চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে মাদ্রাসাছাত্রদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়কে যানবাহন চলাচল।ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মুসল্লি ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে হাটহাজারীর মাদ্রাসার ছাত্ররা আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বেলা আড়াইটা থেকে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়কে যান চলাচল। সন্ধ্যা সাতটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত লোকজনকে আনা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাঁদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার নাগরিক খবরকে জানান, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে হাসপাতালে থাকা মাদ্রাসাছাত্রদের একটি সূত্র নিহতদের পরিচয় জানিয়েছেন।
তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে তিনজন মাদ্রাসাছাত্র। তাঁরা হলেন কুমিল্লার রবিউল ইসলাম, মাদারীপুরের মেহরাজ ও হাটহাজারীর জামিল। অন্যজন সড়কের পাশের দরজির দোকানের কর্মী আবদুল্লাহ। খবর পেয়ে বিকেল চারটার দিকে স্থানীয় সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ও পুলিশ সুপার রশিদুল হক ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা এখন থানায় অবস্থান করছেন।সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এভাবে চলতে পারে না। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজের পর বেলা আড়াইটার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মাঠে জড়ো হন ছাত্ররা। আগের কোনো কর্মসূচি না থাকলেও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে মিছিল নিয়ে পাশের চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা।মিছিলটি হাটহাজারী থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় সড়কের পাশে থাকা নির্মাণসামগ্রী ইটের খোয়া নিয়ে ছাত্ররা পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে থানার দরজা-জানালার কাচ ভেঙে যায়। এরপর পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এভাবে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় আধা ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। এরপর ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন।সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্ররা হাটহাজারী ডাকবাংলোতে হামলা চালান। সেখানে থাকা শিক্ষানবিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ফারাবী, উপপুলিশ পরিদর্শক মেহেদী হাসান ও বিশেষ শাখার কনস্টেবল মো. সোলায়মানকে মারধর করে আটকে রাখেন তাঁরা। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও এসে অবস্থান নেন। এখন তিন পক্ষ তিন দিকে অবস্থান করছে—পুলিশ থানায়, ছাত্ররা মাদ্রাসায় ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হাটহাজারী বাসস্টেশন এলাকায়।
হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ২৬ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, ছাত্ররা হাটহাজারী থানা, ভূমি অফিস, ডাকবাংলোতে হামলা করে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে হাটহাজারীতে। পরিস্থিত এখনো থমথমে রয়েছে।