1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রানা, ও মেহেবুব হোসেন রিপনের নেতৃত্বে এক বিশাল র‍্যালি গোপালগ‌ঞ্জে দিনমুজুর‌কে হত্যা মামলায় গ্রেফতার, নবজাতক দুই বোন নিয়ে দিশেহারা ছোট ভাই শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ কর‌তে হ‌বে, না করলে প্রশাসক নিয়োগ হ‌বে- সাখাওয়াত বাংলাদেশ থেকে জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে নিবে আজারবাইজানে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সিপিজের খোলা চিঠি ড. ইউনুসকে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম গ্রেফতার শপথ নিলেন নতুন তিন উপদেষ্টা কু‌মিল্লায় ডাকাতির নাটক সাজিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতিজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ক‌রে চাচা রাজধানীর কাকরাইলে সভা সমা‌বেশ নি‌ষিদ্ধ

প্রদীপ‌দের নিচেই অন্ধকার – প্রভাষ আ‌মিন

‌ডেস্ক নিউজ:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০
  • ২৭০ বার পঠিত
প্রভাষ আ‌মিন

আমার ছাত্র জীবনের বেশিরভাগ জুড়েই ছিল সামরিক শাসন- প্রথমে জিয়ার, পরে এরশাদের। তবে এরশাদেরটাই বেশি- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে বিস্তৃত। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সময় ক্লাশরুমের চেয়ে রাজপথে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেই বেশি কেটেছে। আর রাজপথে আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল পুলিশ। দফায় দফায় পুলিশের সাথে মারামারি, পুলিশী নির্যাতনের শিকার হওয়ার স্মৃতি।

আমরা আসলে পুলিশকে ‘ঠোলা’ ছাড়া কিছু বলতামই না। তখন মনে হতো, পুলিশই বুঝি আসল শত্রু। শুধু এরশাদবিরোধী আন্দোলন নয়, রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশকে বরাবরই গণশত্রু বানিয়ে রেখেছে। পুলিশ বরাবরই ভিলেন। ৫২র একুশে ফেব্রুয়ারি গুলি করেছে কে? পুলিশ। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে গুলি করেছে কে? পুলিশ। এমন হাজারটা উদাহরণ দেয়া যাবে। তবে যত বুঝতে শিখেছি, আমার কাছে ততই দেখেছি, পুলিশ আসলে রাষ্ট্রযন্ত্রের অস্ত্র। পুলিশ সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়ন করে মাত্র। এটাই তাদের চাকরি। এখন দেখেশুনে পুলিশকেই আমার সবচেয়ে অসহায় মনে হয়। সরকারের নির্দেশে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও কত অন্যায় করতে হয়।

একে তো সরকারের অন্যায় কাজ করতে হয়, আবার উল্টো দিকে জনগণের গালি শুনতে হয়। পুলিশকে গালি দেয়া সবচেয়ে সহজ। আমরা সবাই উঠতে বসতে পুলিশকে গালি দেই। আমি জানি পুলিশকে গালি দেয়ার একশো একটা ন্যায্য কারণ আছে। পুলিশ ঘুষ খায়, পুলিশ দুর্নীতি করে, পুলিশ হয়রানি করে; অভিযোগের শেষ নেই। কথায় বলে, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। পুলিশের হাত অনেক লম্বা। চাইলেই পুলিশ যে কাউকে, সত্যি সত্যি যে কাউকে হেনস্তা করতে পারে। সবচেয়ে পরহেজগার মানুষের ঘর থেকেও বিদেশী মদের বোতল বা গাজা উদ্ধার করতে পারে পুলিশ। কারণ যেটা উদ্ধার করবে বলে ঠিক করে, সেটা সাথে করে নিয়ে যায়।

পুলিশ আসলে কোনো ঝুঁকি নেয় না। আর প্রায় সব মামলায়ই কিছু অজ্ঞাতনামা আসামী থাকে। কাউকে আটক করে, তেমন কোনো একটা মামলায় গ্রেপ্তার দেখালেই হলো। আর একবার কোনো মামলার আসামী হলেন মানে পুলিশের খাতায় নাম উঠলো; মানেই আপনার জীবন বরবাদ। গ্রেপ্তার করে টাকা আদায়, এ তো মামুলি ঘটনা। তবে এতসব অভিযোগ সত্বেও আমি এখন আর পুলিশকে ঢালাও গালি দেই না। আমি জানি সব পেশার মানুষদের মধ্যেই অনিয়ম আছে, দুর্নীতি আছে, বিচ্যুতি আছে। পুলিশের যেহেতু মানুষের ক্ষতি করার সুযোগ বেশি, তাই তাদের মধ্যে দুর্নীতিও বেশি। পুরো দেশই যেখানে দুর্নীতিগ্রস্থ, সেখানে পুলিশকে আলাদা করে গালি দিয়ে লাভ কী। পুলিশকে ঢালাও গালি তো দেইই না। উল্টো পুলিশের প্রতি আমার বিশেষ সহানুভূতি। পুলিশ যেভাবে দিনের পর দিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দায়িত্ব পালন করে; তেমনটা আর কেউ করে না। ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বোমাবাজি, মারামারি- সবসময় পুলিশ সবার আগে। আপনি যে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমান, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ জেগে থাকে। পুলিশের চাকরি সত্যিকার অর্থেই ২৪ ঘণ্টার। তাদের কর্মঘণ্টার কোনো হিসাব নেই, ছুটির কোনো মা-বাপ নেই। পুলিশ লাইনে যে পরিবেশে তারা থাকেন, দেখলে আপনিও গালি দেয়ার আগে দুবার ভাববেন। তবে আগে যাই হোক, করোনার সময় পুলিশের মানবিক রূপ দেখে আমার সব ধারণা বদলে গেছে। করোনার সময় ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে আমরা ডাক্তারদের অনেকে প্রশংসা করেছি। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমরাও অনেকের প্রশংসা পেয়েছি। কিন্তু আমি মনে করি, সত্যিকারের ফাইটার হলো পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। আমরা সবাই যখন ভয়ে ঘরে ঢুকে খিল এটেছি, তখনও পুলিশ রাস্তায় ছিল।

শুরুর দিকে কোনোরকম সুরক্ষা ছাড়াই পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে এবং অনেকেই করোনসা আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন। করোনা রোগী সন্দেহে কেউ যখন রাস্তায় পড়ে থেকেছেন, তখন আর কেউ এগিয়ে না এলেও পুলিশ ঠিকই এসেছে। এমনকি করোনা সন্দেহে সন্তানেরা যখন মাকে জঙ্গলে ফেলে গেছে, তখনও তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশই। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ বাহিনী অসমসাহসিকতার সাথে প্রতিরোধ গড়েছিল, তার কোনো তুলনা নেই। সে কারণেও আমি পুলিশকে স্যালুট জানাই। আর এবার করোনার পর এই ‘আনসাং হিরো’ পুলিশের জন্য আমার গভীর ও আন্তরিক ভালোবাসা। তবে আগেই যেমন বলেছি, দুর্নীতিগ্রস্থ দেশে পুলিশও ধোয়া তুলসিপাতা নয়।

তাদের হাতে অস্ত্র আছে, আইন আছে। আর অস্ত্র-আইনের বেশুমার অপপ্রয়োগে তারা দুর্নীতির রাস্তা প্রশস্ত করে। পুলিশে দুর্নীতিবাজ বেশি, কিন্তু সবাই তো আর দুর্নীতি করেন না। তেমন হলে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম না। পুলিশও বেছে বেছে তাদের গল্পগুলো সাজায়। পুলিশ যখন ক্রসফায়ারের নামে কাউকে হত্যা করে এবং তার নামে ১০টি মামলার তালিকা প্রকাশ করে; আমি নিশ্চিন্তে পাশ ফিরে শুয়ে ভাবি, ১০ মামলার আসামীকে মেরে ফেলে ঠিক কাজটিই হয়েছে। মাঝে মাঝে পুলিশের ভুল হয়ে যায়। তখন আমাদের সুশীল মনোজগতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু দুদিন পর সেই ঝড় থেমে যায়। পুলিশ আবার ধরে ধরে নির্দোষ মানুষকে ক্রসফায়ারে দেয় আর মিথ্যা গল্প বানায়।

ওপরের নির্দেশ আর হাতে অস্ত্র থাকলে, কাউকে গুলি করে মেরে ফেলা ওয়ান-টু’র ব্যাপার। এটাতে কোনো বীরত্ব নেই, সাহসিকতা নেই। নির্দেশ পেলে কাল থেকে আনসারও ক্রসফায়ার এক্সপার্ট হয়ে যাবে। সন্ত্রাস দমনের অস্ত্র হিসেবে চালু হলেও ক্রসফায়ার আজ পুলিশের দুর্নীতির সবচেয়ে ধারালো ও কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। আগে মানুষকে ধরে এনে পিটিয়ে বা কোনো মামলায় চালানের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হতো। আর এখন ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয়। আগে মানুষ দাত-মুখ খিঁচে পুলিশের অত্যাচার সহ্য করতো। কিন্তু জীবন বাঁচাতে মানুষ জমি-জামা বিক্রি করে হলেও পুলিশকে টাকা দেয়। এখন ক্রসফায়ার হলো পুলিশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। ক্রসফায়ার করার জন্যও টাকা নেয়, না করার জন্যও নেয়। আগে মানুষ কাউকে মারার জন্য মাস্তান ভাড়া করতো, এখন পুলিশ ভাড়া করে। ‘তোরে ক্রসে দিয়া দিমু’ এটা এখন খুব কমন হুমকি।

ক্রসফায়ার হলো আসলে ঠাণ্ডা মাথার খুন। এভাবে কয়েক হাজার মানুষকে খুন করা হলেও কোনো বিচার হয়নি। বরং আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে সেই খুনের পক্ষে সিনিয়ররাও সাফাই গেয়ে সেই খুনি পুলিশকে আরো একটি খুনের দিকে এগিয়ে দেয়। একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ‘মোরাল হাই’ মানে উচ্চ নৈতিক মনোবলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিচারহীন, জবাবদিহিতাহীন অবাধ ক্রসফায়ারের মানে মানুষ খুনের সুযোগ পুলিশ বাহিনীর নৈতিক মনোবলকে শূন্যে নামিয়ে এনেছে। পুলিশ কার্যত এখন খুনে বাহিনী। পুলিশকে দিয়ে যখন আপনি একটা অন্যায় কাজ করাবেন, সে তখন আরো দশটা অন্যায় করে নেবে। ক্রসফায়ার হলো সকল অন্যায়ের গোড়া। ক্রসফায়ার মানে একগুচ্ছ অন্যায়ের সমাহার। প্রথমে ঠান্ডা মাথায় খুন, তারপর একটি ডাহা মিথ্যা গল্প, তারপর সেই খুনকে জায়েজ করার জন্য খুন হয়ে যাওয়া মানুষটির চরিত্রহনন। একই ফর্মুলা চলে আসছে বছরের পর বছর।

মেজর (অব.) সিনহার ক্ষেত্রে তার চরিত্র হনন করার সাহস পায়নি পুলিশ। এখন সবাই পড়েছে তার সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথের চরিত্র হননে। আর বাংলাদেশে নারীর চরিত্র হননের চেয়ে সহজ আর কিছু নেই। তার হাতে সিগারেট আর মদের বোতলসহ কিছু ছবি নেট দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক হলো, সেই ছবিগুলো প্রচার করছেন, পুলিশের সদস্যরাই বেশি। আর সেইসব ছবির নিচে যেসব নোংরা মন্তব্যের ঢল, প্রতিটির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হতে পারে। প্রথম কথা হলো, মেজর (অব.) সিনহাকে যেখানে খুন করা হয়, শিপ্রা সেখানে ছিলেন না। শিপ্রা সিগারেট খায় না মদ খায়, তাতে কার কী যায় আসে।

বাংলাদেশে সিগারেট খাওয়াও অপরাধ নয়, একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীর মদ খাওয়াও অপরাধ নয়। তাহলে তাকে কেন এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় করা হচ্ছে? যেহেতু পুলিশই এগুলো ছড়াচ্ছে বেশি। তাই ধরে নিচ্ছি, শিপ্রা এর প্রতিকার চাইতেও পুলিশের কাছে যেতে পারবে না। শিপ্রা মদ-সিগারেট খায়, এতে কিন্তু সিনহা হত্যা জায়েজ হয়ে যায় না। আমি একটা জিনিস বুঝি না, প্রদীপ আর লিয়াকতের মত খুনিদের বাঁচাতে পুলিশের অন্য সদস্যরা এমন উঠে পড়ে লেগেছেন কেন? ৭ জন খুনির বিচার হলে পুলিশের ভাবমূতি উজ্জ্বল হবে, বাহিনীর মোরাল হাই হবে। তাদের বাঁচাতে চাইলে বরং পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি আরো ক্ষুণ্ণ হবে।

পুলিশ বন্ধুরা কী বোঝেন না, করোনার সময় পুলিশের যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল, এই ৭ জন মিলে তা একদিনে ধ্বংস করে দিয়েছেন। পুলিশ সদস্যদের উচিত শিপ্রার চরিত্রহননে মনোযোগ না দিয়ে প্রদীপ-লিয়াকতদের বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু অতীতে আমরা দেখেছি, পুলিশ তাদের সদস্যদের অন্যায়-অপরাধ চাপা দিতেই বেশি ব্যস্ত থাকে। চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতুর হত্যার ঘটনায় এসপি বাবুল আক্তার পদত্যাগ করেছেন। মানে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। তার মানে এটা জলের মত পরিষ্কার, পুলিশ তদন্ত করে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে খুনের শাস্তি তো পদত্যাগ নয়। খুনের দায়ে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার এবং আইনের আওতায় আনা উচিত ছিল। তা না করায় অন্য পুলিশ সদস্যরাও মনে করতে পারে, বউকে মেরে ফেলাটা তেমন কোনো অপরাধ নয় পদত্যাগ করলেই পার পাওয়া যাবে। এটা একটা ভয়ঙ্কর ভাবনা। অবশ্য শুধু পুলিশ বাহিনীতে নয়, এই প্রবণতা অন্য সব পেশার মানুষের মধ্যেও আছে। কোনো সাংবাদিক অন্যায় কিছু করলেও আমরা তার পাশে দাড়াই। কোনো ডাক্তার ভুল কিছু করলেও সব ডাক্তার তার পাশে দাঁড়িয়ে যান।

এই প্রবণতা বন্ধ করা উচিত। অপরাধী সবসময় অপরাধী। তার শাস্তি হতেই হবে। এক-দুইজন অপরাধীর কারণে গোটা বাহিনী বা পেশার মর্যাদাকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া কোনো কাজের কথা নয়। আমি ভেবে পাই না, একটা লোক হাত ওপরে তুলে গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে একজন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ কী করে তাকে গুলি করতে পারে। এখন তো জানা যাচ্ছে, টেকনাফ থানার তখনকার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশেই লিয়াকত গুলি করেছিল। আসলে টেকনাফের পুলিশের কাছে ক্রসফায়ার ডালভাত। তাই কাকে মারছে, কেন মারছে; এসব ভাবতে হয় না। সরকার মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। এই নীতিতে টেকনাফ এলাকায় মানুষ মরছে, কিন্তু মাদক কমছে না। কমবে কীভাবে, ওসি প্রদীপের সাথে তো ইয়াবা বদির গলায় গলায় ভাব। আসলে মাদকচক্রের মূল নিয়ন্ত্রণ তো পুলিশের হাতেই। দরে না বনলে ক্রসফায়ার হয়। তাই মানুষ মরে কিন্তু মাদক কমে না।

গ্রেপ্তারের পর এখন ওসি প্রদীপের ঠিকুজি আবিষ্কার হচ্ছে। তার শত কোটির সম্পদের বিবরণ এখন পত্রিকার পাতায় পাতায়। মরা সাপ মারতে এক্সপার্ট সাংবাদিকরাই ওসি প্রদীপ নিয়ে অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করছেন। তার কোথায় কয়টা বাড়ি আছে, সব এখন সবার মুখস্থ। কিন্তু আপনারা কেউ কী বিশ্বাস করেন, প্রদীপ কুমার বিশ্বাসই বাংলাদেশের একমাত্র দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা। শুধু টেননাফ থানার ওসি নয়, বাংলাদেশের অধিকাংশ থানার ওসিই দুর্নীতিবাজ, ঘুষ খান। সবাই ছোটখাটো প্রদীপ।

টেকনাফে আয়ের সুযোগ বেশি। অন্য অনেক থানায় হয়তো আয়ের সুযোগ কম। এই যে পুলিশ ঘুষ খায়, এটাও কিন্তু একটা চক্রের অংশ। পুলিশে চাকরি পেতে ঘুষ লাগে, ভালো পোস্টিং পেতে ঘুষ লাগে। তো ঘুষ দেয়ার টাকাটা তুলতে হলেও তো তাকে ঘুষ খেতে হবে। খোঁজ নিয়ে দেখুন টেকনাফ থানায় পোস্টিং পেতে প্রদীপ কুমারকে কয় টাকা দিতে হয়েছে। প্রদীপদের নিচেই জমাট অন্ধকার। যুগের পর যুগ ধরে জমাট এই অন্ধকার দূর করতে আলোর প্রদীপ হাতে কাউকে এগিয়ে আসতে হবে।

সমস্যা হলো, আমাদের দেশে দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালনের বদলে উল্টো দুষ্টের পালন হয়ে আসছে। ২০১৭ সালেই প্রদীপের বিরুদ্ধে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। তখন যদি তাকে গ্র্রেপ্তার করা হতো, তাহলে মেজর (অব.) সিনহাসহ অন্তত ২০০ লোক প্রাণে বেঁচে যেতে পারতেন। গ্রেপ্তার তো হয়ইনি, বরং ক্রসফায়ার করার কৃতিত্বে প্রদীপ একাধিকবার পদক পেয়েছেন। যতদিন অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা না হবে, যতদিন দুষ্টের দমন নিশ্চিত না হবে, যতদিন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ না হবে; ততদিন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে না। পুলিশের ‘মোরাল হাই’ হবে না। বাহিনীর স্বার্থেই পুলিশের উচিত অভ্যন্তরীন নজরদারি বাড়ানো, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আইনের শামন প্রতিষ্ঠা করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com