শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু জাতির জন্য বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক। এ মৃত্যু মানুষ হত্যার সমতুল্য বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রজেক্টে ব্যয়, সীমাহীন দুর্নীতি, অবাধ লুণ্ঠন, রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিপুল অপচয় এবং লাখ কোটি টাকা পাচারের তীর্থভূমির দেশে করোনায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু অগ্রহণযোগ্য।
দীর্ঘ দেড় বছরেরও অধিককাল থেকে মানুষের অবিরাম মৃত্যু সরকারের বিবেক জাগ্রত করেনি। অথচ এখনও মুখে উন্নয়নের ফুলঝুরি আর আত্মতুষ্টির বাগাড়ম্বরে সরকারকে সয়লাব দেখতে পাই। করোনা মহামারীকালে পরপর দুটি বাজেটের একটিতেও জেলায় জেলায় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত এবং আইসিইউ স্থাপন করা হয়নি। এ নিষ্ঠুর নির্মমতা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশে শুধু অক্সিজেন এবং আইসিইউর অভাবে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে। পরিকল্পনাহীনতা এবং অদূরদর্শিতায় এ সমস্ত মূল্যবান জীবনের মৃত্যুর দায় সরকারকে অবশ্যই বহন করতে হবে। সরকার যদি হাসপাতালগুলোতে শুধুমাত্র অক্সিজেন এবং আইসিইউর ব্যবস্থা নিশ্চিত করত তাহলে অনেক মূল্যবান জীবনকে রক্ষা করা যেতো।
রব বলেন, সরকারের কাছে রাষ্ট্রের নাগরিকের জীবন সুরক্ষার চেয়ে উন্নয়নের ডামাডোল প্রচার করাই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫২% হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা নেই এবং ৩৫টি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ নেই। চারিদিকে অক্সিজেন সংকটে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগে থেকেই সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হলেও সরকার স্বাস্থ্যখাতে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বতোভাবে প্রস্তুত বলে ফাঁকা আশ্বাসে জাতিকে শ্রেফ ধোঁকা দিয়েছে। সরকার যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা করোমা সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় একেবারেই অপ্রতুল। ফলে প্রয়োজন আছে এমন অনেক রোগী সময় মত আইসিইউ পাচ্ছে না। আইসিইউর অপেক্ষা করতে করতে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট দ্রুত সংক্রমণের মধ্য দিয়ে সারা বাংলাদেশ যখন বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত তখনও সরকার মানুষের জীবন সুরক্ষার সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান না করে উন্নয়নের নাটক নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ডেল্টার মত আরো সংক্রামক ভেরিয়েন্ট গুলো দ্রুত অনেক দেশে প্রভাবশালী স্ট্রেইন হয়ে উঠেছে।
জেএসডি প্রধান বলেন, আমরা এই মহামারীর খুব বিপজ্জনক একটা সময়ে রয়েছি। বিশেষ করে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বিপজ্জনক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে এবং দেশব্যপী জনগণের মাঝে আতঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার নতুন ঢেউয়ের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কবার্তা বিবেচনায় করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং করোনা মহামারীর চলমান বিপজ্জনক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সম্ভাব্য তৃতীয় ও চতুর্থ ঢেউ মোকাবেলা করে সকল নাগরিকের জীবন রক্ষার লক্ষ্যে অবিলম্বে সকল হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ এবং আইসিইউ স্থাপন করতে হবে। প্রয়োজনে মেগা প্রজেক্ট থেকে অর্থ প্রত্যাহার করে স্বাস্থ্য খাতে এবং বিদ্যমান লকডাউন নিরন্ন মানুষের নিকট খাদ্য প্রেরণের মাধ্যমে মৌলিক করণীয় সম্পাদন করা এই মুহূর্তে জরুরি।