মাসুম মোল্লাঃ দিনের ম্যাচেই স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের কাজটি করে রেখেছে নিউজিল্যান্ড। একই গ্রুপে হওয়ায় খাঁদের কিনারায় থাকা ভারতকে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে টিকে থাকতে হলে শুধু জিতলেই চলতো না, প্রয়োজন হতো বড় রান রেটের ব্যবধানও। এশিয়ার পরাশক্তিদের এমন বাগে পেয়েও সুযোগটি হেলায় হারালো আফগানিস্তান। তাদের বিপক্ষে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ এক জয় দিয়ে সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখল বিরাট কোহলির দল।
গতকাল আবুধাবিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বোলার নির্ভর আফগানদের নির্বিষ বোলিংয়ে চলতি আসরের সর্বো”চ রান তোলে ভারত। আগের দুটি ম্যাচেই খাবি খাওয়া দলটির দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল আর রোহিত শর্মা যেন জ¦লে উঠলেন স্ব-মহিমায়। ঋষভ পন্ত আর হার্দিক পান্ডিয়াও খেললেন ঝড়ো দুই ক্যামিও। যেখানে অবদান আফগানিস্তানের দৃষ্টিকটু ফিল্ডিং, সকলেই যেন নেমেছিলেন সহজ ক্যাচ ছাড়ার প্রতিযোগীতায়! আর তাতে মাত্র ২ উইকেট হারানো ভারত উঠলো রানের চূড়ায়। আগের দুই ম্যাচে ১৫২ আর ১১০ রানে থামা রবি শাস্ত্রীর দল এদিন নির্ধারিত ২০ ওভারে করলো ২১০।
পরে জবাবে ব্যাট করতে নেমেও সেই রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়ন্তনহীন ব্যাটিংয়ের ডালি সাজিয়ে, ভুল-ভাল শটের পসরা মেলে মোহাম্মদ নবীর দল খেলল অপেশাদার এক ম্যাচ। তাতে ছিলনা কোনো পরিকল্পনার ছাপ, ছিলোনা নিবেদনের লেশমাত্র। পরিণাম, আফগানদের ৬৬ রানের হারানোর স্বস্তি নিয়ে সেমির লড়াইয়ে টিকে থাকল ভারত। সুপার টুয়েলভে পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর ভারতের সেমিফাইনালে খেলাই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায়। আফগানিস্তানকে হারিয়ে সে পথে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াল কোহলির দল।
প্রশ্নের শুরুটা হয়েছিল ম্যাচের শুরুতেই। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর আফগান অধিনায়ক নবী জানিয়েছিলেন, কোন ম্যাচে টসে জিতলে তাদের লক্ষ থাকবে আগে ব্যাটিং। কারণ হিসেবে তখন বলেছিলেন, প্রথমে ব্যাট করে তাদের ব্যাটসম্যানরা একটি বড় সংগ্রহ এনে দিবেন এবং সেটি তাদের বোলাররা ডিফেন্ড করবে। শুধু বিশ্বকাপ না প্রায় সব ম্যাচে আফগানিস্তান এই নীতি মেনে চলে। টসে জিতলেই তারা আগে ব্যাটিং নেয়। তবে এদিন সুপার টুয়েলভের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টসে জিতেও আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন আফগান অধিনায়ক!
এর পর থেকেই বিস্ময় আর উষ্মা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছেয়ে ফেলেছেন অনেকেই। এমনকি ম্যাচের টিভি ধারাভাষ্যকাররাও বলাবলি করছিল তারাও বুঝতে পারছেন না কেন ভারতের বিপক্ষে বোলিং নিল আফগানিস্তান! বিশেষজ্ঞদের মতে, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পার হয়ে একটু রাত হলেই আবুধাবির মাঠে শিশির পড়া শুরু হয়। ফলে তখন রান তোলাটা একটু কঠিন হয়ে যায়। তাই ভারতের বিপক্ষে টসে জিতে নবীর বোলিং নেয়ার সিদ্ধান্তকে নেহায়তই বোকামি বলছেন ক্রিকেট ভক্তরা। পরে সময় যত গড়িয়েছে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতের মিল খুঁজে পাওয়ায় সেই সব ক্রিকেটভক্তদের অনেককেই ম্যাচটি ‘পাতানো’ বলেও মন্তব্য করেছেন!
‘পাতানো’ ম্যাচের আলামত হিসেবে প্রত্যেকেই বড় রান তাড়ায় আফগানদের শরীরি ভাষাকে সামনে এনেছেন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৭ রান তোলে আফগানিস্তান। দুই মারকুটে ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই এবং মোহাম্মদ শাহজাদ আউট হয়ে যাওয়ায় দ্রুত রান তোলার পথ থেকে ছিটকে পড়ে মোহাম্মদ নবীর দল। ১৫ বলে ১৩ রান করে যশপ্রীত বুমরাকে উইকেট দেন জাজাই। ০ রানে মোহাম্মদ শামির বলে ক্যাচ তুলে আউট হন শাহজাদ। রহমানউল্লাহ গুরবাজ তখনো উইকেট থাকায় লড়াইয়ের আশা ছিল আফগানিস্তানের।কিš‘ সপ্তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার বলে ক্যাচ তুলে আউট হন ১০ বলে ১৯ রান করা গুরবাজ। ১০ ওভারের মধ্যে গুলবদিন নঈবকেও (১৮) হারিয়ে চাপে পড়ে যায় আফগানিস্তান। জয়ের জন্য শেষ ১০ ওভারে ১৫০ রান দরকার ছিল দলটির। ভারতের বোলারদের সামনে লক্ষ্যটা আফগানিস্তানের জন্য সামর্থ্যরে বেশি হয়ে গিয়েছিল। শেষ ১০ ওভারে ৮৩ রান তুলেছে আফগানিস্তান। রশিদ, নবীদের ক্যাচ অনুশীলন শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ১৪৪ রানে থামে দলটি।
ফেভারিট হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করা ভারতের শিরোপা জয়ের অভিযাত্রা শুরু হয় গত ২৪ অক্টোবর- পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ১০ উইকেটে লজ্জার হারের ক্ষত শুকিয়ে সপ্তাহবাদে মাঠে নেমেও কোহলির দল ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি নিউজিল্যান্ড ম্যাচেও। এতদিন পর ভারতের সমর্থকেরা একটু হাঁফ ছাড়তে পারলেন। সুপার টুয়েলভে যে প্রথম জয়ের মুখ দেখল ভারত! ৩ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে নিজেদের গ্রুপে পয়েন্ট তালিকার চারে উঠে এল ভারত। বাকি দুই ম্যাচ জিততেই হবে কোহলির দলকে, এর পাশাপাশি অন্য ম্যাচের ফলেও তাকিয়ে থাকতে হবে।