ক্ষমা প্রার্থনা করা কোরআনের নির্দেশ। আল্লাহ তাআলা অনেক স্থানে ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেছেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন। নবিজীর ঘোষণায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার সেরা দোয়া হচ্ছে- ‘সাইয়েদুল ইসতেগফার’। অর্থ ও উচ্চারণসহ তা তুলে ধরা হলো-
অর্থ ও উচ্চারণসহ সাইয়েদুল ইসতেগফার
হজরত শাদ্দাদ ইবনু আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাইয়েদুল ইসতেগফার হলো বান্দার এ দোয়া পড়া-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ
‘আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা’
‘হে আল্লাহ! আপনিই আমার প্রভু; আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’
خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ
‘খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা’
‘আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনারই (বান্দাহ) গোলাম’
وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ
‘ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাত্বাতু’
‘আর আমি আমার সাধ্যমতো আপনার (তাওহিদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর আছি’
أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ
‘আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু’
আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি
أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي
‘আবুউ-লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ-লাকা বি-জাম্বি’
‘আপনি আমাকে আপনার যে নেয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি আর আমি স্বীকার করছি আমার গুনাহ (অপরাধ)’
فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
‘ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা’
‘সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি ছাড়া গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই।’ (বুখারি ও মিশকাত)
ক্ষমা প্রার্থনা নির্দেশ:
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন-
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارً
‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। (তোমরা ক্ষমা চাইলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন; তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন; তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ اللَّهُ
‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে যেন আল্লাহকে স্মরণ করে, এরপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে আছে যে, গুনাহ ক্ষমা করবে? (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৫)
এ কারণেই কুরআন ও সুন্নায় বেশি বেশি ইসতেগফার করার ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কেননা গোনাহমুক্ত জীবনের অন্যতম উপায় হচ্ছে ইসতেগফার। আল্লাহ তাআলা আরও ঘোষণা করেন-
وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)
কোরআনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেন মর্মে হাদিসে পাকে নবিজী ঘোষণা করেন-
‘যে ব্যক্তি রাতে এ দোয়া পাঠ করবে যদি সে ওই রাতে মারা যায় তবে সে অবশ্যই জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি দিনে এ দোয়াটি পড়বে এবং ওই দিনেই তার মৃত্যু হয় তবে সে জান্নাতি। (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সাইয়েদুল ইসতেগফার ভালোভাবে শিখে নেওয়া। সকাল-সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার বেশি বেশি পড়া। প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরও এই ইসতেগফার পড়া। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার কল্যাণ ও পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের সফলতায় ক্ষমা লাভে সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।