1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

অ্যান্টিবায়োটিকের অ‌তি‌রিক্ত ব্যবহার আনতে পারে আগামীর মহামারি

নাগ‌রিক খবর অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩
  • ১৬৮ বার পঠিত

অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরেও শরীরে ব্যাকটেরিয়ার টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জনকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলা হয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ রোগের চিকিৎসা নেওয়া অনেক ব্যক্তির মধ্যে এই অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স দেখা দিয়েছে। এর ফলে রোগীর আগে যে অ্যান্টিবায়োটিকে রোগ সারতো, এখন আর সেটি কাজ করছে না। শুধু বাংলাদেশ নয়, এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্যের শীর্ষ ১০টি হুমকির মধ্যে একটি হলো অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর)।

আজ ৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে। এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ফলে চিকিৎসা ব্যয় অতিমাত্রায় বেড়ে যায়, হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয় এবং মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। বিশ্বকে জরুরিভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ এবং ব্যবহারের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। এমনকি যদি নতুন ওষুধ তৈরি করা হয়, আচরণগত পরিবর্তন ছাড়া— অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ একটি বড় হুমকি হিসেবে থেকে যাবে।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু) সমস্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে এসব ওষুধ প্রয়োজনীয় কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বল্প তীব্রতার অসুস্থতায়ও প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। এছাড়া হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু ও মাছের খামারসহ বিভিন্ন খাদ্যে নানাভাবে অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধের যথেচ্ছ প্রয়োগেও মানবদেহে নানা ধরনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রবেশ করছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গবেষণা থেকে জানা যায়, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বেশ কিছু রোগের জীবাণুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ঠিকমতো কাজ করছে না। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এএমআর সার্ভিল্যান্স হালনাগাদ গবেষণায় মোট ২৭ হাজার ৪৩৮ জন রোগীর বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। পরীক্ষায় ৮ শতাংশ জীবাণুর মধ্যে সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা পাওয়া যায়।

অপরদিকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) বৈশ্বিক প্রভাবের প্রথম বিস্তৃত বিশ্লেষণে অনুমান করা হয়েছে যে, প্রতিরোধের কারণে ২০১৯ সালে প্রায় ১৩ লাখ মিলিয়ন মৃত্যু হয়েছিল, যা এইচআইভি/এইডস বা ম্যালেরিয়ার কারণের মৃত্যুর চেয়ে বেশি। এছাড়া অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল-প্রতিরোধী সংক্রমণ প্রায় ৫০ লাখ মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো— বিনা প্রেসক্রিপশনে ঘনঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, পুরো কোর্স শেষ না করে মাঝপথে খাওয়া বন্ধ করা। প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ। ভাইরাসজনিত যে অসুখ একটি নির্দিষ্ট সময় পর সেরে যেতো, সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া। এছাড়া আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাচ্ছি— তা থেকেও শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করছে।

অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে সরকার পুরনো আইন সংশোধন করেছে। প্রস্তাবিত ‘ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩’-এ বলা হয়েছে, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। কোনও কোনও ওষুধ এ ক্ষেত্রে বিক্রি করা যাবে না, তাও খসড়া আইনে বলা আছে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক‘চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিশ্বের কোথাও ফার্মেসি থেকে কাউকে ওষুধ দেয় না। কিন্তু বাংলাদেশে এমন নিয়ম মানা হচ্ছে না। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই লোকজন অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে পারছেন। এতে দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। যে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই তাও ব্যবহার করা হচ্ছে।’

যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনা বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণকে জানাতে হবে যে, যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। খাওয়ার আগে চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান ও হেপাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে রেশনাল হতে হবে। স্পেসিফিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আমরা ব্যপকভাবে ব্যবহার করছি। রোগীও ভালো হয়ে যাচ্ছে, সবাই খুব খুশি। কিন্তু তাতে করে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া এক্সপোজ হয়ে যাচ্ছে, মিউটেশন করছে এবং ওইসব অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পোল্ট্রি খাতে কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে ব্যবহার হচ্ছে। আমরা মুরগির মাংস ও ডিম খাচ্ছি। তার মাধ্যমেও আমাদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিক হয়তো খায়নি, কিন্তু রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখেছি যে, আইসিইউ’র রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কাজ করে না। যার ফলে রোগী মারা যাচ্ছে।

এ কারণে সামনে একটা বড় ক্রাইসিস দেখা দিতে পারে। ঠেকানোর জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। লাগামহীনভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। চিকিৎসকদের সঙ্গে প্র্যাকটিসের বিষয় আছে, কৃষি খাতেও কাজ করা জরুরি এ নিয়ে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com