1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রানা, ও মেহেবুব হোসেন রিপনের নেতৃত্বে এক বিশাল র‍্যালি গোপালগ‌ঞ্জে দিনমুজুর‌কে হত্যা মামলায় গ্রেফতার, নবজাতক দুই বোন নিয়ে দিশেহারা ছোট ভাই শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ কর‌তে হ‌বে, না করলে প্রশাসক নিয়োগ হ‌বে- সাখাওয়াত বাংলাদেশ থেকে জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে নিবে আজারবাইজানে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সিপিজের খোলা চিঠি ড. ইউনুসকে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম গ্রেফতার শপথ নিলেন নতুন তিন উপদেষ্টা কু‌মিল্লায় ডাকাতির নাটক সাজিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতিজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ক‌রে চাচা রাজধানীর কাকরাইলে সভা সমা‌বেশ নি‌ষিদ্ধ

অভাব টান দিয়েছে ঘরের আসবাপ‌ত্রে

মাসুম মোল্লাঃ
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১
  • ৩৩৬ বার পঠিত

৯ বছরের অঙ্কন বুঝতে পারে না, তাদের বাসা থেকে কেন লোকজন শোকেস নিয়ে যাচ্ছে। বাবার বুকশেলফ কেন খালি করা হচ্ছে, তা-ও সে জানে না। ছোট্ট বসার ঘরের দেয়ালে ঝোলানো বাবার আঁকা ছবিগুলো থাকবে তো? অঙ্কনের মনে সে প্রশ্ন জাগে কি না, জানি না। কিন্তু বুঝতে পারি, ঢাকা শহরের অসংখ্য বাসার মতো আরও একটা বাসার দরজায় ঝুলতে যাচ্ছে ‘টু লেট’।

 

ভবিষ্যতে যাঁরা এ বাসায় উঠবেন তাঁরা জানবেন না, তিন মাস ভাড়া দিতে না পেরে একজন শিল্পী একদিন এ বাসাটি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ছেড়ে দেওয়ার আগে তিনি ও তাঁর পরিবার প্রায় সতেরো বছরের সাজানো সংসার থেকে একটা একটা করে আসবাব বিক্রি করেছিলেন। তবু বাসাভাড়া আর খাবারের অনিশ্চয়তা ঘোচেনি।

১ নম্বর উত্তর আদাবর ধরে যে রাস্তাটা চলে গেছে বাজারের দিকে, সে রাস্তার মাঝামাঝিতে মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদ। কথা ছিল নাজির হোসেন মসজিদের সামনে দাঁড়াবেন। রাত ৯টা। ধীরলয়ে পড়তে থাকা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যখন নির্দিষ্ট জায়গায় রিকশা থেকে নামলাম, তখন রাস্তার একদিকে ব্ল্যাকআউট। অন্যদিকে আলো। কোনো-মতে খুঁজে নিই নাজিরকে। তারপর তাঁর বাসায় যাই। ছোট্ট বসার ঘরের জানালার পাশে বসেন তিনি। খোলা জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখা যায়। বৃষ্টির দিন বলে অন্ধকার আরও ঘনীভূত। জানতে চাই, কেমন আছেন।

 

কোনো ভণিতা না করে পটুয়া নাজির হোসেন বললেন, নিজের আঁকা ছবি, সংগ্রহ করা বই আর ক্যাটালগগুলো তিনি বিক্রি করে দিতে চান। তিন মাসের বাসাভাড়া বাকি। বাসার মালিক তাগাদা দিয়ে গেছেন। বুকশেলফ আর শোকেস বিক্রি করে দিয়েছেন ইতিমধ্যে। লকডাউন উঠলেই স্ত্রী-সন্তানকে পাঠিয়ে দেবেন নিজের শহরে, পার্বতীপুর। সেখানেও ভাড়া বাসায় থাকতে হবে। কিন্তু ঢাকার চেয়ে অনেক কম ভাড়া সেখানে। আপাতত এই সিদ্ধান্ত। সব ঠিক হয়ে গেলে আবার ঢাকায় ফিরে আসবেন সবাই।

আমি শুনে যাই। শিল্পী নাজিরের ৯ বছরের সন্তান অঙ্কন এ–ঘর ও–ঘর করে। আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার বাবা আর আমি তখন সংসারের জটিলতম হিসাব নিয়ে ব্যস্ত। এরই মাঝে নাজিরের স্ত্রী শাম্মী লেবু–চা আর বিস্কুট নিয়ে এলেন। বললেন, তাঁর চাকরিটা আছে। কিন্তু বেতন নেই। শাম্মী একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন ১৬–১৭ বছর। করোনায় বেতন কমতে কমতে শেষে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ভবিষ্যতের আশায় স্কুলটি এখনো বন্ধ হয়নি। ‘সবাই লোন দিতে চায় ভাইয়া, আমরা নিতে চাই না। এত দিন দুজনে ইনকাম করে মিলেঝুলে চলেছি। এখন সম্ভব না’–বলেন শাম্মী। এটাও জানান, নাজিরের ওপর যে অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে, তার বোঝা কিছুটা কমাতেই তিনি সন্তানকে নিয়ে পার্বতীপুরে চলে যেতে চান। ট্রাকভাড়া যাতে না লাগে, সে জন্য আসবাব বিক্রি করেছেন। বাকিগুলো বিক্রির চেষ্টা চলছে।

আপনার যে কোনো পোলো শার্ট অর্ডার করতে এখনি কল করুন

ঢাকা ছাড়াই কি সমাধান, জানতে চাই পটুয়া নাজিরের কাছে। জানতে চাই, সেই শিল্পী নাজির হোসেনের কাছে, ২০১৯ সালে যাঁর ৫০টি একক প্রদর্শনী হয়েছে দেশ–বিদেশে। বাঘের ছবি আঁকেন বলে সবাই একনামে যাঁকে ‘টাইগার নাজির’ বলে চেনে। জাপান দূতাবাস যাঁর বড় পৃষ্ঠপোষক ছিল। গুলশান–বনানীর কয়েকটি গ্যালারিতে নিয়মিত যাঁর কিছু কিছু ছবি বিক্রি হতো। ঢাকা ও কলকাতায় যাঁর আঁকা ছবি দিয়ে বইয়ের প্রচ্ছদ হয়েছে একাধিক। সেই নাজির নিশ্চুপ।

একপর্যায়ে বললেন, ‘চেষ্টা করে গেলাম ভাই। আর তো পারা যায় না। আগে না খাওয়াদাওয়া। তারপর শিল্পসাহিত্য। কাল কী হবে, সে নিয়েই ভাবছি। ভবিষ্যতের চিন্তা তো করতেই পারছি না।’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি। পটুয়াকে বলি, চলেন, ছবি তুলি। তিনি জানান, ব্যান্ডানা মাথায় না দিয়ে তিনি ছবি তোলেন না। তাই করলেন। আমরা প্রাণপণে চেষ্টা করলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে, অঙ্কনের জন্য। সে কি বুঝতে পেরেছে, তাদের বুকশেলফ ফাঁকা কেন?

আকাশ গোমড়া। বৃষ্টি নেই। আদাবরের রাস্তা ধরে হাঁটছি। হাতে পটুয়া নাজির হোসেনের শেষ একক প্রদর্শনীর ক্যাটালগ, কিছুটা মলিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com