আফগানরা দৃশ্যত তালেবান শাসনের অধীনে জীবন উপভোগ করছেন। বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ছবিতে দেখা গেছে, আফগানরা রেস্তোরাঁয় জড়ো হয়েছেন কিংবা সবাই মিলে পার্কে প্যাডেল নৌকায় চড়ে অবসর উপভোগ করছেন।
হেরাতে শুক্রবার সশস্ত্র তালেবান সৈন্যরা কাছাকাছি পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও যুবকদের একসাথে আড্ডা মারতে ও হাসাহাসি করতে দেখা যায়। আফগানরা রেস্তোরাঁয় ভিড় করছে, পার্কে জড়ো হচ্ছে এবং এমনকি পানিতে চিত্তাকর্ষকভাবে নৌকা চালানো উপভোগ করছে এমন দৃশ্যগুলোতে পরিস্কার যে তাদের জীবন স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
গত মাসে সাধারণ মানুষের সাথে তালেবান যোদ্ধাদের ক্রিকেট খেলতে দেখা যায় যা একই ধরনের বার্তা দেয়। তালেবানরা তাদের ইমেজকে আরও প্রগতিশীল এবং মধ্যপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার চেষ্টা করছে। যদিও নারীদের জন্য ক্রিকেট ও ফুটবলের মতো খেলাধূলা নিষেধ করা হয়েছে এবং ছোট-খাট কিছু বিক্ষোভ হয়েছে তবে তালেবান যোদ্ধারা বলছেন, তারা বদলে গিয়েছেন এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।
একজন কমান্ডার হাফেজ সুলতান আহমেদ স্কাই নিউজকে বলেন, ‘আমরা বদলেছি। আমরা অনেক বদলে গেছি। আল্লাহর প্রশংসা করুন, আমাদের আচরণ এখন খুব ভালো … আমরা ভদ্র, আমাদের আচার -আচরণ ভালো এবং আমাদের আচরণ অনেক উন্নত। আমরা গত সরকারের চেয়ে অনেক ভালো। কাবুল এখন নিরাপদ। নিরাপত্তা ভালো।
তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর অনেক মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে রাজধানী কাবুলে, নানা উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছিলো। কিন্তু একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ, যারা এই ভয়াবহ যুদ্ধ দেখে অভ্যস্ত, তাদের মধ্যে যেন স্বস্তি ফিরে এসেছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলের লোগারের ওইসব এলাকা ঘুরে এই তথ্য জানিয়েছেন বিবিসির সংবাদদাতা সেকান্দার কিরমানি। একজন গ্রামবাসী বিবিসিকে বলেন, ‘পরিস্থিতি আগে খুবই খারাপ ও বিশৃঙ্খল ছিল। দোকানে বা বাজারে যাওয়ার সুযোগও হতো না আমাদের। কিন্তু এখন আমি যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারি এবং নিজে উপার্জন করতে পারি।’
কাবুল থেকে স্কাই নিউজের নারী সংবাদদাতা অ্যালেক্স ক্রোফোর্ড জানিয়েছেন, তার টিম ভারপ্রাপ্ত সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যে আফগানিস্তান ও রাজধানী কাবুলে ঘুরে বেড়াতে পেরেছেন। তিনি বলেন, একাধিক সশস্ত্র তালেবান চেকপয়েন্ট রয়েছে যেখানে আমাদের সমস্ত কাগজপত্র কয়েকবার যাচাই -বাছাই করা হয় – কিন্তু তার সাথে প্রায়ই তারা আনন্দদায়কভাবে আমাদের ‘স্বাগতম, স্বাগত’ জানাতে থাকে। কিন্তু যখনই আমরা কোন তালেবানের সামনে পড়েছি, তারা বিদেশী সাংবাদিকদের কাজের সুবিধার্থে তাদের পথ থেকে সড়ে গিয়েছে, এটি আফগানদের জন্য স্পষ্টতই একটি ভিন্ন চিত্র।’
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদেরকে তাদের সাথে টহলে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে তারা ভেবেছিল শুধু স্কাইয়ের ক্যামেরাম্যান রিচি মকলার তাদের পিকআপ ট্রাকের পেছনে উঠতে যাচ্ছেন। যখন আমিও তার পিছনে উঠি, তখন এই বিদেশী নারীর কারণে তালেবান পুরুষদের মধ্যে হঠাৎ আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা অবিলম্বে ট্রাক থেকে নেমে যায়। কেবলমাত্র আমাকে নামিয়ে নেয়ার জন্য একজনকে রেখে যায়।’ তিনি আরও বলেন, তাদের মধ্যে দু’জনকে তাদের সিনিয়ররা গাড়িতে করে আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য জোড় করে পাঠায়। কিন্তু যাত্রাপথে একজন আমার পুরো সময় আমার দিকে পিছনে ফিরে বসে থাকেন এবং অন্যজন বেশিরভাগ সময় তার পরিহিত চাদরের পিছনে লুকিয়ে ছিলেন। দু’জনকেই লজ্জিত ও বিব্রত মনে হচ্ছিল।’ সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ, বিবিসি, স্কাই নিউজ।