভিড ১৯ সংক্রমিতদের মধ্যে যাদের সাইটোকাইন স্টর্ম হয় ,রোগের শুরুতে চিকিৎসা হয়নি কিংবা ভাইরাল লোড খুব বেশি তাদের এআরডিএস এর ঝুঁকি থাকে ।এছাড়া অন্যান্য ভাইরাল অসুখেও এআরডিএস এর আশংকা থাকে ।এই সমস্যা হলে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের অভাব পূরণ করা দরকার ।
এই সময়ে কোভিড ১৯ এর সংক্রমণের কারণে পালমোনারি এম্বোলিজমের ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে ।এর ফলে জমাট বাঁধা রক্তের দলা ফুসফুসের ধমণীতে আটকে গিয়ে মারাত্মক প্রাণঘাতী সমস্যার সৃষ্টি করে ।এই সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসা না করলে রোগীর প্রাণ বাঁচানো কঠিন হয়ে যায় ।
পালমোনারি এম্বোলিজম এর উপসর্গ হিসেবে বুকে ,গলায় ও কাঁধে ভয়ানক ব্যাথা করে দম আটকে আসার অনুভূতি হয় ।শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয় ,হ্রদ স্পন্দন বেড়ে গিয়ে রোগী জ্ঞান হারাতে পারে ।বড় ধমণীতে জমাট রক্তের দলা আটকে গেলে ১০ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে বাঁচানো কঠিন হয় ।বসে বসে কাজ ,বেশি ওজন ,দীর্ঘ সময় শুয়ে বসে কাটালে ,অলস জীবন যাপন কারীদের এই সমস্যার ঝুঁকি বেশি থাকে ।সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন ।যে কোনও ধরণের অসুস্থতায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায় ।
মনে রাখা দরকার বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারির ব্যাপকতা এখনও কমেনি ।এবং মহামারির ব্যাপকতা সবচেয়ে পরে টের পায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ।এই অন্চলে প্রথম করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হয় গত ২৯ জানুয়ারি ভারতে ।আর সবার পরে গত ০৮ মার্চ করোনা সনাক্ত হয় বাংলাদেশ এবং ভুটানে ।শুরুর দিকে দেশগুলোর মধ্যে সংক্রমণের শীর্ষে ছিলো পাকিস্তান ।০২ এপ্রিল থেকে শীর্ষে আছে ভারত ।এখন দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ ।সমগ্র এশিয়ায় চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশ ।
দিন যত যাচ্ছে ,নতুন এই করোনা ভাইরাসও এর সংক্রমণের প্রকৃতি সম্পর্কে তত জানতে পারছেন বিজ্ঞানীরা ।করোনার টিকা আবিষ্কার এখন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ।তাই আবিস্কৃত টিকা আন্তর্জাতিক বাজারে এসে গেলে তা কীভাবে প্রথমেই বাংলাদেশে নিয়ে আসা যায় ,তার বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনই গ্রহণ করা প্রয়োজন ।
আপাতত: ঘরে থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি সমূহ মেনে চলুন এবং সুস্থ থাকুন ।
লেখক
ডা.মজিব রাহমান
পরিচালক
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল