তালেবান বিদ্রোহীরা কোনও লড়াই ছাড়াই আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর জালালাবাদ দখল করে নিয়েছে।
রবিবার বিদ্রোহীদের হাতে এই শহরটির পতনের মধ্য দিয়ে একমাত্র রাজধানী কাবুল ছাড়া দেশটির আর সব গুরুত্বপূর্ণ শহরে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হল।
বিদ্রোহীদের এ বিদ্যুৎগতির অগ্রগতিতে তারা শিগগিরই কাবুলের প্রান্তে উপস্থিত হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে; এটি এখন দিন কয়েকের ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ পরিস্থিতিতে নিজেদের নাগরিকদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে আনতে কাবুলে আরও সেনা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা দেশটির রাজধানী এই শহরটিকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখবে বলে জানা গেছে।
মাত্র গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আফগানিস্তানের রাজধানীতে পৌঁছতে তালেবানের অন্তত তিন মাস লাগবে।
জালালাবাদের পতন হওয়ায় পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের দিকে যাওয়া মহাসড়কটি তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এটি স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানের অন্যতম প্রধান একটি মহাসড়ক।
জালালাবাদের দখল নেওয়ার আগে তালেবান শনিবার উত্তরাঞ্চলের প্রধান শহর মাজার-ই-শরিফের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেখানেও সামান্য লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই তারা উজবেক ও তাজিক অধ্যুষিত ঐতিহ্যগতভাবে তালেবানবিরোধী বলে পরিচিত শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
জালালাবাদভিত্তিক এক আফগান কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, জালালাবাদে এখন আর কোনো সংঘর্ষ হচ্ছে না কারণ গভর্নর তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তালেবানকে রাস্তা ছেড়ে দেওয়াই বেসামরিকদের প্রাণ রক্ষার একমাত্র পথ।
শহরটির দ্বিতীয় আরেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলো জালালাবাদ ছাড়ার সময় তালেবান তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে সম্মত হয়।
‘হতাহত ও ধ্বংস’ এড়ানোর জন্যই আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাহিনী আফগানিস্তান থেকে তাদের অবশিষ্ট সৈন্য প্রত্যাহার করার পর সারা দেশজুড়ে ব্যাপক অভিযান শুরু করে তালেবান। তাদের আক্রমণের মুখে আফগানিস্তান সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাদের নাগরিকদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে আনা ও মার্কিন সামরিক সদস্যদের ‘সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ’ প্রত্যাহার নিশ্চিতে সাহায্য করতে কাবুলে পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, বাইডেন যে পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েনের কথা বলেছেন, তার চার হাজার এরইমধ্যে সেখানে রয়েছে। প্রায় ১০০০ নতুন সেনা পাঠানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং ৮২তম এয়ারবর্ন ডিভিশন থেকে তাদের পাঠানো হবে।
শনিবার তেমন কোনো বাধা ছাড়াই তালেবান যোদ্ধারা মাজার-ই-শরিফ শহরে প্রবেশ করে। ওই সময় সেখানে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীগুলো প্রতিবেশী উজবেকিস্তানমুখি মহাসড়ক ধরে পালিয়ে যায় বলে প্রাদেশিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। উজবেকিস্তানের সীমান্ত মাজার-ই-শরিফ থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) উত্তরে।
সত্যাসত্য নির্ধারণ করা যায়নি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা এমন ভিডিওতে আফগান সেনাবাহিনীর যানগুলোকে ও উর্দি পরা লোকজনকে হেয়ারাতন শহরে আফগানিস্তান ও উজবেকিস্তানের মধ্যবর্তী লোহার সেতুর কাছে জড়ো হতে দেখা গেছে।
মাজার-ই-শরিফের দুই প্রভাবশালী সরকার সমর্থক মিলিশিয়া নেতা, আত্তা মোহাম্মদ নুর ও আব্দুল রশিদ দোস্তামও পালিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নুর বলেছেন, মাজার-ই-শরিফ যেখানে সেই বলখ প্রদেশে একটি ‘ষড়যন্ত্রের’ কারণে তালেবানের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে তালেবান বলেছে, তাদের তড়িৎ সাফল্য দেখিয়েছে তারা জনপ্রিয় এবং আফগান জনগণ তাদের গ্রহণ করেছে, তাদের অধীনে আফগান ও বিদেশি নাগরিকরা নিরাপদে থাকবে বলে ফের নিশ্চয়তা দিয়েছে তারা।
বিদেশি কূটনীতিক ও ত্রাণ সংস্থার কর্মীরা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।