সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা এক পোস্টকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোর শহরে মঙ্গলবার রাত থেকে ব্যাপক সহিংসতায় অন্তত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিবিসি এশিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসলামের নবী মোহাম্মদকে নিয়ে ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে ওই তিনজন ব্যক্তি মারা যান।
স্থানীয় একজন রাজনীতিবিদের আত্মীয় যিনি ফেসবুকে ওই ‘আপত্তিকর’ পোস্ট দিয়েছিলেন, তার বাড়ির সামনে বিক্ষুব্ধ মানুষজন তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে বলে বিক্ষোভ করছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, এক পর্যায়ে তারা যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের ওপর পাথর ছুঁড়তে থাকে।
ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে, সেই সঙ্গে ১১০ জন বিক্ষোভকারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে
ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ কমিশনার কমল পন্থ বিবিসিকে জানিয়েছেন, “গোটা শহরেই ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। এছাড়া ডি জে হাল্লি এবং কে জি হাল্লি – নামে শহরের দুইটি থানা এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।”
সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত ৬০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
বুধবার ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে বলে পুলিশ টুইট করে জানিয়েছে, পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাস এবং লাঠি চার্জের পরই কেবলমাত্র গুলি চালিয়েছে পুলিশ।পরে কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। কর্নাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালোর।পুলিশ কমিশনার মি. পন্থ বলেছেন, “থানার চারদিক থেকে বড় বড় পাথর ছুঁড়ে আক্রমণ করা হচ্ছিল। হঠাৎই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে কিছুটা সময় লেগেছে। কিন্তু চারদিক থেকে যেভাবে পাথর ছোঁড়া হচ্ছিল, গুলি চালানো ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না।”
রাতের ওই ঘটনার পরে বুধবার সকালেও দেখা গেছে থানার সামনে পুলিশের গাড়ি উল্টে পড়ে আছে, সেগুলি থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে।কয়েকটি গাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গেছে।
পুলিকেশিনগর থেকে নির্বাচিত জনতা দলের (সেকুলার) বিধায়ক এ শ্রীনিবাস মূর্তির ভাতিজা ওই আপত্তিকর পোস্টটি করেছিলেন, সেটি পরে সরিয়ে নেয়া হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে ওই বিধায়ক মি. মূর্তি সামাজিক মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমার মুসলমান ভাইদের কাছে আবেদন, একজন আইন ভঙ্গকারীর কারণে হানাহানি করবেন না। যা কিছুই হোক, আমরা সবাই ভাই। দোষীর শাস্তি হবেই। আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি। দয়া করে শান্তি বজায় রাখুন।”
পাশাপাশি কর্ণাটকের আমির-এ-শরিয়ত হজরত মৌলানা শাগির আহমেদও মুসলমানদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন শান্তি বজায় রাখার জন্য।
তিনি বলেছেন, “পুলিশ যখন বলেছে যে অবমাননাকর কাজটির জন্য যে দোষী, তার শাস্তি হবে, তখন শান্তি বজায় রাখাই উচিত। দয়া করে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। সরকার নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।”