1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
রানা, ও মেহেবুব হোসেন রিপনের নেতৃত্বে এক বিশাল র‍্যালি গোপালগ‌ঞ্জে দিনমুজুর‌কে হত্যা মামলায় গ্রেফতার, নবজাতক দুই বোন নিয়ে দিশেহারা ছোট ভাই শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ কর‌তে হ‌বে, না করলে প্রশাসক নিয়োগ হ‌বে- সাখাওয়াত বাংলাদেশ থেকে জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে নিবে আজারবাইজানে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সিপিজের খোলা চিঠি ড. ইউনুসকে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম গ্রেফতার শপথ নিলেন নতুন তিন উপদেষ্টা কু‌মিল্লায় ডাকাতির নাটক সাজিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতিজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ক‌রে চাচা রাজধানীর কাকরাইলে সভা সমা‌বেশ নি‌ষিদ্ধ

আমার মা ছিলেন সবচেয়ে বড় গেরিলা – শেখ হা‌সিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১
  • ৪৩১ বার পঠিত

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী ও পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

মানুষ একজন স্বজন হারানোর বেদনা সহ্য করতে পারেন না। আর দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে এক কাল রাতে পিতা-মাতা, ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য হারানোর দুর্বিষহ যন্ত্রণা ও ব্যথা বুকে নিয়েই দেশ চালিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সব হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আর তীব্র ব্যথাশ্রু ধরে রাখতে পারেননি তিনি। পরিবারের সবাইকে হারানোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তীব্র আবেগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন অঝোরে কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে।বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে দেশবাসীর সামনে প্রশ্ন তুলে আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, যে জাতির মুক্তির জন্য নিজের জীবনের সব সুখ, শান্তি বিলিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা এনে দিলেন- তাকে সেই বাঙালীই কোন অপরাধে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করল?

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘শুধু একটাই প্রশ্ন সব সময় হয় যে, কেন এই হত্যাকান্ড? কি অপরাধ ছিল আমার বাবার, আমার মায়ের, আমার ভাইদের? যাঁরা নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করলেন, সমস্ত জীবনের সুখ, শান্তি সবকিছু বিলিয়ে দিলেন, একটা জাতির স্বাধীনতার জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। তাঁদেরকে সেই বাঙালীই খুন করল, কেন?’এ সময় প্রায় চার যুগ ধরে বুকে জমাট বেঁধে থাকা সব স্বজন হারানোর বেদনায় নীল হয়ে যাওয়া আবেগাক্রান্ত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কথা বন্ধ হয়ে যায়। তখন তাঁর দু’চোখ দিয়ে ঝরছিল তীব্র যন্ত্রণার অশ্রু। গণভবন ও রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উপস্থিত মন্ত্রী-এমপি, নেতা-কর্মী ও সমাজের বিশিষ্টজনরাও তাঁদের অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। মুহূর্তেই পাল্টে যায় পুরো অনুষ্ঠানের চিত্র। চলে আসে পিনপতন নীরবতা।

বেশ কিছুক্ষণ পর নিজেকে সংবরণ করে তাঁর অবশিষ্ট বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২১ প্রদান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারই প্রথম বঙ্গমাতার জন্মদিনটি জাতীয়ভাবে পালিত হয় এবং স্বাধীনতার পর প্রথম এই মহীয়সী নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের জন্য বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পাঁচজন নারী ব্যক্তিত্বকে বঙ্গমাতা পদকে ভূষিত করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা বলতে গিয়ে আবেগজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘মানুষ যখন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ায় তখন তার মনে সব থেকে আগে আসে নিজের জীবনটা বাঁচানো এবং নিজের জীবন ভিক্ষা চাওয়া। কিন্তু আমার মা (বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) খুনীদের কাছে নিজের জীবন ভিক্ষা চাননি। তিনি নিজের জীবন দিয়ে গেছেন। আমার আব্বাকে (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু) যখন হত্যা করল সেটা যখন তিনি দেখলেন, তখনই তিনি (বঙ্গমাতা) খুনীদের বললেন যে, তোমরা উনাকে (বঙ্গবন্ধু) মেরেছ, আমাকেও মেরে ফেল।’এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওই সময় খুনীরা আমার মাকে (বঙ্গমাতা) বলেছিল আমাদের সঙ্গে চলেন। তখন খুনীদের মা সাফ বলে দেন, তোমাদের সঙ্গে আমি যাব না, তোমরা এখানেই আমাকে খুন কর। ঘাতকের বন্দুক গর্জে উঠেছিল, সেখানেই আমার মাকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে।

বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, কতটা সাহস একটা মানুষের মনে থাকলে সে মানুষটা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবন ভিক্ষা না নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারেন। আজকে আমাদের দেশের নারী সমাজ যে একটা জায়গা খুঁজে পেয়েছে, সেখানে আমি মনে করি আমার মায়ের এই কাহিনী শুনলে অনেকেই অনুপ্রেরণা পাবেন। শক্তি ও সাহস পাবেন দেশের জন্য, জাতির মঙ্গলের জন্য কাজ করতে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং পুরস্কারপ্রাপ্তদের জীবন বৃত্তান্ত অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী পদক বিজয়ীরে হাতে ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২১’ তুলে দেন।রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া, সমাজসেবা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য এ বছর পাঁচজন বাংলাদেশী নারীকে এই পদক প্রদান করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ পদকটি এবার থেকে নারীদের জন্য ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক হিসেবে গণ্য হবে। পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৪০ গ্রাম ওজনের একটি পদক, ৪ লাখ টাকার চেক, সার্টিফিকেট এবং উত্তরীয় প্রদান করা হয়।পুরস্কার বিজয়ীরা হচ্ছেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মমতাজ বেগম (মরণোত্তর), জয়াপতি (মরণোত্তর), মোসাম্মাৎ নুরুন্নাহার বেগম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল এবং নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ)। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাসবিদ বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সাবেক এমপি চেমন আরা তৈয়ব মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন। এছাড়া পদক বিজয়ীদের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

এখন থেকে প্রতিবছর ৮ আগস্ট বঙ্গমাতার জন্মদিনে এই পদক দেয়া হবে।অনুষ্ঠান থেকে নারীদের আর্থিক সাহায্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গমাতার ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে দেশের সকল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের তালিকা অনুযায়ী ৬৪ জেলার ৪ হাজার অসচ্ছল নারীকে সেলাই মেশিন এবং মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ২ হাজার নারীকে ২ হাজার টাকা করে মোট ৪০ লাখ নগদ টাকা ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রমও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন এবং নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা না ভেবে দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভেবেছেন উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সব সময় প্রেরণা জুগিয়েছেন আমার মা (বঙ্গমাতা)। আমার মা কখনও সামনে আসেননি, কখনও কোন মিডিয়ার সামনে যাননি, কখনও নিজের নামটা ফলাতে চাননি। তিনি নীরবে পাশে থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার বাবাকে সহযোগিতা করে গেছেন, সমর্থন দিয়ে গেছেন। আমি মনে করি সব থেকে বড় ত্যাগ তিনি স্বীকার করে গেছেন।

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অসীম ধৈর্য, সাহস ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে এটাই বলতেন যে, সংসার নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না, চিন্তা করতে হবে না। আমাদের কথা ভাবতে হবে না। তুমি দেশের কাজ করছ, দেশের কাজই করো, দেশের কথাই চিন্তা করো। যখনই আমার বাবা বারবার কারাগারে গেছেন, আমার মা কিন্তু সব সময় তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন। কারাগারে গিয়ে সব সময় তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) সেই কথাগুলো বলতেন।’বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একদিকে সংসার সামলেছেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো যেন সঠিক সময়ে সঠিকভাবে নেয়া যায় তার ব্যবস্থাও করেছেন। প্রত্যেকটা আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গমাতার অবদান রয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পাকিস্তানী গোয়েন্দারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সব সময় রিপোর্ট দিত। ওই রিপোর্টগুলো প্রকাশ করার সময় তিনি দেখেছেন, সেখানে তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে কোন রিপোর্ট নেই। যদিও তাঁর মা ছিলেন রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ও গোপনে দলের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে গোপনে দলের লোকজনের সঙ্গে দেখা করা, ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, তাদের নির্দেশনা দেয়া এবং সেখানে তিনি (বঙ্গমাতা) তাঁর পোশাক পরিবর্তন করতেন। একটা বোরকা পড়ে তারপরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বিশেষ করে পলাশীর মোড়ে বা আজিমপুর কলোনীতে আমাদের কোন আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করা, তাদের দিক-নির্দেশনা দিয়ে আবার ফিরে এসে তিনি আমাদের নিয়ে বাসায় ফিরতেন।এসব বিস্তারিত নিজের বিভিন্ন লেখায় রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই যে একটা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু আমি সব সময় এটা বলি, আমার মা ছিলেন সবচেয়ে বড় গেরিলা এবং অসম্ভব স্মরণ শক্তি ছিল বঙ্গমাতার। আর বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে আমার মা নিয়েছিলেন বলেই কিন্তু আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের বাড়িতে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকও হয়েছে। ছয় দফা ছেড়ে অনেক নেতা চলেও গেছেন। আমার মা তখন খুব শক্ত ছিলেন ছয় দফার পক্ষে। ৬-দফা আন্দোলনেও বঙ্গমাতা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে তিনি (বঙ্গমাতা) যে কতটা সচেতন ছিলেন সেটা বড় মেয়ে হিসেবে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। ৬ দফা না ৮ দফা, এটা নিয়ে ওই সময় নেতারা নানা কথা বলতেন। কিন্তু সেই সময় ৬-দফা থেকে একচুল, দাঁড়ি-কমাও এদিক-ওদিক যাবেন না, এটাই ছিল তাঁর (বঙ্গমাতা) সিদ্ধান্ত। আমার মা বুঝেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ৬ দফার একটি দাঁড়ি, কমাও বদলাবে না। আর সেটাই আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে পাস হয়েছিল।তিনি বলেন, জাতির পিতার সহচর হিসেবে বঙ্গমাতা এক হাতে যেমন সংসার সামলেছেন, তেমনি অনেক সময়োচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করেছেন। একদিকে সংসার সামলানোর পাশাপাশি স্বাধীনতার জন্য প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এই দলকে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ যেন সবসময় সঠিক পথে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলতে পারে সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। সমস্ত তথ্য বাবার (বঙ্গবন্ধু) কাছে পৌঁছে দেয়া এবং জেলখানায় থাকা বাবার কাছ থেকে সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে এসে দলের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার মতো কাজগুলোও তিনি (বঙ্গমাতা) গোপনে করেছেন। এভাবেই তিনি তাঁর পুরো জীবনটাকে উৎসর্গ করেন আমার বাবা যে আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছেন, সেই আদর্শের কাছে।

বঙ্গমাতা আজীবন অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন-যাপন করতেন উল্লেখ করে তাঁর কন্যা সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, কখনও রাজনৈতিক নেতা হতে হবে, রাজনীতি করে কিছু পেতে হবে- সেই চিন্তা কখনও তাঁর (বঙ্গমাতা) ছিল না। কোন সম্পদের প্রতিও তাঁর কোন আগ্রহ ছিল না। এভাবেই নিজের জীবনকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন। জাতির পিতার পাশে থেকে সব সময় প্রেরণা জুগিয়েছেন আমার মা। এটাই সব থেকে বড় ত্যাগ স্বীকার বলে আমি মনে করি।বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য যারা ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০১’ পেয়েছেন তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী এ বছরই প্রথমবারের মতো জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্যাপন এবং ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক’ প্রদান করা হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গমাতা, সঙ্কটে-সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী’ যথার্থ হয়েছে উল্লেখ করে করেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিটি সংগ্রামে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অসামান্য অবদান রয়েছে।

আমার মা সারাজীবন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের মানুষের জন্য চিন্তা করতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বামীর কাছে মানুষের নানা ধরনের চাহিদা বা আকাক্সক্ষা থাকে। অনেক কিছু পাওয়ার থাকে। আমার মায়ের (বঙ্গমাতা) বাবার (বঙ্গবন্ধু) কাছে কোন কিছুর চাহিদা ছিল না। তিনি সবসময় বলতেন, তুমি দেশের কথা চিন্তা করো, আমাদের কথা ভাবতে হবে না। আমার মায়ের যে অবদান রয়েছে, এ দেশের রাজনীতিতে শুধু না, বাংলাদেশের মানুষের অগ্রগতিতেও তাঁর অবদান রয়েছে।বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গমাতা বিশ্বাস করতেন প্রতিটি মেয়ের শিক্ষা নেয়া উচিত এবং আর্থিক সচ্ছলতা দরকার। খালি ‘অধিকার অধিকার’ বলে চিৎকার করলেই হবে না। অধিকার আদায় করতে হবে। শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করে প্রতিটি মেয়েকেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে- সেই উপলব্ধিতা তাঁর ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসনে বঙ্গমাতার নিজের গহনাগাটি সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েও তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ সময় মায়ের বই কেনা এবং বই পড়ার অভ্যাসের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার মায়ের অভ্যাস ছিল বই কেনা। নিউমার্কেট থেকে তিনি বই কিনতেন। আমাদেরও নিয়ে যেতেন। আমার বাবা বার্ট্রান্ড রাসেলের বই পড়ে ইংরেজী থেকে অনুবাদ করে মাকে শোনাতেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com