করোনা প্রতিরোধের পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য টানা ৬৬ দিন লকডাউন শেষে গত ৩১ মে থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরু এবং ১ জুন থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে বলা হয়েছিল প্রজ্ঞাপনে। শর্ত ছিল, সীমিতসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করতে হবে বাস। এই নিয়মে যাত্রীসেবা দিতে গিয়ে পরিবহন মালিকদের ক্ষতি পোষাতে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
করোনা সংকটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে শুরুর দিকে সীমিত যাত্রী বহন এবং স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা অনুসরণ করা হয় বাস ও মিনিবাসে। এরপর ক্রমে যাত্রীর চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের মতোই অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। কিন্তু বাড়তি ভাড়া আর কমানো হয়নি। রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় ৬০ শতাংশের পরিবর্তে ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ঈদের ছুটিতে দেখা গেল, বাসমালিকেরা ভাড়া বাড়ালেও যাত্রী পরিবহন করছেন আগের মতোই। বাসে কোনো আসন খালি রাখা হচ্ছে না। কোনো কোনো পরিবহন সংস্থা বাস ভাড়া শতভাগ বাড়িয়েছে। এর ফলে মালিকেরা দুভাবে লাভবান হয়েছেন। যাত্রী নিয়েছেন দ্বিগুণ আর ভাড়াও নিয়েছেন বেশি। অন্যদিকে বেশি ভাড়া দিয়েও যাত্রীদের চলাচল করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্য দিয়ে।
গত কিছুদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, প্রতিটি বাসে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে আসনও দ্বিগুণ। এ নিয়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাননি, ক্ষেত্রবিশেষে নাজেহালও হচ্ছেন অনেকে।
মোটকথা, করোনা পরিস্থিতির সুযোগে ভাড়া নিয়ে সীমাহীন নৈরাজ্য চলছে। প্রথমদিকে যাত্রী কম ছিল, বাসে স্যানিটাইজারও দেওয়া হতো। কিন্তু এখন কিছুই নেই, দাঁড় করিয়ে যাত্রী নিচ্ছে। তাই এমতাবস্থায় পরিবহন সংস্থাগুলোকে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিলে অবশ্যই আসন খালি রাখতে হবে। আবার নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করলে আগের নিয়মেই ভাড়া নিতে হবে।
এটা কার্যকর করার দায়িত্ব বিআরটিএর। কিন্তু তারা বাসভাড়া বাড়িয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েই যেন তাদের দায়িত্ব সেরেছে। ফলে গণপরিবহনের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বিআরটিএ পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের প্রতি তাদের দায়িত্ব আছে, যাত্রীসাধারণের প্রতি কি তাদের কোনো দায় নেই?
মহামারি পরিস্থিতিতে যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে নাহ পারলে, এর ক্ষতিকর প্রভাব সারা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পরবে যা অনেকাংশেই আমরা উপলব্ধি করতে পারেছি। অন্যদিকে অনেক দিন টানা লকডাউনের ফলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের দুবেলা খাবার যোগার করতেই রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেখানে প্রয়োজনের তাগিদে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করতে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হলে সেটা অনেকাংশে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মত হয়ে দাড়িয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাই, যদি সম্ভব হয় অতিদ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে বাধ্য করুন এবং অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করুন।
এতে মহামারি পরিস্থিতি প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করা সম্ভব হবে এবং পাশাপাশি সাধারণ মানুষ নিরাপদে যাত্রা করতে সক্ষম হবে। যদি অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা একান্তই নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে অতিদ্রুত অতিরিক্ত বাস ভাড়া কমিয়ে পূর্বের ভাড়া পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সুত্র: জাগো নিউজ