কুমিল্লা হোমনার ছেলে সুমন, পেশায় কসমেটিকস ব্যবসায়ী। ঢাকা চকবাজার থেকে কসমেটিক্স কিনে এনে নিজ এলাকায় বিক্রি করেন। অভাবের সংসার। দুই ভাই, দুই বোন। ছোটখাটো ব্যবসা করে কোনরকম জীবিকা নির্বাহ করেন। একদিন ঢাকা থেকে কসমেটিক্স কিনে বাড়িতে আসার সময় গাড়ির মধ্যে কুমিল্লার( কোতোয়ালি থানার সীমান্তবর্তী এলাকার এক ছেলের সাথে তার পরিচয় হয়। চলন্ত বাসে দুইজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। কথা বলার এক পর্যায়ে কুমিল্লার ছেলেটি কসমেটিকস ব্যবসায়ী সুমনকে প্রস্তাব করে যে, আমি তোমাকে ঢাকা চকবাজার থেকে আরো কম দামে কসমেটিকস দিতে পারবে কুমিল্লা থেকে। কসমেটিকস ব্যবসায়ী সুমন তার কথায় বিশ্বাস করলো। নাম্বার আদান-প্রদান হল।
কসমেটিকস ব্যবসায়ী সুমনের অল্প পুজি। সে চিন্তা করল আমার যেহেতু লাভ বেশি হবে তাই একটু পুজি বেশি নিয়ে কুমিল্লা থেকে কসমেটিক্স আনতে পারলে লাভ হতো বেশি। সেই চিন্তা করে তার মায়ের বাবার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি বাবদ রক্ষিত টাকা তার মায়ের অগোচরে ১ লক্ষ টাকা কৌশলে ড্রয়ার থেকে নিয়ে কুমিল্লা চলে আসেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কুমিল্লা শহরের ছেলেটির সাথে সাথে যোগাযোগ করেন। কুমিল্লা কান্দিরপাড় এলাকা থেকে সুমনকে রিসিভ করে কুমিল্লা চাঁনপুর ব্রিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সহজ-সরল সুমন তখনও বুঝতে পারেনি তার সাথে কি হতে যাচ্ছে। সুমনকে বলা হলো আপনি সিএনজিতে বসেন আর টাকাটা দেন আমি আপনার জন্য কসমেটিকসগুলো নিয়ে আসতেছি। সুমন সরল বিশ্বাসে সিএনজিতে বসে রইল। সময় যাচ্ছে কিন্তু কুমিল্লার ছেলেটি আর ফিরে আসছে না। মোবাইল নাম্বার বন্ধ। নিরুপায় হয়ে সুমন কাঁদতে কাঁদতে কোতোয়ালী থানায় এসে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির নামে ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আনায়ারুল আজিম এর নির্দেশে অভিযোগের বিষয়ে এসআই মফিজুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তে নেমে প্রতারক ছেলেটির মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারকের নাম ঠিকানা বের করে অবস্থান শনাক্ত করেন তদন্তকর্মকর্তা মফিজুল। প্রতারক অপুকে চিহ্নিত করেন,তার বাড়ি কোতোয়ালি থানাধীন পাঁচথুবী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এসআই মফিজুলের অক্লান্ত পরিশ্রমে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সমঝোতার মাধ্যমে প্রতারক অপুর পরিবার থেকে ১ লক্ষ টাকা ফেরত নিয়ে আসেন। পরে প্রতারণার শিকার সুমনের মায়ের সাথে যোগাযোগ করলে সুমনের মা টাকাটা সুমনকে দিতে না করেন। পরে সুমনের মা হোমনা থেকে কুমিল্লা আসেন। থানায় সুমনের মায়ের নিকট ১ লক্ষ টাকা বুঝিয়ে দিলেন এসআই মফিজুল ইসলাম।
টাকা পেয়ে সুমনের মা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন। সুমনের মা বলেন উপযুক্ত দুইটি মেয়েকে বিবাহ দেওয়ার জন্য টাকাগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। তার নিজের ছেলে সুমন লোভে পড়ে ঘর থেকে সঞ্চিত এক লক্ষ টাকা নিয়ে জলে ফেলে দিয়েছিল। আজ আপনি পুলিশ টাকাটা উদ্ধার করে দিতে না পারলে কখনও এ টাকাটা পেতাম না।
এ বিষেয কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতারক থেকে এক লক্ষ টাকা উদ্ধার পূর্বক অসহায় মায়ের নিকট বুঝিয়ে দিতে পেরে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি। অসহায় মা মন ভরে আমার জন্য দোয়া করলেন এবং বলে গেলেন তার গ্রামের বাড়িতে ৫ টি রাজহাঁস আছে সেখান থেকে তার পছন্দের ১ টি রাঁজহাস আমার জন্য নিয়ে আসবেন।তিনি যদি তার হাঁস গ্রহণ না করেন তাহলে তিনি এ টাকা নিবেন না। পরে বুঝিয়ে উনাকে বিদায় দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা মফিজুল।
এসআই মফিজুলের মানবিকতায় টাকা গুলো পেয়ে বৃদ্ধা মহিলা পুলিশের জন্য দোয়া করতে করতে থানা এলাকা ত্যাগ করলেন।