করোনা আঘাতে সঙ্গীতাঙ্গণ বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছে। এ অঙ্গনের অনেক কলাকুশলী সঙ্গীত ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। তারপরও অনেকে সংকটের মধ্যেও গান করছেন। শিল্পীরা নতুন নতুন গান প্রকাশ করছেন। তবে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ গান প্রকাশ করা থেকে বিরত রয়েছেন। নতুন গান তৈরি করা হলেও প্রকাশ করছেন না। পরিস্থিতির উন্নতি হলে কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকটি গান প্রকাশ করবেন বলে জানান। সঙ্গীতাঙ্গনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো ঠিক না থাকলে বিনোদনের প্রতি আগ্রহ থাকেনা। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা- এসব কিছু ঠিক থাকলে বিনোদনের প্রতি আগ্রহী হয়। গান শুনে। আমাদের দেশে যারা মিউজিক করে তারা ভালোবেসেই করে। এদেশে এমনিতেও মিউজিকের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা বেশি না। সেটা সবার ক্ষেত্রে না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। সংগীতে ফিডব্যাকটা খুব কম। সব মিলিয়ে গানের অবস্থা এখন সংকটজনক। তিনি বলেন, বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে মিউজিক ভিডিওতে অতিরিক্ত পয়সা খরচ করা হচ্ছে। গানে যারা অর্থলগ্নী করেন তাদের বিনিয়োগ উঠে আসে না। তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়েন। এখন নাটকে গান থাকে। নাটকের কনটেন্ট হিসেবে গান প্রকাশ করা হচ্ছে। গান হয়ে গেছে অপশনাল বিষয়। অথচ আমাদের গানের একটা গর্বের জায়গায় ছিলো। কিন্তু আমরা মিউজিক ভিডিওর ফাঁদে পা দিয়েছি। এটা ভুল সিদ্ধান্ত। আমাদের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যায়বহুল মিউজিক ভিডিও কোনোভাবেই যায় না। মিউজিক ভিডিওতে গানের পরিবর্তে মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ভিডিওর লোকেশন ও পাত্র-পাত্রী। অথচ গান উপলব্ধির বিষয়। গান শোনার চেয়ে দেখার বিষয় হয়ে গেলে উপলব্ধির বিয়ষটা থাকে না।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, তুমি কেমন করো গান করো হে গুণী, আমি অবাক হয়ে শুনি। এ সময়ে হলে হয়তো লিখতেন, তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী, আমি অবাক হয়ে দেখি! পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার পথ হিসেবে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, গানে মনোযোগ দিতে হবে। গানকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা যখন গান শুরু করি তখন দৃশ্যায়নের ব্যাপারটা মুখ্য ছিল না। শ্রোতারা চোখ বন্ধ করে কল্পনায় দৃশ্যায়নে চলে যেতেন। এখন সেটা হতে দেয়া হচ্ছে না। কারণ, মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে শ্রোতাদের ভাবনার জায়গা নির্ধারন করে দেয়া হচ্ছে। এটা করলে তো হবে না। গানকে শ্রোতাদের নিজস্ব ভাবনার জায়গায় রাখতে হবে। তাদের অনুভবের জায়গায় আনতে হবে।