মিয়ানমারে জান্তা সামরিক বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে মরছে সাধারণ মানুষ। বিপরীতে সেনা-প্রণীত সংবিধান পুড়ছে আন্দোলনকারীদের হাতে হাতে। সাধারণ মানুষের ওপর সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের বাস্তবতা যে কোনও সময় ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টেন শানার বার্গেন। নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে জাতিসংঘের এই দূত আরও বলেন, ‘আসন্ন রক্তবন্যার’ মতো পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পরিষদের উচিত ‘সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের’ কথা বিবেচনায় নেওয়া।
সম্প্রতি মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীরা প্রকাশ্যে সামরিক বাহিনী প্রণীত সংবিধানের কপি পুড়িয়েছে। মিয়ানমারে কারাবন্দিদের সহায়তাদানকারী সংস্থা অ্যাসিস্টেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) ও স্থানীয় বিভিন্ন মিডিয়াসূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। বিক্ষোভকারীরাও দেশটির নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে। দেশটির সংখ্যালঘু কাচিন জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মির (কেআইএ) হামলায় সম্প্রতি প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন সেনা সদস্য।
বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে এক বৈঠক করেন ক্রিস্টেন শানার বার্গেন। সে সময় তিনি বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশ চালাতে সক্ষম নয়; যে কারণে দেশটির পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। ক্রিস্টেন বলেন, ‘সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সবকিছুকে বিবেচনায় নিন। এশিয়ার কেন্দ্রে বহুমাত্রিক বিপর্যয় রোধ করতে, মিয়ানমারের জনগণের জন্য যা উপযুক্ত ও সঠিক সেটাই করুন।’
জাতিসংঘের দূতের সঙ্গে বৈঠকের পর মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য চীন-রাশিয়া এবং অস্থায়ী সদস্য ভারত ও ভিয়েতনাম।
সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি উন্নয়নে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ানের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি উন্নয়নে আসিয়ানের উদ্যোগী হয়ে ওঠাকে চীন স্বাগত জানাচ্ছে। বেইজিং আশা করছে, দেশটিতে যাবতীয় অস্থিরতা দূর করে স্থিতিশীলতা আনতে আসিয়ান কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ানের সদস্য মিয়ানমারও। ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ১০ টি দেশের আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ান যদিও তার জন্মলগ্ন থেকে সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো থেকে বিরত থেকে এসেছে, কিন্তু মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দৃশ্যত সেই নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসছে সংস্থাটি। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড—এই তিনটি সদস্য রাষ্ট্র মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা আনয়নে আসিয়ানকে সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা করছে।সূত্র: বিবিসি।