মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলার প্রেক্ষাপটে দেশটির বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছে ৩১টি দেশের ১৩৭টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। গতকাল বুধবার জাতিসংঘের কাছে লেখা এক যৌথ চিঠিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। খবর এএফপির।
চিঠিতে বলা হয়, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের জবাব ও জান্তা সরকার যাতে নতুন করে নিপীড়ন চালাতে না পারে, সে লক্ষ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচিত দেশটির বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে বৈশ্বিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
চিঠিতে আরও বলা হয়, চীন, ভারত, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, ফিলিপাইনস, রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ যেসব দেশের সরকার মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করছে, তাদের অবিলম্বে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি সরবরাহ বন্ধ করা দরকার।
উল্লিখিত দেশগুলোর মধ্যে তিনটি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য। এরা হলো স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া এবং অস্থায়ী সদস্য ভারত।
চিঠিতে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) পরিচালক কেনেথ রথ লেখেন, রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে চালানো নিষ্ঠুরতা, দশকের পর দশক ধরে চালিয়ে যাওয়া যুদ্ধাপরাধ ও সর্বশেষ নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ ন্যূনতম পদক্ষেপ হিসেবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করা এনজিওগুলোর কয়েক ডজন এশিয়ার বিভিন্ন দেশের। স্বাক্ষরকারী এনজিওগুলো বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদের উচিত বিশেষ বিশেষ খাতে ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং জান্তা নেতাদের ও সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পত্তি জব্দ করা।
জাপানের আশাহি শিম্বুন পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে টোকিওর কিছু পশ্চিমা মিত্রদেশ অবরোধ আরোপ করায় ও আরও পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেওয়ায় তারাও দেশটিতে নতুন করে উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া স্থগিত রাখার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে।
জাপানের কিয়োদো বার্তা সংস্থাও বিভিন্ন সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, জাপান মিয়ানমারে নতুন করে উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া বন্ধের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক আজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীকে তারা তাদের এ প্ল্যাটফর্ম ও ইনস্টাগ্রাম থেকে নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী এই দুই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে না। দেশটিতে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে গণতন্ত্রপন্থী মানুষের বিক্ষোভ চলছে। এ ঘটনারই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওই পদক্ষেপ নিয়েছে ফেসবুক।
ব্লগে এক পোস্টে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘মিয়ানমারে রক্তক্ষয়ী সহিংসতাসহ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা ঘটনাপ্রবাহের কারণে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে ফেসবুক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হয়েছে।’ কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, এ বাহিনীকে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে দিলে বড় ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা করে তারা।