করোনাভাইরাস মহামারীতে দুর্দশায় পড়া ভারতের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশই। জরুরি সাহায্য আসছে প্রচুর। কিন্তু চরম খারাপ অবস্থায় থাকা ভারতের অনেক রাজ্যেই এখনও কোনও সাহায্য পৌঁছায়নি। কোথায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তাও অনেকেই জানেন না।
গত সপ্তাহের শুরু থেকে বিমানভর্তি অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, ঔষধ পৌঁছেছে ভারতে। শুধু রোববারেই দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৫টি আলাদা ফ্লাইটে পৌঁছায় প্রায় ৩০০ টন সাহায্য।
কিন্তু তা সময়মত গন্তব্যে না পৌঁছানোয় প্রশ্ন জেগেছে, যাদের জন্য এই ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে তা কি আদৌ তাদের কাছে পৌঁছচ্ছে? রাজধানী দিল্লির বাইরে অন্যান্য বিপর্যস্ত জায়গাগুলোতেই বা সাহায্য কতটা পৌঁছাচ্ছে?
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরুরি ওইসব স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জামের প্রথম চালান ভারতে পৌঁছানোর পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তা বিমানবন্দরে পড়ে ছিল গত সোমবার পর্যন্ত। স্থানীয় গণমাধ্যমকে এমন কথাই জানিয়েছেন রাজ্য কর্মকর্তারা।
তবে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব সরঞ্জাম বিতরণে কোনও দেরির কথা জোর গলায় অস্বীকার করেছে। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতি দিয়ে মন্ত্রণালয় বলেছে, সঠিক বিতরণ নিশ্চিত করতে সরকার ২৬ এপ্রিল থেকে নতুন নিয়মানুগ পদ্ধতি চালু করেছে এবং প্রয়োজনমত দ্রুত সাহায্য সরবরাহের চেষ্টায় সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। কোভিডে বিপর্যস্ত ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কর্মকতারা বিবিসি-কে জানিয়েছেন, তারা এখনও কোনও সাহায্য সরবরাহ পাননি।
কোভিডে চরম খারাপ পরিস্থিতিতে থাকা কেরালা গত বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্তও কোনও সাহায্য পায়নি। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওইদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি খোলা চিঠি দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে রাজ্যের জন্য অক্সিজেন ও অন্যান্য সরঞ্জাম চেয়ে পাঠান।
বিদেশী ত্রাণ কোথায় গেল !
ভারতের অনেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন, সাহায্যগুলো কখন, কীভাবে দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে তা সেরকমভাবে জানা যাচ্ছে না।
ভারতের হেলথকেয়ার ফেডারেশনের প্রধান ড. হারশ মহাজন বিবিসি-কে বলেন, “সাহায্যগুলো কোথায় যাচ্ছে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা নেই। মনে হয় লোকজন জানে না। আমি তিন/চার জায়গায় চেষ্টা করেছি। কিছুই পাইনি।”
বিভিন্ন এনজিও ত্রাণের ব্যাপারে জানতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করেছে। সাহায্য কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে কারও কোনও স্বচ্ছ ধারণা আছে বলে মনে করেন না অক্সফাম ইন্ডিয়ার ডাইরেক্টর অব প্রোগ্রাম এবং এডভোকেসি পঙ্কজ আনন্দ।
হতাশা প্রকাশ করেছে সাহায্য পাঠানো দেশগুলোর মানুষও। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন জনগণের করের টাকায় ভারতে পাঠানো জরুরি সাহায্য কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন একজন সাংবাদিক।
যুক্তরাজ্যের পাঠানো হাজারখানেক ভেন্টিলেটর বর্তমানে কোথায় আছে তা পররাষ্ট্রদপ্তরের কাছে বিবিসি জানতে চাইলে মেলেনি কোন উত্তর। পররাষ্ট্রদপ্তর বরং জানায়, সাহায্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে তারা ভারতের রেড ক্রস কার্যালয় এবং সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। পাঠানো সাহায্য কীভাবে এবং কোথায় দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ভারত সরকারের একান্ত বিষয়।
ভারতের মন্ত্রিসভার সদস্য হরদ্বীপ সিং পুরি সোমবার টুইটারে জানান, হংকং থেকে আসা ১০৮৮ অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরের ৩৫০টি পাঠানো হয়েছে মুম্বাইয়ে, বাকিগুলো দিল্লিতেই আছে। পাঞ্জাবে পাঠানো হয়েছে ১০০ অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, এবং আড়াই হাজার ডোজ ঔষধ। তামিল নাড়ুতে প্রথম দফায় মঙ্গলবারে পৌঁছেছে যুক্তরাজ্যের দেওয়া ৪৫০ সিলিন্ডার অক্সিজেন।
ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে সাহায্য কোথায় এবং কীভাবে যাচ্ছে সে ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে আরও তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। বিরোধীদল কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, “আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি এবং দাবি জানিয়ে বলছি…. এই সাহায্য কোথা থেকে আসছে এবং কোথায় যাচ্ছে? প্রতিটি ভারতীয়কে তা জানান। এ ব্যাপারে আপনার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।সুত্র:বিডিনিউজ