আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল পতনের পর একটি পরিষদের মাধ্যমে দেশটি পরিচালিত হতে পারে। যার সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন তালেবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুনদজাদা। ইসলামি আন্দোলনটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন তথ্য দিয়েছেন।
এছাড়া সাবেক পাইলট ও সেনাদের তাদের দায়িত্বে ফিরতে প্রস্তাব দিতে পারে তালেবান। তাদের সিদ্ধান্ত-নির্ধারণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি এমন দাবিই করেছেন। এভাবে সেনা সংগ্রহ করায় কতটা সফলতা আসবে, তা অবশ্যই দেখার বিষয়। গত ২০ বছরে কয়েক হাজার আফগান সেনাকে হত্যা করেছে তালেবান। সম্প্রতি মার্কিন-প্রশিক্ষিত পাইলটদেরও হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে তারা।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে আফগানিস্তান যেভাবে শাসিত হয়েছিল, এবারও ক্ষমতার অবকাঠামো সেভাবেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন শীর্ষ নেতা মোল্লা ওমর ছায়ার মতো ভূমিকা পালন করেছেন। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তিনি একটি পরিষদের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন।
পরিষদ প্রধানের ওপরে থেকে নিজের দায়িত্ব পালন করবেন হিবাতুল্লাহ আখুনদজাদা। পরিষদ প্রধান হবেন প্রেসিডেন্টের সমমর্যাদার। হাশিমি বলেন, হিবাতুল্লাহর সহকারী থাকবেন প্রেসিডেন্টের ভূমিকায়।
তালেবানের শীর্ষ নেতার তিনজন সহকারী আছেন। তারা হলেন, মোল্লা ওমরের ছেলে মৌলভী ইয়াকুব, হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি ও আবদুল গনি বেরাদার। দোহায় তালেবান কার্যালয়ের প্রধান বেরাদার। এছাড়াও তিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতাদেরও একজন।
তালেবান কীভাবে আফগানিস্তান শাসন করবে, তা নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আফগানিস্তানে গণতন্ত্র আসছে না বলে নিশ্চিত করেন হাশিমি। তিনি বলেন, সেখানে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাওয়া হচ্ছে না। কারণ আফগানিস্তানে গণতন্ত্রের কোনো ভিত্তি তৈরি হয়নি।
হাশিমি বলেন, আফগানিস্তানে কী ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত আছে, তা নিয়ে আলাপ করবো না। কারণ এটা খুবই পরিষ্কার যে, এখানে শরিয়া চলবে।
চলতি সপ্তাহের শেষে তালেবান নেতাদের একটি বৈঠকে যোগ দেবেন ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি। সেখানে আফগানিস্তানের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আফগান সরকারকে উৎখাতে লড়াই করা সেনাদের নিয়োগ দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, নতুন একটি জাতীয় বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে তালেবানের। এতে নিজেদের সদস্য ছাড়াও সরকারি বাহিনীর যারা ইচ্ছুক, তারা যুক্ত হতে পারবেন।
সরকারি সেনাদের অধিকাংশই তুরস্ক ও ইংল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তালেবান চাচ্ছে তাদের নিজ নিজ অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে। হাশিমি বলেন, সেনাবাহিনীতে কিছু পরিবর্তন ও সংস্কার করা হবে। কিন্তু সরকারি সেনাদের প্রয়োজন আমাদের। আমরা চাই, তারা সামরিক বাহিনীতে যোগ দেবেন। তালেবানের কোনো পাইলট নেই। বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন আফগান বিমান ঘাঁটি থেকে হেলিকপ্টার ও বিমান জব্দ করেছে তালেবান। এগুলো পরিচালনা করতে তাদের পাইলট দরকার পড়বে।
হাশিমি বলেন, আমরা অনেক পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে বলেছি। তাদের ভাইদের সঙ্গেও সরকারে যোগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছি। এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলো আফগান বিমানগুলো ফেরত দেবে বলেও তালেবান প্রত্যাশা করছে।
সাম্প্রতিক উজবেকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া আফগান সেনারা ২৪টি হেলিকপ্টার ও ২২টি সামরিক বিমান নিয়ে গেছেন। সেগুলো ফেরত পাওয়ার প্রত্যাশা তালেবানের।