যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১১টা ও স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের ওয়েস্ট ফ্রন্টে এ শপথ গ্রহণ করেন তিনি।
এর আগে অনুষ্ঠানে প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমলা হ্যারিস। প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং দক্ষিণ এশীয় হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন তিনি। কমলার শপথের পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জো বাইডেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী তাকে শপথ পাঠ করান দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। স্ত্রী জিল বাইডেনের হাতে ধরে রাখা বাইবেল ছুঁয়ে শপথ নেন তিনি। বাইবেলটি ১৯৮৩ সাল থেকে তার পরিবারের কাছে রয়েছে এবং এটি তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণের সময়ও ব্যবহার করেছিলেন।
শপথ নেয়ার পরে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বাইডেন তার ভাষণে বলেন, ‘আজ আমেরিকার দিন। এটি গণতন্ত্রের দিন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আবার শিখেছি গণতন্ত্র মূল্যবান। এবং এই মুহূর্তে, আমার বন্ধুরা, গণতন্ত্র বিরাজ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা আমাদের সমর্থন করেছেন তাদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন। আর যারা আমাদের সমর্থন করেননি তাদের বলছি, আমার কথা শুনবেন, কারণ এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়।’ তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট। আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যারা আমাকে সমর্থন করেননি তাদের জন্যও আমি কঠোর লড়াই করব।’
সম্প্রতি ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের সহিংস হামলার বিষয়ে বাইডেন বলেন, ‘যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি ভাষণ দিচ্ছেন সেখানে কয়েকদিন আগে সহিংসতা ঘটে গেছে যা ক্যাপিটল হিলের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। এটি আমেরিকান গণতন্ত্রের মূল্যকে গুরুত্ব দিয়ে রেখেছে’। তিনি বলেন, ‘এই দিনটি ইতিহাস ও আশার দিন। বিভিন্ন সময়ে আমেরিকাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে, তার দেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আজকে আমরা গণতন্ত্রের বিজয় উদযাপন করছি। বাইডেন তার উদ্বোধনী ভাষণে বৈশ্বিক মিত্রদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের অঙ্গীকার করেন। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আমেরিকা প্রথম’ এজেন্ডার চার বছরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা আমাদের জোটগুলোতে আবার যোগ দেব ও সম্পর্ক মেরামত করব এবং বিশ্বের সাথে আবার জড়িত হব। এটি গতকালের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য নয়, আজকের এবং আগামীকালকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য। তিনি যারা তাকে সমর্থন করেননি তাদেরসহ ‘সমস্ত আমেরিকানের জন্য প্রেসিডেন্ট’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সবকিছু নতুন করে শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঐক্যই হচ্ছে আমেরিকার সাফল্যের জন্য একমাত্র পথ উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘আমি জানি ঐক্যের কথা বলা আজকাল অবাক হওয়া ও কল্পনার মতো শোনাতে পারে। আমি জানি যে শক্তিগুলি আমাদেরকে বিভক্ত করে তোলে তারা গভীর এবং সেগুলি সত্য। আমি এও জানি যে তারা নতুন নয়।’ তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘ঐক্যই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার উপায়।’ বাইডেন আমেরিকার ইতিহাসকে দেশের স্বীকৃত আদর্শ এবং এর জীবিত বাস্তবতার মধ্যে ‘স্থির সংগ্রাম’ হিসাবে বর্ণনা করেন। এ সময় তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে কমলা হ্যারিসের শপথ নেয়ার দিকে ইঙ্গিত করেন বলেন, জাতি কতটা ইতিবাচক পরিবর্তন অর্জন করতে পারে, তিনিই হচ্ছেন তার প্রমান। তিনি আরও বলেন, ‘সব কিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব।’
জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। ছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ, মিশেল ওবামা। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হলেও উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
গত নভেম্বরে নির্বাচনের পর থেকে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবির নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী করোনাভাইরাসকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন বাইডেনের মুখপাত্র। বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশেও সই করবেন তিনি। শপথ অনুষ্ঠানের আগে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উদ্দেশ করে টুইট করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। টুইট বার্তায় ওবামা বলেছেন, অভিনন্দন আমার বন্ধু, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এবার আপনার সময়। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের অভিষেক হয়ে থাকে আনন্দমুখর পরিবেশে। লাখ লাখ মানুষ অভিষেক অনুষ্ঠান উদযাপন করতে ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হন। আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনুষ্ঠান দেখতে আসে মানুষ। কিন্তু এবার সেই চিরচেনা দৃশ্য দেখা যায়নি। করোনাভাইরাস ও নিরাপত্তার কারণে এবার সাধারণ মানুষ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। এমন অভিষেকও মার্কিনীরা তাদের ইতিহাসে কখনো দেখেনি।