নাবলুসে কৃষি জমিতে আগুন : পশ্চিম তীরে কিশোরকে গুলি করে হত্যা

ফিলিস্তিনের জেরুসালেম আল-কুদস শহরের ভূমি দখল এবং নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গত বুধবার এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তাছাড়া ফিলিস্তিনের পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাস শহরের শেখ জাররাহ শরণার্থী শিবির থেকে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করার জন্য ইসরাইলকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। সংগঠনটির সামরিক শাখা সুস্পষ্ট করে বলেছে, শেখ জাররাহ শরণার্থী শিবির থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ না করলে তেলআবিবকে চরম মূল্য দিতে হবে।

পিটার স্ট্যানো বলেন, তেল আবিবের এই ভূমি দখল প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক ফিলিস্তিন-ইসরাইল সঙ্কট সমাধানের ক্ষেত্রে বড় রকমের বাধা সৃষ্টি করবে। জেরুসালেম আল-কুদস শহরের দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সর্বমোট ২৫৪০ ইউনিট ইহুদি বসতি স্থাপন করতে চাইছে ইসরাইল সরকার। এই অবৈধ বসতি স্থাপন করলে পশ্চিমতীর ও ফিলিস্তিনের বেইত সাফাফা এলাকা জেরুসালেম শহর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বুধবারের বিবৃতিতে পিটার স্ট্যানো আরো বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বসতি স্থাপনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবৈধ বলে গণ্য করে এবং ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের আগের সীমানায় কোনো ধরনের পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দেয় না। ইসরাইল যে জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে বসতি স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে তা বাতিল করার আহ্বান জানায় ইইউ।

হামাসের সামরিক শাখা ইজজুদ্দিন আল-কাসসামের চিফ অব স্টাফ ও সুপ্রিম কমান্ডার মুহাম্মাদ দইফ এক বিশেষ বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ইসরাইলকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে আমাদের চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি। যদি শেখ জাররাহ শরণার্থী শিবিরে আমাদের লোকজনের বিরুদ্ধে শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ না হয় তাহলে আমরা চুপচাপ বসে থাকব না। আর ইসরাইলকেও চরম মূল্য দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, অধিকৃত জেরুসালেম শহরের শেখ জাররাহ শরণার্থী শিবিরের দৃঢ়চেতা লোকজনকে আমি স্যালুট জানাই। সেখানে কী হচ্ছে তা হামাসের নেতৃত্ব ও আল-কাসসাম ব্রিগেড অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ইসরাইলি আদালতের সহযোগিতা নিয়ে দেশটির সরকার শেখ জাররাহ শরণার্থী শিবিরের ফিলিস্তিনি নাগরিকদের উচ্ছেদ ও তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে। সেখানে নতুন একটি ইহুদি বসতি স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়ে এ কাজ করছে তেলআবিব। মঙ্গলবার ইসরাইলের সেনাবাহিনী ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে জোর করে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। এর এক দিন পরই হামাসের সামরিক শাখার প্রধান বিবৃতিটি দিলেন।

এদিকে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীরের নাবলুসে ফিলিস্তিনি কৃষিজমি ও বসতবাড়িতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা। মঙ্গলবার রাতে এই হামলা চালানো হয় বলে ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম ওয়াফায় জানানো হয়।

উত্তর পশ্চিম তীরের বসতির দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা গাসসান ডগলাস জানান, নাবলুসের পূর্বে বিস্তৃত কৃষিজমিতে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা আগুন দেয় এবং অন্তত তিনটি বাড়িতে হামলা চালায়। তিনি আরো বলেন, অবৈধ ইহুদি বসতি হার ব্রাখার উগ্র ইহুদি বাসিন্দারা এই হামলা চালিয়েছে। নাবলুসের চার পাশে ৪০ ইসরাইলি বসতি রয়েছে। বসতি স্থাপনকারীরা ইসরাইলি নিরাপত্তাবাহিনীর ছত্রছায়ায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলে ক্রমাগত আগ্রাসন চালিয় আসছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে বর্তমানে ২৫০টির বেশি বসতিতে ছয় লাখের বেশি ইহুদি নাগরিক বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেম অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত এবং এই ভূমি সব ইসরাইলি বসতি ও স্থাপনা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত।

এএফপি জানায়, পশ্চিম তীরে টহল দেয়ার সময় সাঈদ ইউসুফ মোহাম্মদ ওদাহ নামে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে (১৬) গুলি করে হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইলি সেনারা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানায়। সূত্র জানায়, নাবলুসের কাছাকাছি উত্তরাঞ্চলীয় ওদলায় বুধবার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলিতে সাঈদ ইউসুফ প্রাণ হারায়। ফিলিস্তিন রেড ক্রস ওই কিশোরের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, এ হামলায় আরো এক কিশোর আহত হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নাবলুসে নিয়মিত টহল চলাকালে সেনাবহিনীকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়া হয়। এর জবাবে সেনাবাহিনী গুলি ছোড়ে। উল্লেখ্য, ইসরাইল ১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি অঞ্চল পশ্চিম তীর দখল করে রেখেছে।