1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কু‌মিল্লায় ডি‌বির পৃথক অ‌ভিযা‌নে ইয়াবা ফে‌ন্সি‌ডিল আটক ৩ আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত – এম সাখাওয়াত হোসেন দে‌শের প্রয়োজ‌নে বিএনসিসির সদস্যরা বিশাল শক্তি হিসেবে কাজ কর‌বে – সেনাপ্রধান কু‌মিল্লায় সাংবা‌দিক‌দের সা‌থে পু‌লিশ সুপা‌রের মত‌বি‌নিময় নারায়নগন্জ মহানগর বিএনপির র‍্যালিতে কৃষক দলের অংশগ্রহন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে নারায়ণগ‌ঞ্জে বিএন‌পির র‍্যালি গোপালগ‌ঞ্জে দিনমুজুর‌কে হত্যা মামলায় গ্রেফতার, নবজাতক দুই বোন নিয়ে দিশেহারা ছোট ভাই শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ কর‌তে হ‌বে, না করলে প্রশাসক নিয়োগ হ‌বে- সাখাওয়াত বাংলাদেশ থেকে জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে নিবে আজারবাইজানে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

‌জে‌লেপ‌ল্লির শিশু‌দের জীবনযুদ্ধ

নাগ‌রিক খবর অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১
  • ৩১৬ বার পঠিত

যে বয়সে হাতে থাকবে বই, কাঁধে থাকবে স্কুল ব্যাগ; সে বয়সে ওরা নদীর উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাছ ধরে। যে বয়সে হাসি-আনন্দে বেড়ে ওঠার কথা; সে বয়সে ওরা মাথায় বহন করে মাছের ঝুড়ি। এমন শিশুদের খোঁজ মেলে উপকূলের একাধিক জেলেপল্লিতে।

হাড়ভাঙা খাটুনির কাজে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে ওরা। সকাল-সন্ধ্যা কাজ করতে হয়। রাতে একটু ঘুম। এ যেন ওদের নিয়তির লিখন। এমন চিত্র উপকূলীয় জেলেপল্লির শিশুদের। জেলেপল্লির অধিকাংশ শিশু হয়ে ওঠে মৎস্যজীবী। মাছ ধরা, বিক্রি করা, ট্রলার বা নৌকা থেকে ঝুড়ি ভরে মাছ নামানো—সবই পারে। এসব কাজের পদ্ধতি শিখে নিতে হয়। এ শিক্ষা নিতে হয় পরিবার ও পেটের প্রয়োজনে। এভাবেই শিশু বয়সে শ্রমের জালে আটকে যায় জেলেপাড়ার অধিকাংশ শিশুর জীবন।

প্রখর রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-বন্যা, নদী বা সমুদ্রের ঢেউ ওদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। জেলেপল্লির শিশুদের কাঁধে থাকে সংসারের বোঝা। কখনো কখনো একটি শিশুই হয় পরিবারের কর্তা। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই ওদের মূলমন্ত্র। মাথায় ভবিষ্যতের চিন্তা কখনোই ভর করে না বর্তমানের তাড়নায়। পরিবারের সদস্যদের পেট ভরাতে কাজ করতে হয় প্রতিদিন। ওরা বোঝে, দরিদ্র পরিবারে যখন জন্ম হয়েছে; তখন খেটেই পেট চালাতে হবে। একটু আয়ের আশায় শিশুরা খুব কম বয়সেই বেছে নিচ্ছে কঠিন জীবন।

উপকূলীয় জেলা বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকার জেলে পরিবারের অসংখ্য শিশুর দিন কাটে এভাবে। এসব অঞ্চলে বসবাসরত জেলে পরিবারের শিশুরা ব্যস্ত সময় কাটায় নদীতে। জোয়ার-ভাটার সময় বুঝে জাল পাতা বা তোলা—সব কাজেই সামিল হচ্ছে। ফলে আনন্দ-বিনোদন তো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় বিশ্রামের সুযোগ নেই তাদের। জেলে নৌকায় বড়দের সঙ্গে শ্রম দিচ্ছে এমন শিশুর বয়স আট-পনেরো বছর। তারা এ বয়সেই পরিণত হয় একজন দক্ষ মাঝি বা জেলে রূপে।

নৌকা বা ট্রলারে কর্মরত শিশুরা বাবা, চাচা বা বড় ভাইয়ের সঙ্গে মাছ ধরতে যায়। কোনো কোনো সময় বাবার অনুপস্থিতিতে এসব শিশুরাই হয়ে ওঠে নৌকার প্রধান মাঝি। বাবা হাটে মাছ বিক্রি করতে গেলে উত্তাল নদীতে শিশুরাই নৌকার হাল ধরে।

দারিদ্র্যের কষাঘাত ওদের শ্রেণিকক্ষে যেতে বারণ করে। আর করোনা এ দরিদ্রতায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা। অনেকেরই স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে উপবৃত্তির টাকা, বিনা মূল্যের বই ওদের জন্যও বরাদ্দ থাকে। এসব অনুদান নিয়েও পরিবারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে কাজে নামে শিশুরা। স্কুলের হাজিরা খাতায় নাম থাকলেও দিন কাটে নদীর বুকে। পাঠ্যবইয়ের ছড়া-কবিতার বদলে মুখস্থ করতে হয় মাছের গোন (মৌসুম)। স্কুলে যাওয়ার বদলে যেতে হয় হাট-বাজারে। খেলতে মাঠে যাওয়ার বদলে বৈঠা নিয়ে যেতে হয় নদীতে।

বরগুনার বিষখালী নদীতে অসংখ্য শিশু প্রতিদিন মাছ ধরে। বড়দের মাছ ধরার সহযোগী হয় ইয়াসিন (১২), রাব্বি (১১), সাগরসহ (১২) অনেকেই। ওরা জাল টানা, কিংবা বৈঠা ধরার কৌশল শিখেছে ষোলোআনা।

বিষখালীতে চাচার সঙ্গে মাছ ধরছিলেন শিশু রাব্বি। রাব্বি জানায়, করোনার কারণে এখন এমনিতেই স্কুল বন্ধ। করোনার আগেও ঠিকমতো স্কুলে যাওয়া হতো না তার। স্কুলে না যেতে যেতে স্কুলের কথা এখন কম মনে পড়ে। লেখাপড়া আর হয়তো করা হবে না। জাল-নৌকার কাজ শিখে ফেলেছে, এতেই চলবে।

শিশু সাগর জানায়, তার বাবা বাসের সহকারী ছিলেন। মা এক বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। করোনা আসার পর মা-বাবা বেকার। তাদের ঘরে মোট পাঁচ জন সদস্য। মাছ ধরে মোটামুটি কিছু টাকা আয় হলে পেট চলে। না হলে না খেয়ে থাকতে হয়।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি গ্রামের জেলে পরিবারের প্রধান হানিফ মিয়া। দুই সন্তান জহিরুল (১২) ও আবির (৬)। আবির একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির নিয়মিত ছাত্র। তবে গতবছর থেকে স্কুলে যাচ্ছে না বড় ছেলে জহিরুল। সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে হানিফ মিয়া বলেন, ‘বৃদ্ধ বাবা-মাসহ আমার পরিবারে সাত জন মানুষ। একজনের ইনকামে পুষিয়ে থাকা যায় না। নদীতে জাল ফেলা, মাছ ধরা, হাটে বেচাসহ এত কাজ একা করা সম্ভব হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে ছেলেকে নিজের সঙ্গে কাজে নিয়ে যাই।’

তবুও সুন্দর একটি জীবন চায় জেলেপল্লির শিশুরা। পরিবারও চায়, তাদের সন্তানরা বেড়ে উঠুক আর দশটা শিশুর মতই। সব বাবাই চায়, ভালো থাকুক তাদের সন্তান। কিন্তু পেট ও পকেটের জোগান দিতে সব যুক্তিই দিন শেষে অন্ধ হয়ে ওঠে। বাবা হয়েও সন্তানকে শিশুবান্ধব জীবন দিতে না পারার কষ্ট বুকে পাথর হয়ে থাকে। সেই কষ্ট অশ্রু হয়ে জায়গা পায় জেলেপল্লির বাবাদের চোখে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com