ফারাহ আহমেদ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান। তার বাবা ড. মাতলুব আহমেদ ও মা ড. ফেরদৌস আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। নানা ড. আব্দুল বাতেন খান বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্প্রতি জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২১ জানুয়ারি সে দেশের কৃষি দফতরের ‘চিফ অব স্টাফ ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট’ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ফারাহ । এর আগে তিনি ‘সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেস’র সিনিয়র পলিসি অ্যানালিস্ট এবং গ্রাহক আর্থিক সুরক্ষা ব্যুরোর (সিএফপিবি) চিফ অপারেটিং অফিসারের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাইডেন প্রশাসনে এ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বলাভের পর ফারাহ আহমেদ সম্প্রতি জাগো নিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফ্লোরিডায় অবস্থানরত বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. বিএম আতিকুজ্জামান।
বিএম আতিকুজ্জামান: ফারাহ আহমেদ ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের চিফ অব স্টাফ ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট’ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এটা খুব আনন্দের যে ফারাহ আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ফারাহ।
ফারাহ আহমেদ: অনেক ধন্যবাদ। এই আয়োজনে যোগ দিতে পারাটা আমার জন্য খুবই আনন্দের। আপনার সঙ্গে কথা বলা এবং আমার কিছু গল্প বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার এটা ভালো একটা সুযোগ।
বিএম আতিকুজ্জামান: যুক্তরাষ্ট্রে পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটি এবং বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে নিয়ে গর্বিত। আপনার অর্জন নিয়ে গর্বিত। আমরা জানি যে, এর আগে আপনি কমিউনিটি অ্যান্ড ইউএসডিএ’র কো-অপারেটিভ সার্ভিসেসের মূল ব্যবসার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট টিমের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ইউএসডিএ’র নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে আপনার কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। গ্রাহক শিক্ষা অফিসে সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এবং সিএফপিবিতে চিফ অপারেটিং অফিসারের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবেও আপনি দায়িত্ব পালন করেন। সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের শীর্ষ নীতি বিশ্লেষক হিসেবেও কাজ করেছেন আপনি। আপনার কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, বাইডেন প্রশাসনে আপনার বর্তমান নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে। আপনি কী কী করবেন?
ফারাহ আহমেদ: হ্যাঁ, বাইডেন প্রশাসনে এই পদে নিয়োগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত এবং সম্মানিত। চিফ অব স্টাফ হিসেবে আমার ভূমিকা হবে—দেশব্যাপী সামগ্রিক গ্রামীণ উন্নয়ন পরিচালনা ও তদারকি করা। তাই এটা বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি সুযোগ। আমি যে বিভাগের চিফ অব স্টাফ হিসেবে তদারকি করব সেখানে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আমাদের কমিউনিটিতে ঋণ, অনুদান, অন্যান্য বিদেশি সহায়তা দিয়ে থাকি। স্কুল, হেলথ ক্লিনিক, হাসপাতালের মতো কমিউনিটি সুবিধা তৈরি করা থেকে শুরু করে সবকিছু করছি আমরা। লোকজনের জন্য পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা করতে আমাদের পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করতে হবে।
আমরা লোকজনকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার আওতায় এনেছি। কম্পিউটারের এই যুগে আমাদের একটি নির্ভরযোগ্য উপায়ে এগোতে হবে। আমার বিভাগ আরও উন্নত হবে। আসলে আমাদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে। আমরা বিদ্যুৎ এবং এর বিভিন্ন বিষয়ের ওপরও জোর দেব। এভাবে বিভিন্নভাবে সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করার জন্য এটি সত্যিই বিশেষ একটি জায়গা। আমি বলব যে প্রশাসনে নিযুক্ত একজন প্রধান কর্মী হিসেবে এই নির্দিষ্ট ভূমিকার ক্ষেত্রে আমরা এখন কাজের প্রতিই বেশি জোর দিচ্ছি, এটাই আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, আমরা যা কিছু করছি সবকিছুতেই। প্রথম দিন থেকেই আপনারা জানেন যে, আমরা কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইকে গুরুত্ব দিচ্ছি। পুরো বিশ্বের কাছেই এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং।
সত্যিকার অর্থেই আমরা মহামারি থেকে মুক্তি, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং মহামারি সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছি। একইসঙ্গে আমরা জলবায়ু সঙ্কটের ওপরও জোর দিয়েছি। সবশেষে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে সমতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য কাজ করছি।
এগুলো কেবল বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের অগ্রাধিকার নয়, আমার নিজেরও। আমার নিজেরও একই লক্ষ্য রয়েছে। আমি সেই একই লক্ষ্যগুলোর প্রতি গভীরভাবে যত্নশীল এবং সেজন্য আমি অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। চিফ অব স্টাফ হিসেবে এই ভূমিকা গ্রহণ করায় আমি সম্মানিত বোধ করছি।
বিএম আতিকুজ্জামান: আমরা জানি যে, প্রথম থেকেই আপনি একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। আপনার মা-বাবাও অনেক মেধাবী এবং আপনি এমন একটি পরিবার থেকে এসেছেন। আপনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর অর্জন করেছেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আপনি জনসেবার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন, আপনি অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন এবং নিজেকে এ জায়গাটায় উৎসর্গ করেছেন। জনসেবার ক্ষেত্রে আপনাকে কোন বিষয়টি অনুপ্রাণিত করেছে, তা নিয়ে আমরা সবাই বেশ কৌতূহলী। আপনার অন্য কোথাও কাজ করারও প্রচুর সুযোগ ছিল। কিন্তু আপনি জনসেবার মতো কঠিন এই ক্ষেত্রটিই কেন বেছে নিলেন?
ফারাহ আহমেদ: আমার অনুপ্রেরণার জায়গা অনেক। প্রচুর লোকের কাছ থেকে আমি প্রেরণা পেয়েছি। এর মধ্যে কিছু বিষয় আমি শুধু বইপত্রে পেয়েছি, কিছু আমি সারাজীবন ধরে জানতে পেরেছি, আবার কিছু বিষয় আমি হয়তো ছোট ছোট বিভিন্ন মুহূর্ত থেকে পেয়েছি।
আমি সত্যিই মনে করি যে, কঠোর পরিশ্রমী লোকজনই আমাকে এরকম একটি কাজে যোগ দেয়ার প্রেরণা যুগিয়েছেন। তাদের কাছে আমি প্রতিনিয়ত সব ধরনের সমর্থন পেয়ে আসছি। আমি বলতে চাই যে, আমরা যাদের সেবা করছি তারা হলেন সেই ব্যক্তি—যারা আমাদের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে আমাদের সহায়তা করছেন, শক্তির যোগান দিচ্ছেন।
আমি আমার নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে করি। আমার জীবনে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এবং এ সম্পর্কে সব সময়ই দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, যদি আমি নিজের এসব সম্পদ দিয়ে অন্যকে সহায়তা করতে পারি এবং ছোট ছোট কাজ করে কিছু ছোট ভূমিকা রাখতে পারি, তবে আমার জীবনের শেষ দিকে এটাই হবে বড় সাফল্য। আমি বলতে চাই যে, আমি এসব নিয়ে অনেক কাজ করেছি।
বাংলাদেশসহ অন্যান্য গ্রামীণ সম্প্রদায়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। বাংলাদেশে আমার ভ্রমণ, বিশেষ করে আমার বাবা-মায়ের গ্রামে যাওয়া, আমি যখনই কাজ করি প্রতিদিনই এসব বিষয় আমার মনে হয়, আমাকে সব সময় প্রেরণা যোগায়। আমি বলব যে, আমার পরিবার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও আমার পরিবারের সবাই জনসেবায় নিয়োজিত নন, তবে আমাদের পরিবারের বেশ কয়েকজন শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করছেন।
তারা এখনো আমাকে এক্ষেত্রে প্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছেন, (আসলে) এটিই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বকে সর্বোত্তম স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে এগুলো সহায়তা করে। আর আমার বাবা-মায়ের কথা যদি উদাহরণ দেই, তাহলে বলতে পারি, তারা অনেক বেশি সামাজিক কাজে জড়িত এবং মাঠ পর্যায়ে বা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমিউনিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা।
কলেজের অধ্যাপক হিসেবে নিজেদের একটা দীর্ঘ সময় ব্যয় করার পরও তারা প্রতিদিনই এই কাজগুলো করে যাচ্ছেন। সুতরাং বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিটিতে আমি তাদের আত্মত্যাগ এবং তাদের কমিউনিটিকে সহায়তার ক্ষেত্রে নিজেদের উৎসর্গ করার সবকিছুই আমি দেখেছি। এটাই আমাকে আমার পুরো জীবন উৎসর্গ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমার পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিরাও আছেন, যদি তাদের সম্পর্কে কথা বলি তাহলে তারা সত্যিই আমার প্রেরণার উৎস।
বিএম আতিকুজ্জামান: আপনি বাংলাদেশের খুবই শিক্ষিত এবং নেতৃস্থানীয় পরিবারের সন্তান। মাত্রই আপনার বাবা-মা সম্পর্কে বললেন, যারা দুইজনই পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক। আপনার নানা-নানি বিশেষ করে আপনার নানি মনিরা খান বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আজীবন সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি সাম্য, লিঙ্গ সমতা এবং দরিদ্র নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। আপনি কি আপনার পরিবার সম্পর্কে কিছু বলবেন?
ফারাহ আহমেদ: হ্যাঁ, আমি বলতে পারি যে, আমার নানিই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। তার জীবন ও কাজের কথা স্মরণ করলে আমার মনে হয় তিনি তার জীবনে যা করেছেন আমি যদি তার ক্ষুদ্রাংশও করার সুযোগ পাই, সেটাও আমার জন্য অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার হবে। ছোটবেলা থেকেই তাকে আমার আদর্শ ও অনুকরণীয় বলে মনে করি আমি। তিনি ৩২ বছর বাংলাদেশের ভিকারুননিসা নূন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। পাশাপাশি আপনি যেমন বললেন তিনি বিভিন্ন সংগঠনেরও নেত্রী ছিলেন। তিনি এমন এক সময়ে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন, যখন এগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করাই খুব কঠিন ছিল। শুনেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি যুদ্ধাপরাধের শিকার নারীদের নিয়ে কাজ করেছেন। তাদের অর্থনৈতিক, মানসিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন।
তার উদ্যম, সাহসিকতা ও নিষ্ঠার কথা ভাবলে বিস্ময় জাগে। আপনি যেমন বললেন, তিনি সম্ভবত মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন। লিঙ্গ-সমতার জন্য তার সংগ্রাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজো নানাভাবে অনেকেই নারীর অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছেন। কিন্তু এর পথিকৃৎ তিনিই। সব ধরনের অন্যায় ও অসমতার বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন তিনি। বড় কোনো চ্যালেঞ্জ, কঠিন পরিস্থিতির সামনে এলে আমি তার কথা স্মরণ করি। তিনি যা করেছেন তা মনে করি, তার সংগ্রাম ও সাফল্যের কথা মনে করি। তিনি আমাকে শত বাধা-বিপত্তির মুখেও নিজের লক্ষ্যে দৃঢ় ও অবিচল থাকতে অনুপ্রাণিত করেন। আমি খুব গভীরভাবে তাকে অনুভব করি। আমি অনুভব করি আমি যা করছি এগুলো তার কাজেরই ধারাবাহিকতা, আমি তার উত্তরাধিকার হিসেবে এসব করে যাচ্ছি। মনে পড়ে তিনি সব সময় বলতেন—তার লক্ষ্য, সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। আমারও সব কাজের লক্ষ্য প্রত্যেকটা মানুষের মর্যাদাবান সুখী জীবন নিশ্চিত করা। তাই আমরা একই পথে হাঁটছি। তিনি যদি আজকে আমার পাশে থাকতেন! আমি বিশ্বাস করি তিনি কোথাও না কোথাও আছেন। আমার সব কাজ তার কাজেরই ধারাবাহিকতা মাত্র।
বিএম আতিকুজ্জামান: আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে নিয়ে আমরা গর্বিত। আপনার পরিবার বাংলাদেশ থেকে এখন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই আপনার প্রচুর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন। আমি আপনার সম্পর্কে জাগো নিউজে একটি প্রবন্ধ লেখার পর অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা আপনাকে নিয়ে খুবই গর্বিত। তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলতে চান?
ফারাহ আহমেদ: আমি সত্যিই বলতে চাই যে, সবাইকে ধন্যবাদ। আমার পরিবার সব সময় আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছে। আমি আমার সব কাজেই তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আমার ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা কিছুটা ব্যতিক্রমী ছিল। কিন্তু আমার পরিবার আমার ইচ্ছা ও পছন্দকে গুরুত্ব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আমার আত্মীয়-স্বজনের সমর্থন ছাড়া আমি সফল হতে পারতাম না। আমি মনে করি আমার যে কোনো অর্জন তাদেরও অর্জন। আমি একা কখনো এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আমি যদি তাদের গর্বের কারণ হওয়ার এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি তবে সেটাই হবে আমার সফলতা।
বিএম আতিকুজ্জামান: আপনি তরুণদের বিশেষত আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণদের অনুপ্রেরণা। তাদের অনেকেই জনসেবা, মূলধারার রাজনীতি, অলাভজনক খাত এবং অন্যান্য অনেক অনুপ্রেরণামূলক ক্ষেত্রে আসতে আগ্রহী। সাক্ষাৎকারের এই পর্যায়ে আমি আপনার কাছে নাবিহা আতিকুজ্জামানের একটি প্রশ্ন নিতে চাচ্ছি।
নাবিহা আতিকুজ্জামান: আমি জনস্বাস্থ্য এবং প্রাক-স্বাস্থ্য বিষয়ে পড়াশোনা করছি। আমি খুব ছোট করে একটি প্রশ্ন করতে চাই। বাইডেন প্রশাসনের একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে আমাদের প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনার উপদেশ কী?
ফারাহ আহমেদ: নাবিহা, তোমার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। তরুণদের ক্যারিয়ার ভাবনায় আমি কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছি এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমি শুধু বলব পৃথিবীতে অনেক সমস্যা আছে এবং এক্ষেত্রে আমাদের নতুন সমাধান দরকার। যার অর্থ বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আসা তরুণদের কাছ থেকে আমরা নতুন নতুন উদ্যোগ এবং ধারণা চাই। বাংলাদেশি-আমেরিকানদের অনেক কিছু দেয়ার আছে। অর্থাৎ আমি বলতে পারি প্রেসিডেন্ট বাইডেন এটা উপলব্ধি করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে বহু জাতি ও বর্ণের মানুষের সমাবেশ ঘটেছে এবং এটাই যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী করেছে। তিনি তার ফেডারেল সরকারে বহু জাতি ও বর্ণের মানুষকে যুক্ত করতে চেয়েছেন। তার এমন ইচ্ছা না হলে আমি এখানে আসতে পারতাম না। তিনি তার নেতৃত্বের এমন একটি টিম তৈরি করতে চেয়েছেন যা আমেরিকার মতো দেখাবে, আমেরিকার বৈচিত্র্যের প্রতিচ্ছবি হবে। আশা করি বাংলাদেশি তরুণ-তরুণী, নারীরা জনসেবাকে নিজেদের ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার কথা চিন্তা করবে। কারণ এটা অনেক সম্মানের কাজ।
এটা এমন একটি ক্যারিয়ার যেখানে তুমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠবে, সবকিছু থেকে বেরিয়ে কাজে নেমে পড়বে। এটা এমন ক্যারিয়ার যেখানে তুমি নানাভাবে তোমার মানসিকতাকে কাজে লাগাতে পারবে। এটা এমন একটি ক্যারিয়ার যা আমাকে দৃঢ় করেছে, সাহসী হতে শিখিয়েছে এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী করেছে। এটা আমার উদ্যম এবং সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ দিয়েছে। এটা এমন একটি ক্যারিয়ার যেখানে তুমি মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সুযোগ পাবে। এটা খুবই তৃপ্তিদায়ক ব্যাপার।
আমি নিশ্চিত যে অন্যান্য ক্যারিয়ারেও সাফল্যের আনন্দ আছে, কিন্তু মানুষের জন্য কিছু করতে পারা, তাদের জীবনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারার তৃপ্তি ও আনন্দের কোনো তুলনা হয় না। আমার দৃষ্টিতে এটা একটা শ্রেষ্ঠ ক্যারিয়ার। আমার পরামর্শ হলো তোমরা এই ক্যারিয়ারে আসো এবং এ বিষয়ে অনুসন্ধান করো।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনেকগুলো অংশ রয়েছে, স্টেট গভর্নমেন্ট, লোকাল গভর্নমেন্ট এবং ফেডারেল গভর্নমেন্ট। এখানে প্রচুর কাজের ক্ষেত্রও রয়েছে। বাংলাদেশি-আমেরিকানরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে, নিজেদের যুক্তি ও পরামর্শ তুলে ধরতে পারে এবং চমৎকারভাবে এই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বিশাল অবদান রাখতে পারে।
বিএম আতিকুজ্জামান: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এটা সত্যিই খুব অনুপ্রেরণার। আপনার বক্তব্য নিশ্চয় নাবিহাসহ অন্য তরুণ বাংলাদেশি-আমেরিকানদের জনসেবা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে আপনার মতো কাজ করায় উৎসাহিত করবে। অনেক বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি-আমেরিকান আপনার সাক্ষাৎকারটি দেখছেন। আমরা জানি আপনি যুক্তরাষ্ট্রে বড় হয়েছেন, কিন্তু আপনি বাংলায়ও কথা বলতে পারেন। আপনি বাংলাদেশিদের ঐতিহ্যের পোশাক শাড়িও পছন্দ করেন হয়তো। বাংলাদেশে মহিলা পরিষদের পাশে আপনি ঝালমুড়ি এবং ফুচকা খাচ্ছেন, এমন ছবিও দেখেছি। আমাদের বাংলায় কিছু বলুন।
ফারাহ আহমেদ: সাক্ষাৎকারটি নেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি সবাইকে বলতে চাই, ‘সবাইকে ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।’ (এই অংশটুকু তিনি বাংলায় বলেছেন)
বিএম আতিকুজ্জামান: অনেক ধন্যবাদ ফারাহ আহমেদ, আপনিও ভালো থাকবেন। আমরা সবাই আপনার ও আপনার পরিবারের কল্যাণ কামনা করি। এটা বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনে আপনার জীবনের নতুন ধাপের সূচনা মাত্র। আমরা আপনার ভালো ভালো কাজ দেখার অপেক্ষায় আছি। আমাদের এই দেশ ও বিশ্ব মানবতার জন্য নিশ্চয় আপনি অনেক অবদান রাখবেন। বিশ্বের সব স্থানে, সবাইকে, সব বাংলাদেশি আমেরিকানকে অনুপ্রাণিত করবেন। বাংলাদেশি কমিউনিটি ও জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ফারাহ আহমেদ:
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জাগোনিউজ থেকে সংগৃহিত।